রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে এক সংগীত উৎসব চলার সময় পাশের হোটেল থেকে এক বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালায়৷ এতে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন৷ আহতের সংখ্যা ৫২৭৷
বিজ্ঞাপন
স্টেফেন প্যাডোক নামের ৬৪ বছর বয়সি এক ব্যক্তি এই হামলা চালায়৷ উৎসবস্থলের পাশে অবস্থিত ‘ম্যান্ডালে বে' হোটেলের ৩২ তলার একটি রুম থেকে এ গুলি চালানো হয়৷ পুলিশের একটি বিশেষ দল ঐ হোটেলরুমে দিয়ে হামলাকারীকে মৃত অবস্থায় পায়৷ হোটেলরুমে কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় সহ মোট ২৩টি অস্ত্র পেয়েছে পুলিশ৷ এছাড়া প্যাডোকের বাড়ি থেকে আরও ১৯টি অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে৷ লাস ভেগাস থেকে ৮০ মাইল দূরে মেসকোয়াইট নামে একটি অঞ্চলে বাস করতেন প্যাডোক৷ ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্যাডোক ঐ হোটেলে ছিলেন৷
কে এই প্যাডোক?
সাবেক এই অ্যাকাউন্টেন্টের ভাই এরিক প্যাডোক জানিয়েছেন, তিনি জুয়াড়ি ছিলেন৷ তাদের ব্যাংক ডাকাত বাবার নাম একসময় এফবিআই-এর শীর্ষ দশ ‘ওয়ান্টেড লিস্ট' এ ছিল৷ তবে ভাই প্যাডোক স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন বলে জানিয়েছেন এরিক৷ ‘‘সে ভিডিও পোকার খেলতে ও ক্রুজে যেতে ভালবাসতো৷ সে মা'কে বিস্কুট পাঠাতো,'' বলেন তিনি৷ এরিক জানান, প্যাডোক কোনো ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না৷ বন্দুকের প্রতিও তাঁর তেমন আকর্ষণ ছিল না বলে জানান এরিক৷
হামলার কারণ জানার চেষ্টা চলছে
কী কারণে স্টেফেন প্যাডোক ভয়াবহ এই হামলা চালান তার কারণ জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা৷ লাস ভেগাস মেট্রো পুলিশের শেরিফ জোসেফ লোম্বার্ডা জানান, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ ‘‘আমরা তার (হামলাকারীর) অতীত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি,'' বলেন তিনি৷ প্যাডোকের এই বর্বর কাজ ব্যাখ্যা করার মতো কোনো মেনিফেস্টো বা অন্য কিছু পাওয়া যায়নি৷ ‘‘তিনি (প্যাডোক) একাই এই হামলা চালিয়েছেন৷ আমি জানি না, কীভাবে এটা প্রতিহত করা যেতো৷ এই মুহূর্তে আমি এই সাইকোপ্যাথের (আবেগের গুরুতর বৈকল্যঘটিত মানসিক রোগী) বিষয়টি বুঝতে পারছি না৷''
আইএস-এর সঙ্গে সংযোগ?
হামলার পর তথাকথিতু জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস জানায়, স্টেফেন প্যাডোক তাদের সঙ্গী ছিলেন৷ কয়েক মাস আগে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন বলেও জানায় আইএস৷ তবে তাদের এই দাবির পক্ষে তারা এখনও কোনো প্রমাণ দেয়নি৷
এদিকে, এফবিআই বলছে, এখন পর্যন্ত এই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন?
লাস ভেগাসের এই হামলায় ৫৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ফলে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারার ঘটনা৷ প্রতিটি হামলার পরবন্দুক বেচাকেনা আরও কঠোর করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ এবারও তা হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স এখনই এমন আলোচনা শুরুর পক্ষে নন৷ ‘‘উদ্দেশ্য (হামলার) এখনও অজানা৷ তাই এখনই নীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করা তাড়াতাড়ি হবে,'' বলেন তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
যুক্তরাষ্ট্রে ‘গণহারে গুলি চালিয়ে’ মানুষ হত্যার ভয়াবহ ১১টি ঘটনা
লাস ভেগাসে কনসার্টে গুলি করে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে রবিবার রাতে৷ ছবিঘরে থাকছে যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৫ বছরে ঘটে যাওয়া ‘গুলি করে হত্যার’ ভয়াবহ ১১টি ঘটনা৷
ছবি: Reuters
১৯৯১: কিলিন
সে বছরের অক্টোবরে কিলিনে একটি রেস্তোরাঁয় এক ব্যক্তি গুলি চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করার পর নিজেও আত্মহত্যা করে৷
ছবি: Reuters
১৯৯৯: কলোরাডো
ঐ বছর এপ্রিলে কলোরাডোর লিটলটন শহরের কলোম্বাইন হাই স্কুলে দুই কিশোর শিক্ষার্থী ১২ সহপাঠী এবং এক শিক্ষককে গুলি করে হত্যা করে৷ পরে নিজেরাও আত্মহত্যা করে৷
ছবি: AP
২০০৭: ভার্জিনিয়া
ঐ বছরের এপ্রিলে ব্ল্যাকসবার্গে ভার্জিনিয়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরীয় বংশোদ্ভূত ২৩ বছর বয়সি এক ছাত্র গুলি করে ২৭ শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষককে হত্যা করে৷ পরে সে-ও আত্মহত্যা করে৷
ছবি: AP
২০০৯: বিংহ্যামটন
নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটনে ২০০৯ সালের এপ্রিলে একটি সিভিক সেন্টারে ঢুকে গুলি চালায় ভিয়েতনামের এক অভিবাসী৷ পরে আত্মহত্যা করা ওই ব্যক্তির গুলিতে নিহত হয় ১৩ জন৷
ছবি: AP
২০০৯: কিলিন সেনাঘাঁটি
সে বছরের নভেম্বরে কিলিনে নিজের সামরিক ঘাঁটিতে এক মার্কিন সেনা মনস্তত্ত্ববিদ গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করে৷ গুলিবিদ্ধ হয় আরও ৪২ জন৷ পরে পুলিশ তাকে আটক করে৷
ছবি: AP
২০১২: অরোরা
সে বছরের জুলাইতে গভীর রাতে অরোরার এক সিনেমা হলে ‘ব্যাটম্যান’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হচ্ছিল৷ সেই সময় এক তরুণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলোপাথারি গুলি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে৷ ঘটনাস্থলে মারা যায় ১২ জন৷ আহত হয় ৭০ জন৷ হামলাকারী এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷
ছবি: D. Bradford/Getty Images
২০১২: কানেকটিকাট
ডিসেম্বরে কানেকটিকাটের নিউটাউনে ২০ বছর বয়সি এক তরুণ নিজের মা-কে গুলি করে হত্যা করে৷ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন তরুণটি তার মাকে হত্যা করার আগে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে গুলি চালিয়ে ছয়-সাত বছরের ২০ জন শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষককে হত্যা করে৷ পরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে৷
ছবি: dapd
২০১৩: ওয়াশিংটন
সে বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন নৌবাহিনীর সদরদপ্তরে ঢুকে সাবেক এক কর্মী এলোপাথারি গুলি চালায়৷ এতে নিহত হয় ১২ জন৷ পরে সেখানকার অফিসারদের গুলিতে নিহত হন তিনি৷
ছবি: Reuters
২০১৫: স্যান বার্নাডিনো
ঐ বছরের ডিসেম্বরে নববিবাহিত এক মুসলিম দম্পতি স্যান বার্নাডিনোর একটি অফিসের ক্রিসমাস পার্টিতে গিয়ে গুলি করে ১৪ জনকে হত্যা করে৷ গুলিবিদ্ধ হয় আরও ২২ জন৷ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ওই দম্পতি৷
ছবি: Reuters/NBCLA.com/Handout
২০১৬: অরলান্ডো
ফ্লোরিডা রাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে ঐ বছরের ১২ই জুন সমকামীদের নৈশক্লাবে ঢুকে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যার ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বিশ্ব৷ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক বন্দুকধারী সেখানে গুলি চালায়৷ পুলিশের গুলিতে পরে নিহত হয় সে৷ তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এই হত্যায় দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
২০১৭: লাস ভেগাসে সংগীত উৎসবে গুলি
স্থানীয় সময় ১লা অক্টোবর মাঝ রাতে লাস ভেগাসে কান্ট্রি মিউজিক উৎসব চলার সময় বন্দুকধারীর গুলিতে ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে৷ আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি মানুষ৷