শহরের ইকবাল টাউন এলাকার একটি পার্কে শিশুদের খেলার জায়গার কাছে বোমাটি ফাটায় এক আত্মঘাতী বোমারু৷ তেহরিক-ই-তালেবানের একটি দলছুট গোষ্ঠী এই আক্রমণের জন্য নিজেদের দায়ী বলে ঘোষণা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২-এ; আহতের সংখ্যা ৩০০ কিংবা তার বেশি৷ নিহতদের মধ্যে ২৯ জন শিশু, এছাড়া অনেক মহিলা, বলে জানিয়েছেন ত্রাণকর্মীরা৷ হাসপাতালে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের অনেকের অবস্থা উদ্বেগজনক৷
গুলশান-ই-ইকবাল পার্কটি লাহোরের একটি সমৃদ্ধ এলাকায়৷ এই শহর শুধু পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানীই নয়, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নিজের শহর৷ পার্কটিও শহরের একটি সম্ভ্রান্ত এলাকায়৷ ইস্টার রবিবার উপলক্ষ্যে এখানে বহু মানুষের ভিড় হয়েছিল, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের৷ জামাত-উল-অহরার হার্ডলাইন গোষ্ঠীর মুখপাত্র এহানসুল্লাহ এহসান পরে এএফপি সংসাদ সংস্থাকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, খ্রিষ্টানরাই এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল এবং আগামীতে এ-ধরনের আরো আক্রমণ ঘটবে৷ এহসান বলেন, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে এই বার্তা পাঠাতে চাই যে, আমরা লাহোরে প্রবেশ করেছি৷''
লাহোরের ঘটনায় সারা বিশ্ব সচকিত, সন্ত্রস্ত, বিমূঢ়৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি-মুন এই আক্রণের নিন্দা করেছেন৷ ভ্যাটিকানের তরফ থেকে ‘‘সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থি সহিংসতার'' নিন্দা করা হয়েছে৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ‘‘সন্ত্রাস ও অমানবিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রাম'' চালিয়ে যাবার অভিপ্রায় ঘোষণা করা হয়েছে৷
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা
এক বছর আগে শিশুদের রক্তে ভেসেছিল পেশাওয়ারের একটি স্কুল৷ স্কুলের শিক্ষার্থীসহ দেড়শ’রও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তালেবান৷ এবার পেশাওয়ারের কাছেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তালেবান৷ পাকিস্তানে রক্তবন্যা চলছেই৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
ভয়াবহ সেই দিন
গত ডিসেম্বরেই পেশাওয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তি হলো৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শোকাবহ সেই দিনকে স্মরণ করতে গিয়ে শুধু নিহত ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাই জানাননি, পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছিলেন৷ওপরের ছবিতে ২০১৪ সালে পেশাওয়ারের স্কুলে তালেবান হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী৷
ছবি: Reuters
আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
২০১৪ সালে স্কুলের শিশুদের ওপর চালানো সেই হামলার বর্ষপূর্তির এক মাস পেরোতেই পেশাওয়ারের কাছের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিল জঙ্গিরা৷ পেশোয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের চারসাড্ডা এলাকার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার সময় হাজার খানেক শিক্ষার্থী ছিল৷ হামলার পর দ্রুতই সেখানে সেনাসদস্যরা চলে আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
‘হামলাকারীদের কোনো ধর্ম নেই, ধর্ম বিশ্বাস নেই’
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলার খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হামলাকারীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ একজন ধর্মবিশ্বাসী কখনো অকারণে হত্যা বা নিরীহ মানুষ হত্যা করতে পারে না – এমন যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘‘এই হামলাকারীদের কোনো ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস নেই৷’’ শরিফ জানান, তাঁর সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত করার সংগ্রাম আরো দৃঢ়ভাবে চালাবে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আরো ব্যাপক হতে পারত ক্ষয়ক্ষতি
হামলায় এ পর্যন্ত ২১ জন নিহত এবং ৭০ জানের মতো আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান শুরু না করলে রক্তক্ষয় ও প্রাণহানি আরো ব্যাপক হতে পারতো৷ ওপরের ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
কেন এই হামলা?
ইতিমধ্যে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তালেবান৷ জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে তাদের সঙ্গীদের হত্যা করেছে তার প্রতিশোধ হিসেবেই চালানো হয়েছে এই হামলা৷ওপরের ছবিতে দুই তালেবান জঙ্গি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
5 ছবি1 | 5
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই তাঁর টুইট করা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান আর বিশ্বকে একত্রিত হতে হবে৷ প্রত্যেকটি জীবনই মূল্যবান, তাকে সম্মান ও সুরক্ষা দিতে হবে৷''
ভারতে বিশেষ করে বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরা টুইটারে তাদের ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷ শেখর কাপুর লিখেছেন, ‘‘না, জন্নত তোমার জন্য নয়, কেননা তুমি যে সব শিশুদের হত্যা করেছো, তোমার আত্মা চিরকাল তাদের মৃত্যুকালীন চিৎকার আর ক্রন্দনে আবদ্ধ থাকবে৷''
এই শোকের সান্ত্বনা নেই
পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহত হয়েছে ১৩২ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৪১ জন৷ পাকিস্তানে শুরু হয়েছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক৷
ছবি: Reuters
শোকস্তব্ধ পাকিস্তান
শোকে পাথর পাকিস্তান৷ নিহত কোমলমতি শিশুদের বাবা-মা, স্বজনেরা স্তব্ধ৷ তাঁদের সঙ্গে শোক ভাগাভাগি করে নিচ্ছে পাকিস্তানসহ সারা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
রাষ্ট্রীয় শোক
পাকিস্তানে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক৷ এ ঘটনাকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ আখ্যায়িত করে দেশব্যাপী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
হামলার দায় স্বীকার
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
নিহত ও আহত
নিহত শিক্ষার্থীদের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাদের অনেকেই সেনা কর্মকর্তার সন্তান৷ জঙ্গি হামলায় একই বয়সি আরও অন্তত ১২১ স্কুলশিশু আহত হয়৷ জঙ্গি হামলার সময় স্কুলটিতে ১১শ’র মতো শিক্ষার্থী ছিল জানিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, সাড়ে ৯শ’র মতো শিক্ষার্থীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: Reuters/K. Parvez
বর্বর হত্যাযজ্ঞ
মঙ্গলবার পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় তালেবান জঙ্গিরা৷ এ ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৩২ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৪১ জন৷
ছবি: Reuters/K. Parvez
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশোধের অঙ্গীকার
ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ জঙ্গি দমনে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আজ আমাদের যত শিশুর রক্ত ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোঁটার প্রতিশোধ আমরা নেব৷’’
ছবি: Reuters
হামলাকারী
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল ছ’জন৷ বন্দুকধারীরা এসেই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গুলি চালানো শুরু করে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরে অতর্কিতে স্কুলে হামলা চালায় তারা৷ নিহত ১৪১ জনের অধিকাংশই মারা যায় আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে৷ পরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় ছয় হামলাকারীর সবাই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Sajjad
আহতদের বক্তব্য
হামলায় বেঁচে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর কথা, ‘‘আমরা যখন ক্লাসরুম থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিলাম, তখন দেখি আমাদের অনেক বন্ধুই করিডরে মরে পড়ে আছে৷’’ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, হামলাকারীদের গুলি করতে দেখে তারা ক্লাসরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়৷ কিন্তু হামলাকারীরা দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
স্কুলের নিয়ন্ত্রণ
কর্মকর্তারা দাবি করেন, গতকাল সন্ধ্যার কিছু পর নিরাপত্তা বাহিনী স্কুলটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে৷ স্কুলভবনের ভেতর বোমা পেতে রাখায় সেখানে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের৷ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উদ্ধার অভিযান তদারক করেন৷
ছবি: Reuters/K. Parvez
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শোক
পাকিস্তানের পেশোয়ারে স্কুলে তালেবান হামলায় শতাধিক ছাত্রসহ বেসামরিক মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রী শোক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এই বর্বর ও ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড সারা বিশ্বের মানুষকে শোকাহত ও স্তম্ভিত করেছে৷’’