জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে নতুন ধরনের শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার৷ ভবিষ্যতে সিলেবাসে লিঙ্গ বৈচিত্রকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ৷
বিজ্ঞাপন
গত বছর বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের স্কুলগুলোতে সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়৷ যাদের কাজ ২০১৫ সালের জন্য নতুন সিলেবাস করা৷ এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি৷ তবে প্রাথমিক কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে, অর্থাৎ সিলেবাসে যে লিঙ্গ বৈচিত্রের বিষয়টি স্থান পেতে যাচ্ছে তা অনেকটা নিশ্চিত৷
তবে জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলের একজন স্কুল শিক্ষক এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছেন৷ এটি অনুমোদন না করার জন্য অনলাইনে আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷ যেখানে স্বাক্ষর করেছেন ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ৷ শিক্ষকের মতে, লিঙ্গ বৈচিত্র সম্পর্কে শিক্ষা দিতে গেলে শিক্ষাগত, আদর্শগত এবং নীতিগত শিক্ষার আরো প্রসার প্রয়োজন৷
তার আবেদনটি এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে৷ অর্থাৎ আবেদনে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষা পরিকল্পনায় এলজিবিটি লাইফ স্টাইলের নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরার কোনো পরিকল্পনা নেই৷ কেননা নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের মধ্যে যে আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, এইচআইভি এবং মানসিক অসুস্থতা রয়েছে সেটির কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে৷
জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা
কিশোর-কিশোরীরা ভোগেন নানা মানসিক সমস্যায়৷বড়রা ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো বেচে যেতে পারে ফুলের মতো সুন্দর অনেক জীবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমন আছে নিজের সন্তান ?
অনেক মা-বাবা প্রায়ই জানেন না যে তাদের আদরের সন্তান কেমন আছে৷ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে আত্মহত্যা৷ জার্মানিতে প্রায় প্রতিদিনই দু’একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: fotolia/Mikael Damkier
শেষ চিঠি
লেনার মা সুজানে বলেন, তাঁর মেয়ে ১৬ বছর বয়সে ব্লেড এবং ছুরি দিয়ে কয়েকবারই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো৷ প্রথমদিকে বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক কেউ সেটা খেয়ালই করেনি৷ চিঠির বাক্সে লেনার লেখা বিদায়ী চিঠি পেয়ে বুঝেছেন, যে তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, জরুরি সাহায্য বা চিকিৎসার প্রয়োজন৷
ছবি: DW/Janine Albrecht
অনুভূতির প্রকাশ
হাইডেলব্যার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসার ড. রমুয়াল্ড ব্রুনার বলেন, যদি কেউ নিজের হাত বা পায়ের রগ কেটে ফেলে বা এ ধরনের কিছু একটা করে বসে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ওদের রাগ, দুঃখ বা হতাশার প্রকাশ মাত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে কষ্ট দেওয়া
১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়৷ সমীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের মধ্যে ৮ জন এবং মেয়েদের মধ্যে ১৮ জন স্বীকার করেছে, তাদের এই ছোট্ট জীবনে অন্তত তিনবার হাত পা কেটেছে, নিজেদের কষ্ট দিয়েছে, তাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট বা হতাশা ভুলে যাবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল
আজকের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই যোগাযোগের জন্য বেছে নেয় কৃত্রিম মাধ্যম ইন্টারনেট, ফেসবুক৷ তাদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট নেশাগ্রস্ত৷ এদের অনেকের মতে, মোবাইল ছাড়া জীবন চলাই সম্ভব নয়৷
ছবি: Fotolia/Konstantin Yuganov
আসল বন্ধু পাওয়া যায়না
একথা ঠিক, যে আজকের দিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে এবং ব্যবহারও হচ্ছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব যোগাযোগ আসল বন্ধু পেতে কোনো কাজে আসেনা৷ বরং এসব বিষণ্ণতার দিকেই ঠেলে নিয়ে যায় এবং ভয় ও আত্মহত্যার চিন্তা করতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বসঃসন্ধিকাল
ছেলে মেয়েদের বসঃসন্ধির সময় ওদের আত্মসম্মানবোধ, অকারণেই মন খারাপ হওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে৷ তবে এ সব সমস্যা যদি ঘনঘন দেখা দেয় বা বাড়াবাড়ি হয়, তাহলে সেটা মানসিক অসুস্থতা বলেই ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, বলেন ড.ব্রুনার৷
ছবি: Fotolia/Alliance
শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে
কিশোর-কিশোরীদের এই ধরনের সমস্যায় স্কুলের শিক্ষকদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচনা করতে হবে
মানসিক সমস্যায় শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক, ছোট-বড় অনেকেই ভোগে এবং আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়৷ এ ধরনের সমস্যাগুলোর শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Fotolia/JenKedCo
শরীর চর্চা
রাগ, দুঃখ বা হতাশা থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় শারীরিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে ব্যস্ত থাকা৷ কোনো কাজে যুক্ত হওয়া৷ হতে পারে খেলাধুলা বা যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা৷ হতে পারে বাগানের কাজে কাউকে সাহায্য করা, যে কাজ সত্যিকার অর্থেই মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
শিক্ষানীতির গবেষক এবং জার্মানির ফ্লেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লা এসেনব্যার্গ বলছেন, বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গের শিক্ষানীতি নতুন কিছু না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, গত কয়েক বছরে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে যেখানে কয়েকটি দল মানুষকে এলজিবিটি সম্প্রদায় সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছে৷ এসেনব্যার্গ জানান, লিঙ্গ বৈচিত্রতা বিষয়টি সামাজিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেখানে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার অধ্যায় রয়েছে৷ বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের স্কুলগুলোতে ঠিক এই শিক্ষা পরিকল্পনাই নেয়া হয়েছে৷
তবে ঐ রাজ্যের শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ইউনিয়নের প্রধান ডোরো মরিৎস বলেন, ঐ রাজ্যের শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন৷ বিশেষ করে যাঁরা এখন শিক্ষকতা করছেন এবং যাঁরা করবেন সবাইকেই এই প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷
এরই মধ্যে জার্মান শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন এই শিক্ষা নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, নতুন এই শিক্ষানীতি শিশু-কিশোরদের আত্মসম্মান বাড়াতে সাহায্য তো করবেই, সেইসাথে অন্যদের সম্পর্কে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এবং নিজেদের ব্যক্তিত্ব উন্নয়নেও সহায়ক হবে৷ এই পরিকল্পনার পক্ষে আবেদনে ইতিমধ্যেই ৪৬ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন বলে প্রকাশ৷