বাংলাদেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো অনেক পিছিয়ে৷ মালদ্বীপ (১০৬) , ভারত (১০৮), শ্রীলংকা (১০৯), নেপাল (১১১), ভুটান (১২৪) এবং পাকিস্তান (১৪৩) – কোনো দেশই এখনো একশ'র আগে আসতে পারেনি৷
যদিও এশিয়া মহাদেশে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বাড়াবাড়িভাবেই সক্রিয় বলে অনেক মনে করেন, তবে কিছুক্ষেত্রে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধার উদাহরণও রয়েছে৷ কয়েকটি সম্প্রদায়ে নারীরাই পরিবার প্রধানের ভূমিকায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/L. Xianbiaoমাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলতে বোঝায় যেখানে পরিবারের দায়িত্ব থাকে একজন নারীর উপর এবং বংশের ধারাও নির্ধারিত হয় নারীর দিক থেকে৷ মোটের উপর সম্পদের দায়িত্বও মা থেকে মেয়ের উপর বর্তায় এবং বিয়ের পর পুরুষ নারীর ঘরে চলে যান৷ তবে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থাকে পুরুষের কাঁধে৷ আর তারা এটাকে বিবেচনা করে ক্ষমতার সুষম বণ্টন হিসেবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/L. Xianbiaoচার মিলিয়ন মানুষের সম্প্রদায় মিনানকাবাও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ৷ প্রথাগতভাবে এনিমিস্ট হলেও একসময় হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এই সম্প্রদায়৷ বর্তমানে তাদের অনেকে আবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ এই সম্প্রদায় মনে করে, কোরআন মেনেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ চালু রেখেছেন তারা, কেননা কোরআনে নারীর সম্পদের মালিক হতে বা কমিউনিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই৷
ছবি: Getty Images/R.Pudyantoমায়ের নেতৃত্বে বড় পরিবারে থাকতে অভ্যস্ত ম্যোসু সম্প্রদায়ের মানুষেরা৷ তাদের মধ্যে ‘স্বামী’ বা ‘পিতা’ বলে কিছু আসলে নেই৷ এই সম্প্রদায় ‘ওয়াকিং ম্যারেজে’ বিশ্বাসী, অর্থাৎ একজন পুরুষ চাইলে একজন নারীর বাড়িতে যেতে পারেন এবং রাতটি তার সঙ্গে কাটাতে পারেন৷ তবে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাসের বিধান নেই এই সম্প্রদায়ে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M.Hongminখাসি সম্প্রদায়ের কাছে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া মানেই উৎসবের উপলক্ষ্য৷ আর ছেলে সন্তান এক সাধারণ ব্যাপার৷ সাধারণত পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে সব সম্পদের উত্তরাধিকারী হন৷ কোনো দম্পতির যদি মেয়ে না থাকে, তাহলে তারা একটি কন্যা দত্তক নেয় এবং সব সম্পদ তাকে দিয়ে দেয়৷ মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে অনেক খাসি পুরুষ নিজেদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনেও নামেন৷
ছবি: DW/Bijoyeta Dasগারো সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মায়ের পদবী গ্রহণ করে আর পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে মায়ের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়৷ অতীতে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হলে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে গ্রামের ব্যাচেলর ডর্মেটরিতে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো৷ কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবের কারণে পরবর্তীতে এই চর্চা বাতিল হয়ে গেছে৷ বর্তমানে গারো বাবা-মায়েরা সব সন্তানকে সমানভাবে দেখার চেষ্টা করেন৷
ছবি: STR/AFP/Getty Imagesকম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বিস্তৃত চাম সম্প্রদায়ের মানুষরাও মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করেন৷ তারা মায়ের পদবি নেন এবং সম্পদের উত্তরাধিকারী হন মা থেকে মেয়ে সবাই৷ আর স্বামী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেই সম্প্রদায়ের মেয়েদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/T.Chhin Sothyতবে সময়ের সাথে সাথে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসছে৷ জীবনধারণের অন্যান্য সুযোগের চাপ ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পুরুষদের বাঁধার মুখে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: FINDLAY KEMBER/AFP/Getty Images ২০০৬ সাল থেকে বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতা সূচক প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ এই সূচকে নারী-পুরুষের বৈষম্য ও বিভিন্ন সময়ে এ বৈষম্য দূরীকরণে দেশগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়৷ স্বাস্থ্য ও গড় আয়ু, শিক্ষার সুযোগ, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন—মূলত এ চারটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়৷ এবার ১৪৪টি দেশের এ তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়৷ এ রিপোর্টে বাংলাদেশের দুই ধাপ নীচে অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের৷
এবারও তালিকার শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড৷ নবম বারের মতো দেশটি এ তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে৷ বৈশ্বিক লিঙ্গসমতা সূচকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড৷ এ তালিকায় জার্মানির অবস্থান ১২তম৷ আর সবচেয়ে নিচের অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন৷
রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর যে ১৪২টি দেশ এ তালিকায় ছিল, তাদের মধ্যে ৮২টি দেশ সার্বিক বিচারে লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে এগিয়েছে৷ এছাড়াও, গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি দেশ লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য অবস্থানে এসেছে৷
আরএন/ এসিবি (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম)