লিটন আর মুশফিকের সেঞ্চুরিতে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ
২৩ মে ২০২২
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪২ মিনিটে মাত্র ২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ৷ সেই অবস্থায় নান্দনিক ব্যাটিংয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরান লিটন দাস৷ মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিমও খেলেছেন মাস্টারক্লাস ইনিংস৷
বিজ্ঞাপন
দুজনের সেঞ্চুরিতে প্রথম প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ৷
২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে পথে ফেরাতে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক শুরু থেকেই খেলেছেন আস্থার সঙ্গে৷ অন্যদিকে লিটনকে শুরুতে একটু নড়বড়ে মনে হচ্ছিল৷ তবে একবার থিতু হয়ে যাওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি লিটনকে৷ ৪৭ রানে একবার ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর তিনিই আগে পৌঁছান পঞ্চাশে৷ একটু পর ফিফটি পেয়ে যান মুশফিকও৷
পরে লঙ্কান বোলিং একদমই ভাবাতে পারেনি লিটনকে৷ স্পিনারদের খেলেছেন অনায়াসে৷ পেসারদের শর্ট বলে চেপে ধরার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছেন অনায়াসে৷
এক সময়ে দুই জনের রান কাছাকাছিই ছিল৷ লিটন ব্যাট করছিলেন ৭৮ রানে, মুশফিক ছিলেন ৭৬ রান৷ প্রাভিন জয়াবিক্রমার ওভারে তিন চার মেরে এগিয়ে যান লিটন৷ পরে ওভার থ্রোয়ের সুবাদে পাওয়া বাউন্ডারিতে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে৷
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগেও দুইবার সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি৷ ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে আউট হন ৯৪ রানে, এবার প্রথম টেস্টে একই মাঠে বাজে এক শটে বিদায় নেন ৮৮ রানে৷ মিরপুরে আর কোনো ভুল করলেন না৷ দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ১৪৯ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কে৷ সবশেষ আট টেস্টে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি৷ অথচ প্রথম ২৫ ম্যাচে একটাও সেঞ্চুরি ছিল না তার!
লিটন যখন ছুটছিলেন দারুণ গতিতে তখনও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক৷ নিজের জোনে কিংবা বাজে বল পেলেই কেবল বাউন্ডারি মারছিলেন৷ খেলছিলেন মূলত এক-দুই নিয়ে৷
এভাবে খেলেই ক্যারিয়ারে প্রথমবার টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিক৷ টেস্ট ক্রিকেটে নবমবারের মতো ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক, এর তিনবারই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে৷
আগের ম্যাচে নিজের মন্থরতম সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক, এবার তিন অঙ্ক স্পর্শ করলেন ২১৭ বলে৷
সেঞ্চুরি করার পথে মুশফিক আর লিটন উপহার দিয়েছেন ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি৷ ২৫ বা এর কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ইতিহাসের সেরা জুটির কীর্তিও গড়েছেন তারা৷ এই দুজনের অবিচ্ছিন্ন ২৫৩ রানের জুটির সুবাদে প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ২৭৭৷
বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে ট্রলের শিকার হয়েছেন৷ ক্রিকেট খেলা অনেক জনপ্রিয় হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পছন্দ করেন সমর্থকরা৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
চিকিৎসকদের ট্রলের শিকার মাশরাফি
২০১৯ সালে নড়াইলের আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে মাশরাফি চার চিকিৎসককে অনুপস্থিত পান৷ এরপর রোগী সেজে তিনি এক চিকিৎসককে ফোন করলে ঐ চিকিৎসক পরে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন৷ এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে ওই চিকিৎসককে মাশরাফি বলেন, ‘‘এখন যদি হাসপাতালে সার্জারির প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রোগী কী করবে?’’ এই ঘটনায় চিকিৎসকদের একটি অংশের ট্রলের শিকার হয়েছিলেন মাশরাফি৷ পারলে তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে দেখাতেও বলেন কেউ কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
সাকিবের অরেঞ্জ জুস মন্তব্য
২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি৷ প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব পরে বলেছিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টির জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা পায় কারা? গেইল, ডি ভিলিয়ার্স—কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে৷ জন্মের পর থেকে আমরা খাই সবজি খিচুড়ি...নরম করে রান্না করা৷ আর ওরা ছোটবেলা থেকে অরেঞ্জ জুস খায়৷’’ এই মন্তব্য নিয়ে পরে অনেক ট্রল হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
ট্রলের শিকারও তামিম
২০১৫ বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি তামিমের৷ তাই সেই সময় অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়েছে তাকে৷ একটা ট্রল ছিল এরকম, ‘ম্যাগী নুডুলস সিদ্ধ হওয়ার আগেই তামিম আউট’৷ এসব ঘটনায় ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তামিম৷ এক পর্যায়ে বিশ্বকাপ চলার সময় অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখতেও বাধ্য হয়েছিলেন৷ তামিমের স্ত্রীকেও গভীর রাতে ফোন করে গালিগালাজ করা হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Kington
মুশফিকের আয়না
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারার পর মুশফিক বলেন, ক্রিকেটারদের সমালোচনা যারা করেন, তাদের উচিত আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেওয়া৷ এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে কেউ তাকে ‘আয়নাবাজ’ আবার কেউ ‘আয়নাপুরুষ’ নামে ডাকা শুরু করে৷ এর আগেও বিভিন্ন সময় মুশফিককে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
ক্যাচ মিস করায় তোপের মুখে লিটন
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচ দুটো ক্যাচ ধরতে পারেননি লিটন দাস৷ দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা ও ট্রলের শিকার হয়েছেন তিনি৷ এটা করতে গিয়ে অনেকে ধর্মের বিষয়টিও টেনে এনেছেন৷ এছাড়া একদিনের ম্যাচে লিটনের করা চার শতকের তিনটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হওয়ায়ও অতীতে তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
‘ইমরুল ব্রো’
২০১৯ সালে ভারত সফরে দুই টেস্টে ইমরুল কায়েসের স্কোর ছিল ৬, ৬, ৪ ও ৫৷ সেই সময় ফেসবুকে তাকে নিয়ে অনেকে ট্রল করেছিলেন৷ অবশ্য ঐ সফরের আগে থেকেই তাকে ফেসবুকে ‘ইমরুল ব্রো’ নামে ডাকা হচ্ছিল৷ এ প্রসঙ্গে পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেক ক্রিকেটার আছে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে৷ চাপ নিতে পারেনি৷ আমি বলব, যদি আপনারা দেশের ভালো চান, দয়া করে এসব বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Getty Images/M. Lewis
গতিদানব
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন মিডিয়াম পেসার ছিলেন৷ কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তাকে ‘গতিদানব’ বলে ট্রল করা হয়৷ এ প্রসঙ্গে গত আগস্ট মাসে কালের কণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, যারা এগুলো বলে তারা ক্রিকেটটাই কম বোঝে বেসিক্যালি৷’’
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
‘মি. ইন্টারফেয়ারার’
দলে কাকে রাখা হবে, টসে জিতলে কী নিতে হবে ইত্যাদিসহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেন নাজমুল হাসান পাপন৷ সেজন্য সমালোচনার পাশাপাশি তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷ তাকে ডাকা হয় মি. ইন্টারফেয়ারার নামে৷ এক পর্যায়ে সেসব কাজ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি৷ পরে গত ফেব্রুয়ারিতে আবারও আগের রূপে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন তিনি৷ তা না হলে নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হচ্ছিল!
ছবি: bdnews24
বিসিবি সভাপতির ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
এ বছরের শুরুতে বিসিবি সভাপতির নামে ফেসবুকে কয়েকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেসব থেকে ট্রলের ঝড় বয়ে গিয়েছিল৷ আইপিএল খেলতে সাকিবের ছুটি নেওয়া, নাসির হোসেনের বিয়েসহ কিছু ঘটনায় ঐসব আইডি থেকে নানা রকম স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছিল৷ পরে বিষয়টি বিসিবির চোখে পড়লে সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়৷