২০০৬ সালে লন্ডনে খুন হন সাবেক রুশ গুপ্তচর আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো, সম্ভবত পোলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায়৷ তদন্তের রিপোর্টে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ‘‘সম্ভাব্য অনুমোদনের'' কথা বলা হয়েছে৷ ইঙ্গো মানটয়ফেলের সংবাদভাষ্য৷
বিজ্ঞাপন
লিটভিনেঙ্কো হত্যার তদন্ত রিপোর্ট বিপুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে বটে, কিন্তু আইনগতভাবে এই রিপোর্টের কোনো ফলশ্রুতি নেই এবং তার রাজনৈতিক প্রভাবও অকিঞ্চিৎকর হবে, বলে ধরে নেওয়া যায়৷
লিটভিনেঙ্কোর চায়ে তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম মিশিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এ খবর প্রকাশিত হবার সাথে সাথে সন্দেহ গিয়ে পড়ে রুশ কর্তৃপক্ষের উপর: তাদের কি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল?
সন্দেহের একটা কারণ ছিল এই যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে পোলোনিয়াম সংগ্রহ করা খুব সোজা কাজ নয়৷ অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে মৃত্যুর আগে আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কোর সাক্ষাৎ হয়েছিল আন্দ্রেই লুগোভয় ও দিমিত্রি কোভতুন নামের দুই রুশির সঙ্গে৷ উভয়েই আজ পর্যন্ত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে যাচ্ছেন৷ বলতে কি, লন্ডনে তাদের কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি৷ ওদিকে রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের হস্তান্তর করতে নারাজ৷
আইনসম্মত অভিযোগ নয়, শুধু অভিযোগমূলক একটি রিপোর্ট
বিষয়টির সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক অঙ্গ হলো অপর একটি প্রশ্ন: লিটভিনেঙ্কো হত্যায় রুশ গুপ্তচর বিভাগ এফএসবি কী পরিমাণে সংশ্লিষ্ট ছিল, এবং বিভাগীয় প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সরাসরি তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা৷ এই দীর্ঘসূত্রী ব্রিটিশ তদন্তে সেই প্রশ্নেরই উত্তর পাবার চেষ্টা করা হয়েছে৷
যেহেতু কোনো অভিযাগপত্র দাখিল করা হয়নি, সেহেতু বিচারক রবার্ট ওয়েন ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করতে পেরেছেন৷ এবং আদালতের রায় না হলেও, ওয়েন যে চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, সেটি হলো এই যে, দুই মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তি, লুগোভয় ও কোভতুন, যে শুধু এফএসবি-র নির্দেশে কাজ করেছেন, এমন নয়, এফএসবি প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন ‘‘সম্ভবত'' লিটভিনেঙ্কোকে হত্যা অনুমোদন করেছিলেন৷ এর চাইতে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব ছিল কি?
ফলশ্রুতি নেই বললেই চলে
কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না মুখ্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হস্তান্তর করে ব্রিটেনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই রিপোর্টের আইনগত ফলশ্রুতি নগণ্যই থাকবে৷ এমনকি রুশ-ব্রিটিশ সম্পর্কের উপরেও তার প্রভাব সীমিতই হবে: তার কারণ এই যে, গত দশ বছরে দু'টি দেশের সম্পর্ক শীতল হতে হতে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আর অবনতি ঘটা বোধহয় সম্ভব নয়৷
অপরদিকে এ-ও সত্য যে, এই ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বিচারক রবার্ট ওয়েনের প্রকাশিত রিপোর্ট একটি ব্রিটিশ আদালতে পুটিনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণারই সমতুল হবে৷
এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ কারা? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে সব বিচার-বিশ্লেষণ করে ৭৩ জনের একটি তালিকা করেছে ফোর্বস৷ দেখুন কারা আছেন সেরা দশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুটিন
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এর তালিকাটা দেখে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষই হয়তো হতাশ হবেন৷ এবারও যে ফোর্বসের তালিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সবার ওপরে দেখা হলো না! গত দু বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ওবামাসহ সব বিশ্বনেতাকে ম্লান করার সুবাদে শীর্ষে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: A.Druzhinin/AFP/GettyImages
দ্বিতীয় স্থানে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের নিয়ে ইউরোপ বেশ বেকায়দায়৷ জার্মানিও খানিকটা সংকটে৷ এই সংকটের জন্য চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকেই দুষছেন তাঁর জোট সরকারের অনেক মিত্র এবং বিরোধীপক্ষ৷ তবে বিশ্ব রাজনীতিতে ম্যার্কেলের অবস্থান এখনো সুদৃঢ়৷ তাই ফোর্বসের তালিকায় গত বছর হয়েছিলেন পঞ্চম আর এবার এক লাফে বারাক ওবামাকেও ডিঙিয়ে দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Eisele
ওবামার অবনমন
২০১১ এবং ২০১২ সালে ফোর্বসের তালিকার শীর্ষে ছিলেন বারাক ওবামা৷ কিন্তু তারপর থেকে পুটিনই এক নম্বরে৷ নিজের জায়গাটি পুটিন এখনো ধরে রেখেছেন৷ কিন্তু ৫৪ বছর বয়সি ওবামা দ্বিতীয় স্থানও ম্যার্কেলের কাছে হারিয়ে এখন তৃতীয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোপের প্রভাবও কম নয়
বর্তমান বিশ্বে পোপ ফ্রান্সিসের প্রভাবও কম নয়৷ তাইতো ফোর্বসের সবচেয়ে ক্ষমতাশালীদের তালিকার চতুর্থ স্থানে শোভা পায় রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরুর নাম৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
তারপর চীনের সর্বেসর্বা
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান – চীনের সবচেয়ে শক্তিধর তিনটি পদই আলোকিত করে রেখেছেন শি জিনপিং৷ ৬২ বছর বয়সি এই কমিউনিস্ট নেতাকে ফোর্বস রেখেছে পঞ্চম স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Sung-Jun
বিল গেটস ষষ্ঠ
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবে সবচেয়ে অগ্রসর মানুষদের এই তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন বিল গেটস৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই বিজনেস ম্যাগনেট এই স্বীকৃতিটুকু পেতেই পারেন৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
ক্ষমতাধর আরেক নারী
জ্যানেট ইয়েলেন আসলে অর্থনীতিবিদ৷ তবে এখন অন্য একটি পরিচয়ই বেশি পরিচিত৷ ৬৯ বছর বয়সি জ্যানেট এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের বোর্ড অফ গভর্নর্সের চেয়ারপার্সন৷ ফোর্বসের তালিকায় সপ্তম স্থানটি তাঁর৷
ছবি: Reuters
আছেন ক্যামেরন
ঔপনিবেশিক শাসনের দিন গত হয়েছে সেই কবে, ব্রিটেনের সেই দাপট আজ আর নেই৷ তবে নেই নেই করেও কিছু তো থাকে! ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বিশ্বের অষ্টম ক্ষমতাধর হতে পারা হয়তো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Getty Images/P. Macdiarmid
মোদীর প্রভাব বাড়ছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব বলয়কে বাড়িয়ে নিচ্ছেন৷ তাই হয়তো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বছরেই ফোর্বসের তালিকার নবম স্থানে জায়গা করে নিতে পেরেছেন ৬৫ বছর বয়সি বিজেপি নেতা৷
ছবি: UNI
বয়সে কম, ক্ষমতায় বেশি...
সেরা দশের শেষ স্থানটি পেলেও ল্যারি পেজ (ওপরের ছবিতে বাঁ দিকে) কিন্তু প্রথম নয় জনের চেয়ে আলাদা৷ বয়স মাত্র ৪২ বছর৷ এ বয়সেই বিশ্বের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের প্রথম সারিতে স্থান করে নিয়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এই মার্কিন নাগরিক৷