লিথুয়ানিয়ায় এতদিন সরকার চালিয়েছে রক্ষণশীল দল। এবারের ভোটে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার লিথুয়ানিয়ায় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ১৪১ আসনের পার্লামেন্টে ৫২টি আসনে জয়ী হয়েছে মধ্য বামপন্থি বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল। জোট তৈরি করে তারা সরকার গঠনের পথে এগোচ্ছে। রক্ষণশীল দল সব মিলিয়ে পেয়েছে ২৮টি আসন।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ভিলিজা ব্লিনকেভিকিউট সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার দল নির্বাচনের আগেই বেশ কিছু সমমনস্ক দলের সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা সেরে রেখেছিল। এবার সেই জোট সমীকরণ চূড়ান্ত হবে। জোটের আলোচনা হয়ে গেলে সরকার গঠনের দিকে পা বাড়ানো হবে।
ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের প্রতিবাদ
ফরাসি সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির জয়ের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ তারা নতুন বামপন্থি জোটের উপর আস্থা রাখতে চাচ্ছেন৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
রাজপথে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী
ফ্রান্সে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনের আংশিক ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে উগ্রডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ৷ প্যারিসের রাস্তায় এই নারী এক ‘ঘৃণাপূর্ণ যুগের’ বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন৷ পপুলিস্ট দলটি নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩৩ শতাংশের মতো ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
আতশবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ
বামপন্থি জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক মানুষ প্যারিসের ‘প্ল্যা দ্যুঁ লা রিপাবলিকে’ জড়ো হন৷ নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে এই জোট৷ কিছু বিক্ষোভকারী সেখানকার স্মৃতিস্তম্ভে উঠে ব্যানার উড়িয়ে এবং আতশবাতি জ্বালিয়ে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বামদলের শীর্ষ নেতারাও সেই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷
ভোটাভুটির প্রথম দফায় ন্যাশনাল ব়্যালি জিতেছে৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি শিবির ২১ শতাংশের কম ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ ইউরোপের দেশটিতে ল্য পেনের ডানপন্থি পপুলিস্টদের বিরুদ্ধে লড়ছে বামপন্থি এবং মধ্যপন্থি দলগুলো৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়’
ন্যাশনাল ব়্যালির জয় দেখে অনেক ফরাসি ভোটার হতাশ হয়েছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি নাজিয়া খালদি প্যারিসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিক্ষোভে অভ্যস্ত নই৷’’ তারপরও তিনি তার ‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়ের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
পরিষ্কার বার্তা
ফ্রান্সের পশ্চিমের শহর ন্যঁতে ডানপন্থিদের উত্থানের প্রতিবাদে এক পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের হাতে থাকা একটি ব্যানারে লেখা: ‘আমরা ব্যালট বাক্স থেকে যা পাবো না, রাস্তায় তা পাবো৷’ অন্য ব্যানারে লেখা: ‘দিনে পাঁচটি পুলিশ এবং নাৎসি খান’৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ন্যঁৎ শহরে কিছু প্রতিবাদকারী মুখোশ পরা ছিলেন৷ তাদের বিক্ষোভ ভেঙে পড়লে কয়েকজন প্রতিবাদকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন৷ পুলিশ তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
ব্যারিকেড, বোতল এবং আতশবাজি
দ্যিঁজ, লিল এবং মার্সেই শহরেও অনেক প্রতিবাদকারীকে রাজপথে দেখা গেছে৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিওঁতেও পুলিশ এবং বিক্ষোভাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের রুখতে চেয়েছে৷ আর বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে বোতল এবং আতশবাজি ছুঁড়ে মেরেছে৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ না হওয়া অবধি ফ্রান্সের জাতীয় সংসদের ৫৭৭টি আসন কীভাবে বিন্যস্ত করা হবে তা জানা যাবে না৷ এই ছবিতে যে প্রতিবাদকারীদের দেখা যাচ্ছে তারা বামপন্থি ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ উপর আশা রাখছেন৷ তবে ভোটের ফলাফলের যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে ন্যাশনাল ব়্যালি আবারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ তবে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
8 ছবি1 | 8
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ''শহর, গ্রাম, ছোট শহর সর্বত্র মানুষ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। নির্বাচনের ফলাফলে মানুষের এই মনোভাব স্পষ্ট।''
অন্যদিকে বর্তমান সরকার নিজেদের হার স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের অভিনন্দন জানিয়েছে।
লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে রাশিয়া এবং বেলারুশের লম্বা সীমান্ত আছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই গোটা দেশে আলোড়ন পড়ে যায়। রাশিয়া এরপর লিথুয়ানিয়াও আক্রমণ করতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। বস্তুত এর পরেই ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লিথুয়ানিয়া। অন্যদিকে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অংশ।
শুরু থেকেই এগিয়ে
ভোট গণনার প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে এগিয়ে ছিল বিরোধীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিরাটভাবে পড়েছে এবারের নির্বাচনে। এছাড়াও কোভিডের সময় সরকার যেভাবে কাজ করেছিল, তাতেও সন্তুষ্ট ছিলেন না সাধারণ মানুষ। বস্তুত, কোভিডের সময় থেকেই মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয় লিথুয়ানিয়ায়। এখনো তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পাশাপাশি সরকারের একের পর এক দুর্নীতিও সামনে এসেছে। এই সমস্ত কিছু নিয়েই শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল জনতার। ভোটে তার স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে।