লিথুয়ানিয়ায় বধিরদের সংগীত চর্চা
১৯ জুন ২০২৫
তা সত্ত্বেও বধির এবং কানে কম শোনা মানুষদের সংগীত তৈরি বা উপভোগের বিষয়টি নানা ভ্রান্ত ধারনার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ লিথুয়ানিয়ার এক শিল্পী এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন৷
নিজের শৈল্পিক সত্ত্বা প্রদর্শনে কানে শুনতে পারাটা জরুরি নয়৷ ভাবছেন, বধির ব্যক্তিরা কীভাবে সংগীত অনুভব করেন বা পারফর্ম করেন? তাছাড়া বধির সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ঠিকঠাক শুনতে পারেন এমন মানুষরা কী শিখতে পারেন?
লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে ‘নট হোয়াট উই এগ্রিড' নামের এক সংগীত প্রকল্পের আওতায় বধির এবং শুনতে পারা মানুষদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে শিল্প তৈরি করা হচ্ছে৷
মার্কো ভুরিহিমো, যিনি সাইনমার্ক নামে আরো বেশি পরিচিত, ফিনল্যান্ডের একজন বধির ব়্যাপ আর্টিস্ট৷ তিনি লিথুয়ানিয়ার বধির শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেন৷ সমালোচকদের উপদেশ শুনলে আন্তর্জাতিক শিল্পী হতে পারতেন না মার্কো৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার আশেপাশের অনেকে বলতেন, ‘তুমি যেভাবে সংকেত দাও তা দেখতে দারুণ লাগে'৷ কারণ, তারা আগে এসব দেখেননি৷ এবং আমি ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই এতে বিশেষ কিছু আছে৷ কিন্তু কেউ কেউ আমাকে অন্য স্বপ্ন দেখতে বলেছিলেন৷''
এই দলের আরেক সদস্য নিনা৷ তিনিও বধির এবং সবসময় কবিতা লিখতে চেয়েছিলেন৷ এখন তিনি তার নিজের কবিতা মঞ্চে পারফর্ম করেন৷ তুলে ধরেন নানা প্রতিবন্ধকতার কথা৷
নিনা শামাকোভা বলেন, ‘‘আমি যখন কানে শোনা মানুষদের বলি যে, আমি বধির তারা তখন বিভ্রান্ত হন৷ মনে হয় আমাদের মাঝে পাহাড় সমান দূরত্ব৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও একে অপরকে বোঝা এবং একসঙ্গে কিছু একটা করা সম্ভব৷ তবে কানে শোনা মানুষটি যদি একেবারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন কাছাকাছি পৌঁছাতে কিছু করার থাকে না৷ পাহাড় ডিঙ্গানো যায় না৷''
নিনার জীবনে সংগীত এক অপরিহার্য বিষয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার মধ্যে শান্তি বয়ে আনে৷ নিত্যদিনের কাজের চাপের মধ্যে সংগীত আমাকে আরাম দেয়৷ আমি দুঃখের, আনন্দের বা তার মধ্যকার ড্রাম, রিদম থেকে কিছু একটা বেছে নিতে পারি৷ এটা আমাকে আনন্দ দেয়৷''
ভিলিয়ুস আরেকজন পারফর্মার৷ তিনি জন্ম থেকে বধির, তবে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন৷ তার মা তার আগ্রহ দেখে তাকে একটি অ্যাকর্ডিয়ন কিনে দিয়েছিলেন৷
পারফর্মার ভিলিয়ুস গ্লুসকাস বলেন, ‘‘শিক্ষক বলেছিলেন একজন বধিরকে শেখানো অসম্ভব ব্যাপার৷ আমার তখন কান্না চলে এসেছিল৷ শিক্ষকের সঙ্গে আমার মায়ের লম্বা আলাপ হয়৷ এবং তিনি এক পর্যায়ে রিদমে মন দিতে বলেন আমাকে: এক, দুই, তিন, এক...''
দুভার্গ্যজনক হলেও ভিলিয়ুসকে মাঝেমাঝে বাজাতে বা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি৷ তার পারফর্ম্যান্সে এই বিষয়টিও উঠে আসে৷
‘নট হোয়াট উই এগ্রিড' প্রকল্পের মূল চালিকা শক্তি লিথুয়ানিয়ার শিল্পী ডোমিনিকাস ভাইটিয়াকুনাস৷ এই প্রকল্প সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ নির্ভর নৃত্য, কবিতা এবং সংগীতের চমৎকার সংমিশ্রন ঘটিয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কথ্য ভাষার ভাষান্তর করতে চেয়েছি৷ কিন্তু তা কাজ করেনি বলে আমরা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে সবকিছু তৈরি করেছি এবং তারপর আমি তা লিথুয়ানিয়ান ভাষায় ভাষান্তর করেছি৷ এরপর বিভিন্ন ম্যাথডের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছি৷ এই পারফর্ম্যান্সে আমরা কীভাবে একত্রে কিছু একটা গড়তে পারি, সেদিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছে৷ একে অপরের ভাষার উপর প্রভাব বিস্তার এর উদ্দেশ্য নয়৷''
অনেকে চেয়েছিলেন ডোমিনিকাস শুধু বধিরদের নিয়ে প্রকল্পটি করুক, যারা কানে শোনেন তাদের বাদ দিক৷
ডোমিনিকাস ভাইটিয়াকুনাস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি না করে দিয়েছি৷ এবং আমি মনে করি সমস্যাটা আমরা কীভাবে ভাবি সেখানে৷ আমরা মনে করি দর্শক ঠিক করে তাদের জন্য বিশেষ কিছু করা উচিত৷ আর এটা আগ্রাসন৷ এটা এক পাওয়ার পজিশন থেকে অন্যদের দেখার ব্যাপার হয়ে যায় তখন৷''
লিথুয়ানিয়ার এই শিল্পীরা দেখাচ্ছেন কীভাবে ভিন্ন উপায়ে সংগীত উপভোগ করা যায়৷ দর্শকদেরকে কখনো কখনো কম্পন অনুভব করতে তালুতে বেলুন রাখতে বলা হয়৷ এই শিল্পীরা প্রমাণ করেছেন বাধা মূলত আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থান করে৷
প্রতিবেদন: ইন্দ্রিয়া কামিন্সকাইটা
অনুবাদ: আরাফাতুল ইসলাম