ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার মন্তব্য নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে৷ ক্লাসে শিক্ষিকা বলেছেন, খোলামেলা পোশাক পরলে কিংবা লিপস্টিক লাগালে ধর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘লিপস্টিক লাগানো যাবে না৷ পরা যাবে না ‘স্কিন টাইট' পোশাক কিংবা ডেনিম৷ এ সব পরলে নির্ভয়ার মতো অবস্থা হতে পারে৷'' বক্তা, স্কুলের বায়োলজি শিক্ষিকা৷ ভারতের ছত্তিশগড় প্রদেশের রায়পুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে৷ ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্নেহলতা শঙ্খওয়ার নামে ওই শিক্ষিকা ক্লাসে ঢুকে আচমকাই ‘নির্ভয়া'-র প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন৷ ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে একটি বাসে নৃশংস ভাবে গণধর্ষণ করা হয় এক যুবতীকে৷ পরবর্তীকালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামে নাগরিক সমাজ৷ নাগরিক সমাজের তরফ থেকেই যুবতীর নাম দেওয়া হয় ‘নির্ভয়া'৷
কিন্তু ঘটনার এত বছর পর রায়পুরের ওই শিক্ষিকা কেন হঠাৎ নির্ভয়ার প্রসঙ্গ তুললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রছাত্রীরাই৷ তাদের অভিযোগ, শিক্ষিকা ক্লাসে ঢুকে আচমকাই বলতে শুরু করেন, নির্ভয়ার ঘটনায় আসলে দোষ ছিল মেয়েটিরই৷ অত রাতে এক যুবকের সঙ্গে কেন বেরিয়েছিল সে? তার পোশাক নিশ্চয়ই ‘সঠিক' ছিল না৷ সে কারণেই তার দিকে আকৃষ্ট হয় ধর্ষণকারীরা৷ বস্তুত, ধর্ষণের জন্য এরপর মেয়েদেরকেই দায়ী করেন ওই শিক্ষিকা৷ ক্লাসে ছাত্রদের উপস্থিতিতেই ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ঠিকঠাক' পোশাক না পরলে, কিংবা লিপস্টিক লাগালে পুরুষেরা মেয়েদের ভোগ করতে চাইবেই৷ কারণ খোলামেলা পোশাক পরা মেয়েদের চরিত্র সকলেই বুঝতে পারে৷ পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই তারা ওই ধরনের পোশাক পরে৷
একাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্র ওই শিক্ষিকার সম্পূর্ণ বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করে৷ এরপর বাড়িতে গিয়ে সেই রেকর্ডিং শোনালে অভিভাবকেরা স্কুলের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন৷ অধ্যক্ষ অভিযোগের কথা মেনে নিয়েছেন৷ ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র৷ একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই কি মেয়েদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে? গত কয়েকবছরে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা বার বার মেয়েদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন৷ বিজেপি নেতা সাক্ষী মহারাজ থেকে আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত, খাপ পঞ্চায়েত থেকে গ্রামের মোরল, মেয়েদের সম্পর্কে একের পর এক তীর্যক মন্তব্য করা হয়েছে৷ তাঁদের মন্তব্য খবর হয়েছে৷ সাময়িক আলোড়ন হয়েছে৷ তারপর সবকিছু ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে৷ উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যে মেয়েদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য স্বাভাবিক বলেই গণ্য করা হয়৷ কারও বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না৷ কারণ, ভারতীয় আইনে এ ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ বহু সংগঠন এ বিষয়ে নতুন আইন তৈরির দাবি জানাচ্ছে বহুদিন ধরেই৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি৷
আপাত প্রগতিশীল পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের মন্তব্য শোনা গিয়েছে বারংবার৷ বিশিষ্ট অভিনেতা, অধুনা বিধায়ক চিরঞ্জিৎ একসময় বলেছিলেন, তাঁর এলাকায় বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে কারণ, সেখানকার মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পরে পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷ বিধায়কের সেই মন্তব্য নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, বারাসতের কামদুনিতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করার পরেও শাসকদলের কোনো কোনো নেতা তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন৷ তারও আগে পার্ক স্ট্রিটে সুজেট জর্ডনের ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনায় ‘প্রেক্ষিত' বিচার করার কথা বলেছিলেন তৃণমূলের এক সাংসদ৷ বাম আমলের শেষ দিকে সিঙ্গুরে তাপসী মালিক হত্যার ঘটনায় কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন প্রথিতযশা বাম নেতারা৷ এক বিশিষ্ট নাট্যকার এবং মহিলা কবি তাপসী মালিক এবং তার বাবার সম্পর্ক নিয়ে মনগড়া রাজনৈতিক চিত্রনাট্যও লিখে ফেলেছিলেন৷
মনোবিদ এবং সমাজবিদদের বক্তব্য, এমন মন্তব্য চলতেই থাকবে৷ কারণ সমাজমন এখনো বহু যুগ পিছনে বাস করছে৷ সামাজিক বদল না ঘটলে এই সমস্যার সমাধান হবে না৷ তবে একই সঙ্গে তাঁদের আক্ষেপ, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের মতো নাম করা স্কুলেও শিক্ষকদের মানসিকতা এমন হলে সাধারণ গ্রামীণ স্কুলগুলোর অবস্থা কী?
এসজি/ডিজি (রয়টার্স, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷