লিপা শিবির ছাড়তে পারলেন না অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের ফলে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
বসনিয়ার প্রবল শীতে পোড়া লিপা শিবিরেই থাকতে হলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সারায়েভোর ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্রাডিনা শহরের পুরোনো একটি সামরিক ভবনে। কিন্তু সেখানে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফলে সেখানে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ২৪ ঘণ্টা বাসে বসে ছিলেন। বুধবার বিকেলে তাঁদের বাস থেকে নেমে লিপা শিবিরেই ফিরে যেতে বলা হয়।
বসনিয়ার নিরাপত্তা মন্ত্রী সেলমো চিকোটিচ জানিয়েছেন, ''বাসগুলি চলে গেছে। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা লিপাতেই আছেন।''
আশ্রয় নেই
লিপা শিবিরের অবস্থা শোচনীয়। ডিডাব্লিউকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন(আইওএম)-এর পিটার অয়েইয়ার্ত জানিয়েছেন, ''সমস্যা সমাধানের জন্য ইইউ খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিবিদদের একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কোথায় থাকবেন। স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিলেই অচলাবস্থা কাটবে।''
তিনি একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, লিপা শিবিরে আশ্রয় নেয়ার জায়গাই নেই। নতুন কিছু কাঠামো হয়েছে। কিন্তু তাতে মাথার উপরে কিছু নেই। ফলে প্রবল শীতের মধ্যে কার্যত আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন এক হাজার মানুষ।
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে নির্যাতনের শিকার যারা
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ অভিযোগ উঠেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ক্রোয়েশিয়া পুলিশ তাদের পিটিয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
ইইউর সীমান্তে নির্যাতন
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রবেশের চেষ্টাকালে সম্প্রতি ৭৫ জনেরও বেশি শরণার্থী এবং অভিবাসী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এভাবে প্রবেশ অবৈধ হলেও ইইউ আইনে কাউকে পেটানোর নিয়ম নেই৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে যিনি গত ১৩ অক্টোবর আরো কয়েকজনসহ সীমান্তে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন৷
ছবি: Danish Refugee Council
বাদ যাচ্ছে না কেউ
ইইউ বহিঃসীমান্তে নির্যাতনের শিকাররা অভিযোগ করেছেন কালো পোশাকের পুলিশ সদস্যরা কোন রকম বাছবিচার ছাড়াই তাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটায়৷ বিশেষ করে কেউ ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করার পর তাদেরকে জোর করে বসনিয়াতে ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয়৷ অনেকক্ষেত্রে এই নির্যাতন পরিকল্পিত বলেও দাবি তাদের৷ ছবিতে একজন মরক্কোর নাগরিককে দেখা যাচ্ছে যাকে পিটিয়ে এই হাল করা হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
নিয়মিত ঘটছে নির্যাতন
বসনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্য রয়েছে এক হাজার কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত৷ ২০১৭ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রবেশের অন্যান্য রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও অভিবাসীরা ইইউতে প্রবেশের জন্য এই সীমান্ত বেছে নেয়৷ তারা সাধারণত তুরস্ক, গ্রিস হয়ে বসনিয়াতে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে৷ ছবিতে একজন বাংলাদেশি শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে যার হাত পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Danish Refugee Council
অভিযোগ কালো পোশাকধারী পুলিশের বিরুদ্ধে
শরণার্থী ও অভিবাসীরা জানিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার একটি বিশেষ বাহিনী রয়েছে যারা কালো পোশাক এবং কালো মাস্ক পরে থাকে৷ শুধুমাত্র এই বাহিনী তাদের নির্যাতন করে বলে নির্যাতনের শিকার কয়েকজন জানিয়েছেন৷ ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনাগুলো যাচাই করছে সেদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Barukčić
ইইউ কি কোন উদ্যোগ নেবে?
বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ এই বিষয়ে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইইউ এর ইলভা ইয়োহানসন৷ তবে, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সীমান্তে নির্যাতন বন্ধে এখন অবধি ক্রোয়েশিয়ার উপর কোন দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করেনি ইইউ৷
ছবি: Dursun Aydemir/picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
মানবিক সমস্যা
এর আগে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, লিপা শিবির মানুষের বসবাসের যোগ্য নয়। এটা গরমের সময় অস্থায়ী থাকার জায়গা হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। শীতের সময়ে সেগুলিতে থাকা সম্ভব নয়।
গত সপ্তাহে আইওএম ঠিক করেছিল, সরকারের উপর চাপ দিতে তারা শিবির বন্ধ করে দেবে। তারপর স্থানীয় মানুষ শিবিরে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ফলে এই প্রবল ঠান্ডায় এক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভয়ঙ্কর বিপাকে পড়েছেন। এটা একটা মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।