লিবিয়ার উপকূলে অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে৷ ২২ জনকে উদ্ধার করা হলেও ১৩ জন এখনও নিখোঁজ বলে শুক্রবার জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা-আইওএম৷
বিজ্ঞাপন
উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা মিশর, বাংলাদেশে, সিরিয়া, সোমালিয়া এবং ঘানার নাগরিক৷ তিনজনের মৃরদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা৷ এদের মধ্যে সিরিয়ার একজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন৷ আইওএম জানিয়েছে, নিখোঁজ ১৩ জন সমুদ্রে ডুবে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
লিবিয়ার কোস্ট গার্ড তাদের সদস্যদের উদ্ধার কাজে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে৷ এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তাদের ধারণা৷ বার্তা সংস্থা এপিকে বাহিনীর কমোডোর মাসুদ আব্দাল সামাদ বলেন, এই পথটি দিয়ে অসংখ্য নৌকা যাচ্ছে৷ তবে শরতে সমুদ্র পাড়ি দেয়া বিপদজনক৷ বাতাসের কারণে যেকোন সময়ে নৌকাডুবি ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে৷
সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে অভিবাসীদের মধ্যে৷ মানব পাচারকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ছোট রাবারের নৌকায় তুলে সমুদ্রে ছেড়ে দিচ্ছেন তাদেরকে৷ আইওএম এর তথ্য অনুযায়ী, এভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
ভূমধ্যসাগর থেকে শরণার্থীদের উদ্ধার করা জাহাজ ওশান ভাইকিংসে কিছুদিন কাটিয়েছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মিওদ্রাক জরিচ৷ সেখানে তিনি অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশিদেরও দেখেছেন৷
ছবি: DW/M. Soric
ওশান ভাইকিংয়ে চড়ে সমুদ্রে
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির দিকে ওশান ভাইকিংসের ক্রুদের দুই সপ্তাহের সঙ্গী হই আমি৷ জাহাজটিতে থাকা একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে আমি লিবীয় উপকূলে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এবং এসওএস মেডিট্রেনির কার্যক্রম একেবারে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি৷ দেখেছি, সাগর থেকে উদ্ধার করা বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের শরণার্থীদের অবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Soric
সবসময় সাগরে চোখ
লিবিয়া উপকূলে থাকাকালে আমি দেখেছি, ওশান ভাইকিংসে অবস্থানরত ক্রু এবং মানবাধিকার কর্মীরা সবসময় সমুদ্রের দিকে চোখ রাখতেন৷ ভূমধ্যসাগরে এই জাহাজের ভেসে বেড়ানোর উদ্দেশ্য একটাই আর তা হচ্ছে, ইউরোপে আসার পথে সাগরে দুর্ঘটনায় পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা৷
ছবি: DW/M. Soric
উদ্ধার তৎপরতা
আমাদের মিশনের প্রথম দিনেই লিবিয়া উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে সাগরে ভাসতে থাকা দু’টি নৌকা থেকে জরুরি সাহায্যের আকুতি শুনতে পাই৷ মানবাধীকার কর্মীরা অশান্ত সাগরের মাঝেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত সব মানুষকে জাহাজে তুলে আনতে সক্ষম হন৷
ছবি: DW/M. Soric
ইউরোপে আসতে মরিয়া তারা
সমুদ্র থেকে ওশান ভাইকিংসে তুলে আনা অধিকাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশীই পুরুষ৷ দুই সপ্তাহের মিশনে আমরা অনেক বাংলাদেশি এবং মরোক্কানকে দেখেছি৷ এছাড়া সাব-সাহারান দেশগুলো থেকে আসা মানুষও ছিল৷ তারা ইউরোপে পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ তবে, উদ্ধারের পর তাদেরকে বেশ ভারমুক্ত মনে হয়,কেননা, তারা তখন নিশ্চিত হন যে আর লিবিয়ায়ফিরে যেতে হবে না৷
ছবি: DW/M. Soric
ইউরোপে নতুন জীবন
ওশান ভাইকিংসে ওঠার পর শরণার্থীরা তাদের মানসিক অস্থিরতা থেকে কিছুটা মুক্তি পান এবং ভবিষ্যৎনিয়ে ইতিবাচক ভাবনার সুযোগ পান৷ যে মহাদেশে পৌঁছাতে ঘরবাড়ি, পরিবার ছেড়ে এসেছেন তারা,শীঘ্রই সেখানে প্রবেশের সুযোগ হবে তাদের৷ আমি মাঝে মাঝে তাদের ভাবনা বোঝার চেষ্টা করি৷ তারা কি অতীত নিয়ে ভাবেন, নাকি ভবিষ্যৎ নিয়ে?
ছবি: DW/M. Soric
জীবন বাঁচাতে বদ্ধপরিকর এরিক কনিন্সবের্গার
আমি এখানে ক্রুদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি৷ ১৪টির বেশি দেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্ম থেকে আসা মানুষদের নিয়ে গড়া এই দলের একটাই উদ্দেশ্য – অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বাঁচানো৷ অতীতে তারা যা- করুক না কেন এই জাহাজের ডেক কিংবা বাথরুম পরিষ্কার করাতেও তাদের কোনো আপত্তি নেই, কথাগুলো বলেন এরিক কনিন্সবের্গার৷ দু’বছর আগেও তিনি ছিলেন একজন অভিনেতা৷
ছবি: DW/M. Soric
উদ্ধারকর্মী ইলিনা এন্গেলোভা
‘‘আমি অন্য কোথাও কাজ করার কথা কল্পনাও করতে পারি ,’’ বলেন ইলিনা এন্গেলোভা৷ ওশান ভাইকিংস জাহাজের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা তিনি৷ তরুণ এই বেলজিয়ান সেই দলের সদস্য,যারা একসময় প্রায় নিশ্চিত ডুবতে বসা ২৭৪ শরণার্থীকে উদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন৷ বর্তমানে শরণার্থীদের উদ্ধারের পর জাহাজে তাদের দেখভালের দায়িত্ব তাঁর৷
ছবি: DW/M. Soric
এক নিরাপদ স্বর্গ
অভিবাসীদের জাহাজে তোলার পর খাদ্য, পানীয় জল, এক ব্যাগ কাপড় এবং একটি কম্বল দেয়া হয়৷ আমি যখন জাহাজে ছিলাম,তখন অভিবাসীদের এই কন্টেইনারগুলোতে থাকতে দেখেছি৷
ছবি: DW/M. Soric
জাহাজে সাময়িক আবাস
অভিবাসীদের ইটালিতে নিয়ে আসার পর জাহাজে থাকা তাদের সাময়িক আবাসন দেখার সুযোগ দেয়া হয় আমাকে৷ অভিবাসীদের স্ট্রেস দূর করতে সহায়তার উদ্দেশ্যে সেখানে একটি বক্সিং রিং তৈরি করে দিয়েছেন ক্রুরা৷ আর সেখানকার দেয়ালে অভিবাসীরা ছবি এঁকেছেন, ক্রুদের ধন্যবাদ দিয়ে নানা বার্তা লিখেছেন৷
ছবি: DW/M. Soric
বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে
ওশান ভাইকিং ত্যাগ করার আগে উদ্ধারকৃত অভিবাসীরা সেটির দেয়ালে স্বাক্ষর দিয়ে গেছেন৷ এখানে বাংলাদেশ থেকে আসা একজন তারিখ লিখেছেন ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০৷ কেউ কেউ আবার ধন্যবাদসূচক নানা বার্তা এবং প্রাথনাও লিখেছেন৷ তাদেরকে সিসিলি বন্দর থেকে কোথায় নেয়া হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
জাহাজে চিকিৎসক
ইতালি কর্তৃপক্ষ সিসিলিতে ওশান ভাইকিং জাহাজটিকে কোয়ারেন্টাইন করেছে৷ তারা আশঙ্কা করছে যে, শরণার্থীরা করোনা ভাইরাস নিয়ে আসতে পারে৷ জাহাজে অবস্থানরত চিকিৎসক ড. স্টেফান কে. হল আমাদের তাপমাত্রা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন৷ ২০১৩ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আসা এই মার্কিন নাগরিক এর আগে দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং সিরিয়ায় ছিলেন৷
ছবি: DW/M. Soric
আশা এবং হতাশা
এই শরণার্থী শিশুরা আইভরি কোস্ট থেকে এসেছেন৷ তাদের অভিভাবকরা কোথায় তা জানা যায়নি৷ ওশান ভাইকিংয়ের উদ্ধারকারীরা উদ্ধারের পর তাদের খেলনা দিয়েছেন৷ তবে, এই শিশুরা খুব দ্রুতই হতাশ হয়ে পড়েছিল৷ কারণ, তারা জাহাজত্যাগের সময় ইতালীয় কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাসের ভয়ে তাদের কাছ থেকে খেলনাগুলো নিয়ে গেছে৷
ছবি: DW/M. Soric
জাহাজে সুস্থ থাকা
ইতালীয় উপকূলে বেশ কয়েকদিন ঝড়ের সঙ্গে লড়ার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ আমাদের সিসিলিতে নোঙ্গরের অনুমতি দেয়৷ কিন্তু করোনভাইরাস আতঙ্কের কারণে আমি এবং ক্রুরা জাহাজ থেকে নামার অনুমতি পাইনি৷বলা হয়েছে, আমাদের এভাবেই দু’সপ্তাহ কাটাতে হবে৷ এই সময়টায় সুস্থ থাকার জন্য ক্রুদের কেউ কেউ এরকম জিম তৈরি করেছে৷
ছবি: DW/M. Soric
জাহাজের নায়ক
কোয়েরেন্টাইনে থাকাকালে আমি বেশ কয়েকজন ক্রুর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি৷ তাদের মধ্যে নায়ক হচ্ছেন টঙ্গুই৷ ৩৮ বছর বয়সি এই ফরাসি যত মানুষকে উদ্ধার করেছেন তা অন্য কোনো ক্রু করতে পারেননি৷ কারো কারো হিসেবে এই মানুষটা দশ হাজারের বেশি শরণার্থীকে ডুবে মরা থেকে বাঁচিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Soric
একটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি
এই চমৎকার হাসিটা দিয়ে মিরিয়াম উইলিস জাহাজের সবার মন জয় করে নেন৷ যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজের এই বাসিন্দা শরণার্থীদের খাদ্য, পানীয়, পোশাক, ঘুমানোর স্থান থেকে গোসল অবধি সবকিছুর দেখভাল করেন৷
ছবি: DW/M. Soric
জীবন বাঁচাতেও খরচ আছে
তবে, মানুষ জীবন বাঁচানোর এই অভিযান অর্থের বিবেচনায় মোটেই সস্তা নয়৷ জাহাজটিতে প্রতিদিন চৌদ্দ হাজার ইউরো খরচ হয়৷ এই খরচের মধ্যে জাহাজের ভাড়াও অন্তর্ভূক্ত আছে৷ উদ্ধারকারীদের জন্য নতুন লাইফবোট এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রয়োজন৷ কিন্তু অর্থের অভাবে সেগুলো কেনা যাচ্ছে না৷
ছবি: DW/M. Soric
16 ছবি1 | 16
এদিকে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় উদ্ধারকৃতদের ত্রিপলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেখানে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইওএম এর মুখপাত্র সাফা মিসাহলি৷ বর্তমানে তারা ত্রিপলি ভিত্তিক সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্লিটেন বন্দিশিবিরে রয়েছেন৷
সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের শিবিরগুলোতে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায় ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে৷ বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধা সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত বন্দিশিবিরগুলোতে কয়েক হাজার অভিবাসী জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন৷
গত মে মাসে লিবিয়ার মানব পাচারকারী এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা গুলি করে ৩০ অভিবাসীকে হত্যা করেন৷ যার মধ্যে ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি৷ ২৫ জুন ৬৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করে ইউরোপীয় মানবাধিকার সংস্থা ‘এসওএস মেডিটেরানে’র জাহাজ ওশান ভাইকিং৷ কাঠের নৌকায় করে তারা লিবিয়া থেকে ইটালিতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন৷ তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও সুদানি, পাকিস্তানি, মরোক্কান ও মিশরীয় নাগরিক ছিলেন৷
এফএস/এআই (এপি)
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷