সম্প্রতি এক ভিডিওতে দেখা গেছে লিবিয়ার এক সশস্ত্রগোষ্ঠীর নেতা খলিফা হাফতার রাজধানী ত্রিপোলি দখলের ডাক দিচ্ছেন৷ লিবিয়ার আরেকটি শহর ঘারয়ান দখল করার কয়েক ঘণ্টা পরই পাওয়া যাচ্ছে এমন সংবাদ৷
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে লিবিয়ায় ক্ষমতায় রয়েছে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি সরকার৷ কিন্তু গত বৃহস্পতিবার এই সরকারের কাছ থেকে রাজধানী ত্রিপোলি'র দখল ছিনিয়ে নেবার কথা জানান খলিফা হাফতার৷
প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালে হাফতার ছিলেন সেনাকর্মী৷ কিন্তু সেই সরকার পতনের পর তিনি একে একে সংগঠিত করতে থাকেন দেশের ভেতর মাথা চাড়া দিতে থাকা একাধিক সশস্ত্রগোষ্ঠীকে৷ বর্তমানে লিবিয়ায় অন্যতম ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এই হাফতার, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্রগোষ্ঠী৷
২০১১ সালের অস্থিরতার পর থেকে এখনও লিবিয়ায় নেই কোনো স্থায়ী সরকার৷ সম্প্রতি সেখানের অবস্থা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে গুতেরেস সরকার ও হাফতারের মধ্যে সংলাপ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ট্রিপোলিতেই অবস্থান করছেন৷
গাদ্দাফির পর কেমন চলছে লিবিয়া?
লিবিয়ার সাবেক নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর প্রায় ছয় বছর কেটে গেছে৷ এখনও দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি৷
ছবি: Reuters/R. Casilli
অক্টোবর, ২০১১
ঐ বছর উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ‘আরব বসন্তের’ ঢেউ উঠেছিল৷ লিবিয়াতেও সেই ছোঁয়া লেগেছিল৷ এরই এক পর্যায়ে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়া শাসন করা গাদ্দাফি পালিয়ে যান৷ পরে অক্টোবরে তিনি ধরা পড়েন এবং তাঁকে হত্যা করা হয়৷ অদ্ভুত আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গেও তাঁর সরকারের সম্পর্ক ছিল৷
ছবি: AP
শান্তি প্রত্যাশা
গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করা হয়েছিল৷ সেই লক্ষ্যে ২০১২ সালের জুনে সংসদ নির্বাচনেরও আয়োজন করা হয়৷ কিন্তু তারপর রাজনীতিবিদরা একটি কার্যকর সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হন৷
ছবি: AP
জঙ্গিবাদের প্রসার
দেশটিতে কার্যকর সরকার না থাকায় জঙ্গিবাদের প্রসার হতে থাকে৷ গাদ্দাফিকে সরাতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে একতা গড়ে তুলতে পারলেও তাঁর মৃত্যুর পর নিজেরা একসঙ্গে থাকতে পারেনি৷ ফলে লিবিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংখ্যাও বাড়ছে৷ তাদেরই একটি অংশ ২০১২ সালে বেনগাজিতে মার্কিন মিশনে হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters
রাজনৈতিক বিভক্তি
লিবিয়ার বর্তমান জাতিসংঘ সমর্থিত ‘গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল অ্যাকর্ড’ বা জিএনএ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত৷ কিন্তু এর বাইরেও আরও কয়েকটি গোষ্ঠী লিবিয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে বলে দাবি করে৷ এই সুযোগে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস লিবিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে৷
ছবি: picture alliance/Xinhua/H. Turkia
সহায়তা কামনা
লিবিয়ার জিএনএ ও স্বঘোষিত ‘লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ বা এলএনএ সম্প্রতি দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছে৷ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট দূর করার আহ্বান জানিয়েছে জিএনএ ও এলএনএ৷
ছবি: Reuters/R. Casilli
5 ছবি1 | 5
হাফতারের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কিছু সময় আগেই রাজধানী ত্রিপোলি থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর ঘারয়ানের দখল নেয় হাফতারের সৈন্যরা৷
সশস্ত্র অভ্যুত্থানই কি সমাধান?
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস একটি টুইটের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় শান্তি আসবে না৷ এই সময়ে প্রয়োজন সংলাপ ও সংযম৷
কিন্তু ২০১১ সালে তৎকালীন গাদ্দাফির সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে তেল-ব্যবসার ঘাঁটি এই দেশ দখলের উদ্দেশ্যে তৎপর হতে থাকে একাধিক শক্তি৷
হাফতারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সশস্ত্রবাহিনী সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী৷
এপ্রিল মাসের শেষে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি বৈঠক হবার কথা, যেখানে লিবিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বসবেন সব পক্ষের প্রতিনিধিরা৷