লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩ হামলাকারীসহ ছয় জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে৷ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ত্রিপোলিতে এই হামলা হয়৷
বিজ্ঞাপন
লিবিয়ার বর্তমান ঐক্য সরকার এক বিবৃ্তিতে এই হামলার ঘটনা নিশ্চিত করেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়, হামলাকারীরা গুলি করতে করতে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে৷ এর মধ্যে দু'জন বিস্ফোরণ ঘটানোর সময়ই নিহত হয়, বাকি একজন বোমা বিস্ফোরণ করার আগেই নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়৷
বিবৃতিতে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে দু'জন মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আরেকজন শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তা৷ হামলায় হতাহতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
যদিও এখন পর্যন্ত কোনও সংস্থা হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে সরকারের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হামলাটি চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থা চলছে৷ গাদ্দাফির সরকার উৎখাতের পর থেকেই দেশটিতে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী এই দেশের দুই প্রশাসন একে অপরের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷
জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের রাজধানী ত্রিপোলি, অন্যদিকে আরেক সরকার তবরুকে তাদের ঘাঁটি করেছে৷ এদিকে প্রতিনিয়ত দেশটিতে চলছে জঙ্গি গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও তেলক্ষেত্র দখলের চেষ্টা৷ প্রায়শই জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে৷ তবে এবারই প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হামলার ঘটনা ঘটল৷
গাদ্দাফির পর কেমন চলছে লিবিয়া?
লিবিয়ার সাবেক নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর প্রায় ছয় বছর কেটে গেছে৷ এখনও দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি৷
ছবি: Reuters/R. Casilli
অক্টোবর, ২০১১
ঐ বছর উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ‘আরব বসন্তের’ ঢেউ উঠেছিল৷ লিবিয়াতেও সেই ছোঁয়া লেগেছিল৷ এরই এক পর্যায়ে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়া শাসন করা গাদ্দাফি পালিয়ে যান৷ পরে অক্টোবরে তিনি ধরা পড়েন এবং তাঁকে হত্যা করা হয়৷ অদ্ভুত আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গেও তাঁর সরকারের সম্পর্ক ছিল৷
ছবি: AP
শান্তি প্রত্যাশা
গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করা হয়েছিল৷ সেই লক্ষ্যে ২০১২ সালের জুনে সংসদ নির্বাচনেরও আয়োজন করা হয়৷ কিন্তু তারপর রাজনীতিবিদরা একটি কার্যকর সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হন৷
ছবি: AP
জঙ্গিবাদের প্রসার
দেশটিতে কার্যকর সরকার না থাকায় জঙ্গিবাদের প্রসার হতে থাকে৷ গাদ্দাফিকে সরাতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে একতা গড়ে তুলতে পারলেও তাঁর মৃত্যুর পর নিজেরা একসঙ্গে থাকতে পারেনি৷ ফলে লিবিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংখ্যাও বাড়ছে৷ তাদেরই একটি অংশ ২০১২ সালে বেনগাজিতে মার্কিন মিশনে হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters
রাজনৈতিক বিভক্তি
লিবিয়ার বর্তমান জাতিসংঘ সমর্থিত ‘গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল অ্যাকর্ড’ বা জিএনএ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত৷ কিন্তু এর বাইরেও আরও কয়েকটি গোষ্ঠী লিবিয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে বলে দাবি করে৷ এই সুযোগে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস লিবিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে৷
ছবি: picture alliance/Xinhua/H. Turkia
সহায়তা কামনা
লিবিয়ার জিএনএ ও স্বঘোষিত ‘লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ বা এলএনএ সম্প্রতি দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছে৷ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট দূর করার আহ্বান জানিয়েছে জিএনএ ও এলএনএ৷