লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অপহরণ নাটক
১০ অক্টোবর ২০১৩আরব বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল যে সব দেশে, তার মধ্যে মিশর ও সিরিয়া এখনও অশান্ত৷ এবার যোগ হল লিবিয়া৷ ২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশটি৷ বৃহস্পতিবার ভোরে অপহৃত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী আলী জাইদান৷
অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত
লিবিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে জাইদানের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছিল, সম্ভবত সাবেক বিদ্রোহীরাই এর পেছনে রয়েছে৷ সেই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছিল, অজ্ঞাত কারণে জাইদানকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে একটি দল৷ লিবিয়ার মন্ত্রিসভা এবং সাধারণ জাতীয় কংগ্রেস বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে৷ জনগণকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে৷ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ত্রিপোলির করিন্থিয়া হোটেল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছিল৷
গ্রেপ্তার না অপহরণ?
অপারেশনস সেল অফ লিবিয়ান রেভোলিউশনারিস' ফেসবুকে লিখেছিল, লিবিয়ার পেনাল কোড মেনে পাবলিক প্রসিকিউটরের/সরকারি কৌঁসুলীর নির্দেশ অনুযায়ী জাইদানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ দেশের নিরাপত্তা ভঙ্গ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো বলে দাবি করেছে এই গোষ্ঠী৷
লিবিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল অফিস অবশ্য এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি অস্বীকার করে অপহরণের নিন্দা জানিয়েছে৷ বলেছে, যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷ সরকারই ঐ বিদ্রোহীদের ত্রিপোলির নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছিল৷
আল আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেল আইন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে এবং বেসামরিক পোশাকে একদল ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ঘিরে রয়েছে এমন স্থির চিত্রও দেখিয়েছে তারা৷
করিন্থিয়া হোটেলের এক কর্মচারী এএফপিকে জানিয়েছেন, অস্ত্রধারী একদল ব্যক্তি খুব ভোরে হোটেলে ঢোকে৷ কিন্তু এরপর কী হয়েছিল তা বলতে পারেননি তিনি৷ হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীরা বলছে, তারা কোন ধরনের গুলির শব্দ শোনেনি৷
লিবিকে গ্রেপ্তারের জবাব
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি গত সপ্তাহে ত্রিপোলি থেকে সন্দেহভাজন আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আবু আনাস আল লিবিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করার পরই ঘটল এ ঘটনা৷ ‘অপারেশনস সেল অফ লিবিয়ান রেভোলিউশনারিস'-এর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, জন কেরি জানিয়েছিলেন, ঐ অভিযানের ব্যাপারে লিবিয়া সরকার জানত৷ এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে ‘গ্রেপ্তার' করা হয়েছে উল্লেখ করেছে তারা৷ কেরির মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে শীর্ষ মার্কিন ও লিবীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে৷
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী ত্রিপোলিতে অভিযান চালিয়ে নাজিহ আবদুল হামেদ আল আল রাগিহ-কে আটক করে, যিনি তার সহযোগীদের কাছে আবু আনাস আল লিবি নামে পরিচিত৷ ১৯৯৮ সালে কেনিয়া এবং তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার জন্য তাকে সন্দেহ করা হয়৷ ভূমধ্যসাগরে মার্কিন একটি জাহাজে অবরুদ্ধ আছেন তিনি৷
লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মঙ্গলবার লিবিয়ায় মার্কিন অভিযানের নিন্দা জানিয়েছিলেন৷ এমনকি লিবিয়ার সাধারণ জাতীয় কংগ্রেসও অবিলম্বে লিবিকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল ওয়াশিংটনের কাছে৷
এপিবি/এসবি (এএফপি/ডিপিএ/রয়টার্স)