খাওয়ার জল না পেয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে মৃত্যু হয়েছে ২০ জন অভিবাসীপ্রত্যাশীর। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে নিখোঁজ ৩০ জন।
বিজ্ঞাপন
মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ার মরুভূমিতে। চাদ সীমান্তের কাছে লিবিয়া প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল মৃতদেহগুলি খুঁজে পেয়েছে। খুফরা শহর থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির মাঝখানে একটি কালো পিক আপ ট্রাকের পাশে মৃতদেহগুলি ছড়িয়ে ছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই ট্রাকটি করেই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা রওনা হয়েছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
শরণার্থীদের পানিতে ফেলে দিল পাচারকারীরা!
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ মাইগ্রেশন আইওএম বলছে, ইয়েমেনের কাছে ৫০ জন শরণার্থীর সলিল সমাধি ঘটেছে৷ নিখোঁজ আরও একশ’ জন৷ পাচারকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পানিতে ফেলে দিয়েছে৷ এরা সোমালিয়া এবং ইথিওপিয়ার অধিবাসী৷
ছবি: AP
মাত্র ২৪ ঘণ্টায় দু’টি অমানবিক ঘটনা
বুধবার ইয়েমের উপকূলে ১২০ জন শরণার্থীকে নৌকা থেকে পানিতে ফেলে দিয়েছিল মানব পাচারকারীরা৷ তাঁদের মধ্যে ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে আইওএম-এর ধারণা৷ এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আবারও ১৮০ জন শরণার্থীর সঙ্গে ঘটল একই ঘটনা৷ এই ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ ৫০ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
আহতদের চিকিৎসা
লোহিত সাগরের তীরে ইয়েমেন সৈকতে আহত ২৫ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ এদের বেশিরভাগই সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার হলেও নিহতদের সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
১২০ জন এক নৌকায়
বুধবার ইয়েমেন উপকূলে ১২০ জন শরণার্থীকে একটি নৌকায় করে নিয়ে আসছিল পাচারকারীরা৷ যাদের বেশিরভাই কিশোর কিশোরী৷ নৌকা ভেড়ানোর আগেই নৌকা থেকে কয়েকজনকে পানিতে ফেলে দেয় তারা৷ ডুবে যাওয়ার পর ২৯ টি মরদেহ সেখানেই সমাহিত করেছে বেঁচে যাওয়া শরণার্থীরা৷ জানিয়েছে আরও ২২ জন এখনো নিখোঁজ৷
ছবি: AP
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
জাতিসংঘে ইয়েমেন মিশনের প্রধান জানিয়েছেন, যারা বেঁচে গেছে সেইসব শরণার্থী তাদের জানিয়েছে, উপকূলের কাছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মত কাউকে আসতে দেখে পানিতে ধাক্কা দিয়ে তাদের ফেলে দেয় পাচারকারীরা৷ তারা আরও জানিয়েছে, যেহেতু তাদের ব্যবসাই এটা৷ তাই আরও শরণার্থীদের আনতে তাদের ফেলে ঐ পাচারকারী সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া রওনা হয়েছিল৷ বেঁচে যাওয়া ২৭ জনকে ত্রাণ দিচ্ছে আইওএম৷ বাকিরা নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Fazaa
চরম দুর্ভিক্ষ ও জরুরি অবস্থা
সোমালিয়ায় চরম দুর্ভিক্ষ এবং সংঘাতের কারণে অনেক মানুষ দেশ ছাড়ছে৷ ইথিওপিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কারণের জরুরি অবস্থা চলছে ১০ মাস ধরে৷ তাই ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না অনেক এলাকায়৷ আর এ কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে ঐ দেশের মানুষ৷
ছবি: Getty Images/O. Scarff
ধনী দেশের উদ্দেশে দেশ ছাড়া
আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অন্তত ৫৫ হাজার মানুষ সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর পথে যাত্রা করেছে৷ যাদের বেশিরভাগই কিশোর-কিশোরী৷
ছবি: Getty Images/AFP/Z. Abubeker
ট্রানজিট ইয়েমেন
গত বছর ইয়েমেন উপকূলে পৌঁছেছে ১ লাখ সাড়ে ১১ হাজার মানুষ৷ ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ তাই উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি দিতে এটিকেই ট্রানজিট হিসেবে বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা৷
ছবি: Getty Images/S. Al-Obeidi
7 ছবি1 | 7
চাদ থেকে ওই ট্রাকটি আসছিল বলে সন্দেহ। মরুভূমির মাঝখানে ট্রাকটি বিকল হয়ে যাওয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আটকে পড়েন বলে পুলিশের ধারণা। সামান্য খাবার জলটুকুও তাদের শেষ হয়ে গেছিল। জল না পেয়েই তাদের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে।
প্রায় ১৪ দিন আগে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তাদের মোবাইল থেকে শেষ কল করা হয়েছিল গত ১৩ জুন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে লিবিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, এক ট্রাক চালক রাস্তা হারিয়ে ওই পথে চলে গেছিলেন। তিনিই প্রথম দেহগুলি দেখতে পেয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩০
এদিকে আরেকটি রবারের নৌকা ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা গেছে। তাতে অন্তত ৩০ জন অভিবাসীপ্রত্যাশী ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনাটিও লিবিয়ার জলসীমান্তে ঘটেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে কোস্ট গার্ডের জাহাজ পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে উদ্ধার করা গেলেও এখনো অনেকে নিখোঁজ। এর মধ্যে পাঁচজন নারী এবং আটটি শিশু আছে।