হেলাল উদ্দিনের পর লিবিয়ায় আরো এক বাংলাদেশিকে একই দিনে একই জায়গা থেকে আইএস জঙ্গিরা অপহরণ ও জিম্মি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ তাঁর নাম মো: আনোয়ার হোসেন৷ তিনি নোয়াখালীর বাসিন্দা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনোয়ার হোসেনের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে একই ঘটনায় অপহৃত হন আনোয়ার হোসেন৷ কিন্তু নামের মিল থাকায় প্রথমে তাঁকে সুদানি নাগরিক বলে ভুল করেছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷ পরবর্তীতে তাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হয়৷
সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার লিবিয়ার সিরতে শহরের দক্ষিণে আল-ঘানি তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে ১১ জন প্রহরীকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷ এরপর স্থানীয় সরকারি বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়৷ তখন যে নয়জন বিদেশি নাগরিককে আইএস অপহরণ এবং জিম্মি করে তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক হেলাল উদ্দিনও রয়েছেন৷ আর মঙ্গলবার আনোয়ার হোসেনের অপহরণের খবর জানা গেল৷
বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশি দূতাবাস অপহৃত বাংলাদেশিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে৷ তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি কী অবস্থায় আছেন সে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছে দূতাবাস৷ লিবিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানি এবং ভিওএস নামে যে তেলক্ষেত্র থেকে অপহরণ করা হয়েছে তার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ত্রিপোলি দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই৷ এখনো বাংলাদেশি নাগরিকদের অবস্থান জানা যায়নি৷ একজন কর্মকর্তা জানান, ‘‘অপহৃত দুই বাংলাদেশিকে উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ নেই৷ লিবিয়া সরকার এবং অন্যান্য দেশ যে উদ্যোগ নেবে সেই উদ্যোগের সঙ্গেই কাজ করবে বাংলাদেশ৷''
তবে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘দুই বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ঘটনার পরপরই পার্শ্ববর্তী আরেকটি তেলক্ষেত্রে কর্মরত আরো ২১ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷''
অপহৃত একজন হেলাল উদ্দিনের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে৷ মাদারগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, অপহরণের খবর পাওয়ার পর সোমবারই হেলাল উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সরকারকে জানানো হয়েছে৷
জানা গেছে, দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত আমাজ উদ্দীনের পুত্র হেলাল উদ্দীন ৬ বছর আগে লিবিয়া যান৷ আটমাস আগে তিনি দুই মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে৷
হেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে জানান, অপহরণের খবরে তাঁদের পুরো পরিবার শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে৷ আত্মীয়-স্বজন, এলাকা এবং প্রশাসনের লোকজন ছুটে আসছেন৷ কিন্তু কেউই তাঁর স্বামীকে উদ্ধারের আশ্বাস দিতে পারছেন না৷ কেউ জানাতেও পারছেন না যে তাঁর স্বামী কোথায় কী অবস্থায় আছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান৷
হেলাল উদ্দিনের মেয়ে হেলেনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন সোমবার বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন৷ পরিবারের বিস্তারিত তথ্যও নিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন এই তথ্য তাঁরা ঢাকায় পাঠাবেন৷ কিন্তু তাঁরা তাঁর বাবাকে উদ্ধারের কোনো আশ্বাস বা তিনি কোথায় কীভাবে আছেন তা জানাতে পারেননি৷