লিবিয়ায় একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্রে বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন অন্তত ৮০ জন৷ ওই কেন্দ্রে আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের আটক রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাজধানী ত্রিপোলির উপকণ্ঠে তাজৌরা এলাকায় বিমান হামলাটি হয়৷ ঘটনার জন্য জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি(এলএনএ)-কে দায়ী করা হলেও তারা তা অস্বীকার করেছে৷
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐক্যমতের সরকারকে সরিয়ে ত্রিপোলি দখলের জন্য তিন মাস আগে স্থলপথ ও আকাশে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে খলিফা হাফতারের বাহিনী৷ ওই সময়ের পর থেকে মঙ্গলবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটলো বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চল থেকে নদীপথে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার প্রধান রুট লিবিয়া৷ এর মধ্য থেকে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে যারা ধরা পড়েন তাদের রাখা হয়ে থাকে এসব অভিবাসন কেন্দ্রে৷
লিবিয়ার জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মুখপাত্র মালেক মার্সেক জানান, আটক কেন্দ্রটিতে মোট ১২০ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল৷ হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়েছেন৷
সাগর থেকে শরণার্থীদের উদ্ধারে এনজিও-র জাহাজ
গত ইস্টারে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত জাহাজ ‘অ্যাকোয়ারিয়াস’ প্রায় ৩০০ মানুষকে ভূমধ্যসাগর থেকে বাঁচিয়েছে৷ একটি অভিযান চলাকালীন ইউরোপীয় নৌ কর্তৃপক্ষ ৮০-৯০ জন উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করা থেকে ‘অ্যাকোয়ারিয়াস’-কে বিরত রাখে৷
ছবি: DW/F. Warwick
সর্বাগ্রে অকুস্থলে পৌঁছাও
৩১শে মার্চ, শনিবার৷ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ইটালিয়ান মেরিটাইম রেস্কু কোঅর্ডিনেশন সেন্টার বা আইএমআরসিসি অ্যাকোয়ারিয়াস জাহাজ ও লিবীয় উপকূলরক্ষীদের কাছে খবর পাঠায় যে, একটি রাবারের ডিঙি আন্তর্জাতিক সমুদ্রে বিপদে পড়েছে৷ এসওএস মেডিটারেনি সংস্থা ও ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স বা এমএসএফ সংস্থার কর্মী, জাহাজের মাল্লা ও মেকানিকরা ‘অ্যাকোয়ারিয়াস’-কে চালিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/F. Warwick
অথৈ সাগর
এগারোটা নাগাদ অ্যাকোয়ারিয়াস খোলা সাগরে ভাসমান রাবারের ডিঙিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হয়৷ এর খানিক পরেই আইএমআরসিসি এসওএস সংস্থার মুখ্য সমন্বয়কারীকে জানায় যে, লিবীয় উপকূলরক্ষীরা উদ্বাস্তুদের উদ্ধারের দায়িত্ব নেবেন৷ রাবারের ডিঙির আরোহীরা স্পষ্টতই বিপন্ন, হাত নেড়ে তাঁরা তা বোঝাবার চেষ্টা করছিলেন৷ অ্যাকোরিয়াসকে ডিঙির কাছে থেকে উত্তরোত্তর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়৷
ছবি: DW/F. Warwick
শেষমেষ...
দু’ঘণ্টা ধরে লিবীয় উপকূলরক্ষীদের কোনো চিহ্ন দেখতে না পাওয়ার পর আইএমআরসিসি ও লিবীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশু, মহিলা ও পরিবারবর্গকে উদ্ধার করার অনুমতি পায় অ্যাকোয়ারিয়াস৷ এভাবে ৩৯ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও রাবারের ডিঙিতে ভাসমান বাদবাকি ৮০-৯০ জন মানুষকে লিবীয় উপকূলরক্ষীদের আগমনের আশায় ছেড়ে আসতে হয়৷
ছবি: DW/F. Warwick
সবে মিলে করি কাজ
এমএসএফ-এর নার্স সিলভি অ্যাকোরিয়াসের দ্রুতগতির উদ্ধার নৌকাটিতে ছিলেন৷ ঐ বোটের কর্মীরা সেই সব রুগ্ন ও বিপন্ন মানুষকে শনাক্ত করেন, পরে যাদের অ্যাকোয়ারিয়াস জাহাজে নিয়ে যাওয়া হবে৷ এভাবে অ্যাকোয়ারিয়াসের তিনটি অভিযানে ২০টি দেশ থেকে আগত ২৯২ জন মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যাদের অধিকাংশই এসেছেন সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে৷ অনেকেই মুখ-চোখে জলাভাব, ক্লান্তি, দুর্বলতা – এমনকি শারীরিক নির্যাতনের ছাপ৷
ছবি: DW/F. Warwick
ছোট ছোট খুশি
বাবা-মায়েরা অ্যাকোয়ারিয়াসের পাটাতনের উপর বসে হাঁফ ছাড়ছেন৷ ছোটদের মুখে কিন্তু ইতিমধ্যেই হাসি ফুটেছে, বিশেষ করে এমএসএফ-এর লজিস্টিকস বিশেষজ্ঞ ফ্রঁসোয়া তাদের সঙ্গে খেলায় নেমে পড়ার পর৷
ছবি: DW/F. Warwick
ডাক্তারের চেম্বারে
ডক্টর ড্যান ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছেন৷ উদ্ধারের পর জাহাজে আনা সব উদ্বাস্তুকে তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, কারো কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা৷ ডাঙায় নামার পর ইটালির স্থানীয় চিকিৎসা বিভাগের কর্মীরা উদ্বাস্তুদের আরো একবার পরীক্ষা করে দেখবেন৷
ছবি: DW/F. Warwick
আবহাওয়া খারাপ হলে...
ঝোড়ো বাতাস আর ঢেউয়ে অ্যাকোয়ারিয়াস জাহাজ যখন টালমাটাল, তখন এসওএস মেডিটারেনি সংস্থার এক কর্মী আগের দিন উদ্ধার করা একটি শিশুকে কোলে করে বসে আছেন৷ ‘‘নাবিক হিসেবে আমাদের কাজ হলো বিপন্ন সবাইকে উদ্ধার করা,’’ বললেন তিনি৷ ‘‘গতকাল আমরা সবাই চোখের জল ফেলেছি৷ আমি একটি শিশুকে কোলে নিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে ছিলাম৷ আমরা কিছু মহিলাদেরও সাহায্য করেছি৷’’
ছবি: DW/F. Warwick
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ...
অ্যাকোয়ারিয়াস যখন সিসিলির মেসিনা বন্দরে পৌঁছাচ্ছে, তখন অনেক উদ্ধার করা মহিলা ইংরেজি অথবা ফরাসিতে গসপেলের গান গেয়ে নিরাপদে ভূমধ্যসাগর পার করার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান৷
ছবি: DW/F. Warwick
পায়ের তলার মাটি...
ফ্রঁসোয়া নিজে ২৯২ জন উদ্ধারকৃত স্ত্রী-পুরুষ ও শিশুদের জাহাজ থেকে নামতে সাহায্য করেন৷ ‘‘মানসিকভাবে ব্যাপারটা সহজ নয়, কারণ, শেষজন ডাঙায় নামলেই আমার কাজ শেষ৷ শুধু সকলকে টেলিফোন করে বলে দেওয়া যে, সকলে ভালোভাবে নেমে গেছে৷ তখন যেন ভিতরটা খালি হয়ে যায়৷’’
ছবি: DW/F. Warwick
পরিশ্রমের পুরস্কার...
বিদায়ের সময় ফ্রঁসোয়ার গালে এক উদ্বাস্তু শিশুর চুম্বন৷ শিশুটির ভাগ্য ভালো, কারণ, সে আর তার পরিবার ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছে৷ তাদের মতো সাড়ে সাত লাখ থেকে নয় লাখ উদ্বাস্তু, অভিবাসন প্রয়াসী ও রাজনৈতিক আশ্রয় সন্ধানী লিবিয়ার ‘মাইগ্র্যান্ট ডিটেনশন সেন্টার’গুলিতে জাতিসংঘের ভাষায় ‘অমানবিক’ পরিস্থিতিতে আটকা পড়ে রয়েছেন৷ সাগরে নাও ভাসানো ছাড়া এই সব অসহায় মানুষদের আর কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ আর ওই আটক কেন্দ্রটির পাশে আছে একটি মিলিটারি ক্যাম্প৷
এক বিবৃতিতে এ হামলার জন্য সাবেক জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন স্বঘোষিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ)-কে দায়ী করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত জাতীয় ঐক্যমতের সরকার (জিএনএ)৷
প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা যায়, আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের হাসপাতালে সার্জারি করা হচ্ছে৷ তাদের শরীর ধুলোমাখা এবং হাঁটু ব্যান্ডেজ করা ছিল৷
সম্প্রতি তাজৌরা এলাকায় জিএনএ অনুগত বাহিনীগুলোর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএ৷ সোমবার এই লড়াইয়ে ‘ব্যাপক বিমান হামলার' ঘোষণা করেছিল তারা৷ কিন্তু অভিবাসী কেন্দ্রে মঙ্গলবার হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন এলএনএ-র এক মুখপাত্র৷