২১ জন কপ্টিক খ্রিষ্টানের শিরশ্ছেদের দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয় রবিবার৷ দৃশ্যত এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে লিবিয়ায়৷ প্রতিশোধ হিসেবে মিশরি জঙ্গিবিমান লিবিয়ায় আক্রমণ চালিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মিশরীয় বিমান বিভিন্ন ‘দায়েশ' – আর্বি ভাষায় ইসলামিক স্টেটের আদ্যক্ষর – শিবিরের উপর হানা দেয়৷ দৃশ্যত এগুলি প্রশিক্ষণ শিবির এবং সেই সঙ্গে অস্ত্রভাণ্ডারও বটে৷ মিশরের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কপটিক খ্রিষ্টানদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেই এই আক্রমণ চালানো হয়েছে৷
সোমবারের এই বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা মিশর লিবিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা এই প্রথম প্রকাশ্যভাবে স্বীকার করল৷ গতবছর মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী লিবিয়ায় এক পর্যায় রহস্যময় বিমান হানায় অংশ নেয়, বলে মার্কিন কর্মকর্তারা সে'সময় জানিয়েছিলেন৷
লিবিয়ার জঙ্গিরা গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে মোট ২১ জন বহিরাগত শ্রমিককে সির্তে শহর থেকে অপহরণ করে৷ এরা ছিলেন মিশর থেকে আগত কপ্টিক খ্রিষ্টান৷ তাদের শিরশ্ছেদের যে দৃশ্য এবার ইন্টারনেটে দেখানো হয়েছে, তা থেকে প্রমাণ হয় যে, জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের একটি প্রশাখা ইটালির দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে মাত্র ৮০০ কিলোমিটার দূরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এমনকি ঐ ভিডিও-তে একজন জঙ্গিকে বলতে শোনা গেছে যে, তারা এবার ‘‘রোম জয়'' করার পরিকল্পনা করছে৷
সিরিয়া এবং ইরাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন ইসলামিক স্টেটের দখলে৷ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে এ ধরনের শিরশ্ছেদের ঘটনা এই প্রথম৷ এবং সেই শিরশ্ছেদের ভিডিও ছবি তোলা হয়েছে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম এবং উচ্চমানের প্রক্রিয়া ব্যবহার করে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
কপ্টিক খ্রিষ্টানদের হত্যাকাণ্ডের জন্য সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন কায়রো সরকার৷ সেই সঙ্গে মিশরীয়দের লিবিয়া যাত্রা আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি রবিবার সন্ধ্যায় জাতির প্রতি ভাষণে বলেছেন: ‘‘মিশর তথা সারা বিশ্ব আজ বিভিন্ন চরমপন্থি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত৷ এ সব জঙ্গি গোষ্ঠীর মতাদর্শ এবং লক্ষ্য একই৷''
আল-সিসি টেলিফোনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উভয় নেতা বিষয়টি পুনরায় বিশ্বনিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ বিষয় বলতে: লিবিয়ায় ইসলামিক স্টেটের কার্যকলাপ ও সম্প্রসারণ, যা রেখার পন্থা বিবেচনা করা প্রয়োজন৷ প্রসঙ্গত, ফ্রান্স মিশরকে ২৪টি রাফাল জঙ্গিজেট বিক্রয় করতে চলেছে৷ এই সর্বাধুনিক জঙ্গি বিমান এই প্রথম কোনো বিদেশি রাষ্ট্রকে বিক্রয় করা হচ্ছে৷