সিরিয়া ও ইরাকে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এখনো অনেক এলাকা আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ তবে লিবিয়ায় সির্টে শহর হাতছাড়া হওয়ায় সে দেশে বড় ঘা খেলো এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ জঙ্গিরা ইটালি চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়া ও ইরাকের পর লিবিয়াই তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷ গোটা অঞ্চলে যেখানেই যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধের ফলে ক্ষমতার কেন্দ্রে শূন্যতা রয়েছে, সেই অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে আইএস শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করে এসেছে৷ এমন পরিস্থিতিতে গত বছর জুন মাসে লিবিয়ার উপকূলবর্তী সির্টে শহর তাদের দখলে চলে আসে৷
লিবিয়ার রাজনৈতিক অচলাবস্থা অনেকটা কেটে যাওয়ার ফলে সে দেশের সেনাবাহিনী এবার গোটা দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ এবার সির্টে শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে বলে তারা দাবি করছে৷ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আইএস জঙ্গিরা জোরালো সংগ্রাম চালিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি৷
জাতিসংঘের মদতে গঠিত লিবিয়ার জাতীয় ঐক্য সরকার বা জিএনএ গত প্রায় ৩ মাস ধরে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ ফলে শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ সংঘাতের আগে শহরের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৮০,০০০৷ এই অভিযানে সরকারের সমর্থনকারী বাহিনীকে সরাসরি সহায়তা করছে মার্কিন বোমারু বিমান৷ মিসরাটা শহরের বাহিনী সির্টে শহর দখল অভিযানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷ গত ১লা আগস্ট থেকে আইএস নিয়ন্ত্রিত স্থাপনার উপর বিমান হামলা চলছে৷ ৯ই আগস্ট জিএনএ বাহিনী শহরে প্রবেশ করে৷
সির্টে শহর বা তার একটা বড় অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালেও লিবিয়ায় আইএস নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি৷ শরণার্থী সেজে বেশ কিছু আইএস জঙ্গি ইটালিতে আশ্রয় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ লিবিয়ার সরকার এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে৷
মূল ঘাঁটি হারানোর পর আইএস অন্য শহর বা এলাকা দখলের চেষ্টা করবে বলে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ অথবা কৌশল বদলে সন্ত্রাসী হামলার পথ বেছে নিতে পারে তারা৷ উত্তরে উপকূলবর্তী এলাকায় সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ কায়েম করলেও দক্ষিণে মরু অঞ্চলে প্রশাসনিক শূন্যতা রয়েছে৷ আইএস জঙ্গিরা সেখানেও তাদের ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে৷ এ কাজে তাদের সহায়তা করতে পারে কিছু উপজাতি, যারা এককালে লিবিয়ার স্বৈরাচারী শাসক মুয়ম্মর গদ্দাফির সমর্থন করতো৷ প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে এমন উপজাতির অনেক তরুণ আইএস-এ যোগ দিয়েছিল৷
সির্টে শহর আইএস-এর হাতছাড়া হলেও সেই অঞ্চলে নতুন সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করা সত্ত্বেও দেশের পূর্বাঞ্চলে প্রতিপক্ষ এক সমান্তরাল সরকার ক্ষমতার রাশ ছাড়েনি৷ সির্টে দখলের পর জিএনএ সেই অঞ্চলেও তাদের আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করতে পারে৷ ফলে সেই সমান্তরাল প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে৷
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পর কোন দেশের কী অবস্থা
টিউনিশিয়ায় শুরু৷ এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশে৷ কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল সেই লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khalil Hamra
নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ
২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি টিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরে মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হলে ২০১১ সালের ১৪ই জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল৷ আরব বসন্তের শুরু তখন থেকেই৷
ছবি: AP
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে টিউনিশিয়ার অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপত্তা সমস্যা৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সেখানকার একটি পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হলে ৩৮ জন নিহত হন৷ এর বেশিরভাগই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Bounhar
মিশর
টিউনিশিয়ার ঢেউয়ের প্রথম আঁচড় লাগে মিশরে৷ সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০১১ সালের ২৫শে জানুয়ারি৷ এর কদিন পর ১১ই ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা হোসনি মুবারক৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Abed
বর্তমান পরিস্থিতি
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
লিবিয়া
১৯৬৯ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত লিবিয়া শাসন করেন মুয়ম্মর গাদ্দাফি৷ এরপর আরব বসন্তের ছোঁয়া লিবিয়া স্পর্শ করলে এক পর্যায়ে লিবিয়া জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়৷ যোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাহিনী৷ ২০১১ সালের জুন মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে গাদ্দাফিকে অভিযুক্ত করা হয়৷ এর কয়েক মাস পর অক্টোবরের ২০ তারিখ তাঁকে হত্যা করা হয়৷
ছবি: Christophe Simon/AFP/Getty Images
বর্তমান পরিস্থিতি
লিবিয়ার উপর এখন সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ২০১২ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সরকার ক্ষমতায় গেলেও শান্তি ফিরে আসেনি৷ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
দেশটিকে রাজতন্ত্র বিদ্যমান৷ ১৯৯৯ সাল থেকে দেশ পরিচালনায় আছেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ (ছবি)৷ তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়৷ বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ এরপর মার্চের ১০ তারিখে সংস্কারের ঘোষণা দেয় রাজতন্ত্র৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Jocard
বর্তমান অবস্থা
গণভোটের মাধ্যমে রাজার কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে দেয়া হয়৷ রাজা আর এখন আগের মতো যাঁকে খুশি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারেন না৷ এ জন্য তাঁকে সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল থেকে একজনকে বেছে নিতে হয়৷