কয়েক মাস শান্ত থাকার পর লিবিয়ার ত্রিপোলিতে দুই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
দুই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সংঘর্ষের পর ত্রিপোলির বিভিন্ন জায়গায় কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।ছবি: Mahmud Turkia/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাতে সহিংসতা শুরু হয়। মঙ্গলবারেও তা চলে। ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। চলতি বছরে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ।
এই সংঘর্ষের ফলে কতজন হতাহত হয়েছেন তা স্পষ্ট হয়নি।
সর্বশেষ খবর
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি মেডিক্যাল ইউনিট জানিয়েছে, তারা তিনটি জেলা থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মুখপাত্র উসামা আলি বলেছেন, একটি জেলা থেকে ২৬টি পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন আহত মানুষও আছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রিপোলিতে প্রচুর মানুষ তাদের বাড়িতে আটকে পড়েছেন। মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, তারা যেন সংঘর্ষের জায়গাগুলিতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেন এবং আহতদের বাইরে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ করে দেন।
লিবিয়ায় আবার বিভাজন বাড়ছে
বহুদিন বিভাজিত থাকার পর লিবিয়ায় কিছুটা ঐক্য ফিরতে যাচ্ছে বলে গত এক বছর ধরে মনে করা হচ্ছিল৷ কিন্তু এখন আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে দেশটি৷
ছবি: Buntenkov Aleksey/Zoonar/picture alliance
আশাভঙ্গ
২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় একের পর এক সংঘাত হয়েছে৷ মিলিশিয়া ও বিদেশি সরকারগুলোর সহায়তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসন দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল শাসন করেছে৷ গত ২৪ ডিসেম্বর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়৷
ছবি: Buntenkov Aleksey/Zoonar/picture alliance
স্থগিত হওয়ার কারণ
নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এবং নির্বাচনের নিয়ম কী হবে তা নিয়ে একমত হতে না পারায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
দুই প্রধানমন্ত্রী
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাটি বাশাগাকে একটি নতুন সরকার গঠনের অনুমোদন দেয়৷ এরপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৪ মাস সময় বেঁধে দেয়৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ বেইবা পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন৷ বছরখানেক আগে তার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অঙ্গীকার করেছেন তিনি৷
ছবি: Esam Omran Al-Fetori/REUTERS
বাশাগার পরিচয়
৫৯ বছর বয়সি বাশাগা বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট ও একজন ব্যবসায়ী৷ ত্রিপোলিতে জাতিসংঘের সমর্থনে গঠিত একটি প্রশাসনে ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ তুরস্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি মিশর ও রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে তার৷ স্থগিত হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Hazem Turkia/AA/picture alliance
বেইবার পরিচয়
ক্যানাডায় প্রকৌশল নিয়ে পড়েছেন বেইবা৷ রাজনীতিতে তিনি নতুন৷ লিবিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তি আলী বেইবার আত্মীয় তিনি৷ আলী বেইবা গাদ্দাফি আমলে রাজনীতি করতেন৷ তার সম্পদের উপর বেইবা অনেকখানি নির্ভরশীল বলে ধারনা করা হয়৷ প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না চাইলেও পরে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন৷
ছবি: Mohammed El Shaikhy/AFP/Getty Images
হাফতারের প্রভাব
সাবেক ঊর্ধ্বতন এই সামরিক কর্মকর্তা বিশ বছরের বেশি সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন৷ সেই সময় তিনি সিআইএর সঙ্গে কাজ করতেন বলে মনে করা হয়৷ ২০১১ সালে লিবিয়ায় ফিরে তিনি গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন৷ ২০১৪ সালে লিবিয়ান আরব আর্মড ফোর্সেস গঠন করে পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেন৷ অবশ্য ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ হাফতারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: LIBYA ALHADATH TV/AFP/Getty Images
সাইফ আল গাদ্দাফি
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন গাদ্দাফির ছেলে সাইফ৷ যদিও নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছিল৷ ২০১১ সালের বিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে খুঁজছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। ৪৪৪ ব্রিগেড কম্যান্ডার মাহমুদ হামজাকে স্পেশাল ডেটারেন্স ফোর্স মুক্তি দেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই দুই গোষ্ঠীই লিবিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামজাকে তৃতীয় কোনো গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
কেন এই সহিংসতা?
স্থনীয় মিডিয়া জানিয়েছে, স্পেশ্যাল ডেটারেন্স ফোর্স ও ৪৪৪ ব্রিগেডের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ৪৪৪ ব্রিগেডকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমর্থন করে। আর ত্রিপোলির বিমানবন্দরের এলাকা স্পেশ্যাল ডেটারেন্স ফোর্সের দখলে।
সোমবার হামজা যখন বিমানবন্দরে তখন স্পেশাল ডেটারেন্স ফোর্স তাকে আটক করে। সংঘর্ষ শুরু হয়।
রয়টার্সের সাংবাদিক জানিয়েছেন, ''সমানে গোলাগুলির আওয়াজ আসছিল। ত্রিপোলির বিবিন্ন জায়গা থেকে কালো ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল। এরপর বিমানগুলি অন্যত্র ঘুরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।''
২০১১ সালে গদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর থেকে লিবিয়ায় সংঘর্ষ লেগেই থাকে।