লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের ডারনা শহরে অতিবৃষ্টির পর ১১ সেপ্টেম্বর পানির তোড়ে দুটি বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে জাতিসংঘ৷ এছাড়া নিখোঁজ আছেন প্রায় ১০ হাজার জন৷
ছবি: Zohra Bensemra/REUTERS
বিজ্ঞাপন
শহরের বাসিন্দারা সোমবার বিক্ষোভ করেছেন৷ তারা পূর্বাঞ্চলীয় সংসদের স্পিকার আগিলা সালেহর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শহর পুনর্গঠনের কাজ করারও দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷
স্পিকার সালেহ গত সপ্তাহে বন্যাকে ‘আল্লাহর কাজ' আখ্যায়িত করে এর জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী না করতে নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ যদিও ডারনা শহরের দুটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণেই এত প্রাণহানি হয়েছে৷ ২০২২ সালে ঠিক এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবদেলওয়ানিস আশুর৷ লিবিয়ার সাভা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জার্নালে প্রকাশিত লেখায় তিনি বাঁধগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিলেন৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘বড় বন্যা হলে, উপত্যকা এবং শহরের বাসিন্দাদের জন্য এর পরিণতি হবে বিপর্যয়কর৷''
এদিকে, ডারনা শহর পুনর্গঠনের দায়িত্ব স্পিকার সালেহি, আবদেল মোনায়েম মেয়র আল-গাইতি (সদ্য বরখাস্ত হয়েছেন) ও পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের পেছনে থাকা প্রভাবশালী সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল খালিফা হাফতারের ছেলে সাদ্দাম হাফতারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূ্র্বাঞ্চলীয় সংসদ৷ এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ডারনা শহরে জেনারেল হাফতারের অবরোধ ও যুদ্ধের পরও শহর পুনর্গঠনের দায়িত্ব এই তিন ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ হয়ে গেলেও তা কোথায় খরচ হয়েছে তা দেখানোর মতো কিছু ছিল না বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সিনিয়র পলিসি ফেলো তারেক মাগারিসি৷
এসব কারণে বিক্ষোভকারীরা এবার আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শহর পুনর্গঠনের কাজ করার দাবি জানিয়েছেন৷
দমনের আশঙ্কা
২০১৪ সাল থেকে লিবিয়ায় দুটি সরকার কাজ করছে৷ পশ্চিমাঞ্চলয়ী সরকারের রাজধানী ত্রিপোলি এবং সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গঠিত সরকার ক্ষমতায় আছে৷ আর পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের রাজধানী তোব্রুক৷ সেখানে ক্ষমতায় জেনারেল হাফতার সমর্থিত সরকার৷ ডারনা শহরটি এই সরকারের অধীনেই পড়েছে৷ বিরোধীদের কঠোর হাতে দমনের জন্য পরিচিত জেনারেল হাফতার৷ তাই ডারনার বিক্ষোভকারীদের কথা শোনা হতে পারে বলে আশা করছেন না বিশ্লেষকরা৷ বরং বিক্ষোভ চলতে থাকলে তা দমন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷ এর প্রমাণও মিলেছে৷
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ভোলফ্রাম লাখার এক্স সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি ডারনার মেয়র ও সংসদের স্পিকার সালেহর বিরুদ্ধে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মীরা তা বন্ধ করে দেন৷ পরবর্তীতে লিবিয়ার সাংবাদিক মোহাম্মেদ এলগ্রাজ এক্স মাধ্যমে জানান, ডারনা থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের তারেক মাগারিসিও সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমন করা হতে পারে বলে মনে করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হাফতার ও লিবিয়ার রাজনীতিবিদেরা ক্রোধ দমন ও প্রতিবাদী মানুষদের দমিয়ে রাখতে সিদ্ধহস্ত৷''
জেনিফার হোলাইস/জেডএইচ
বন্যায় বিধ্বস্ত, শোকস্তব্ধ লিবিয়া
বন্যার কবলে লিবিয়ার শহর ডেরনা৷ সমাজকর্মীরা বলছেন, সেখানে চলমান ‘মানবিক বিপর্যয়’৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Ahmed Gaber/Xinhua/IMAGO
চারদিকে দুর্দশা, হতাশা
হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ রোববার রাতে জাতিসংঘ জানায়, জেরনা শহরে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ হাজার তিনশজন, নিখোঁজ দশ হাজারেরও বেশি মানুষ, যা শহরের জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগের সমান৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ৫১ বছর বয়সি আয়েশাকে৷ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Zohra Bensemra/REUTERS
ডেরনা ছেড়ে নিরাপত্তার খোঁজে
আন্তর্জাতিক অভিসান সংস্থা আইওএম বলছে, লিবিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চল, যেখানে বন্যার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়, ছেড়ে পালাচ্ছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Ricardo Garcia Vilanova/AP/picture alliance
পাখির চোখে লিবিয়া
রোববার পূর্ব লিবিয়াকে তছনছ করে দেয় ‘ডানিয়েল’ ঝড়৷ তটবর্তী শহর ডেরনার কাছে দুটি নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়ে৷ বহু বছর সেই বাঁধ সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ৷ সুনামির সমান শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে ঢেউ, যা সামলাতে পারেনি এই দুর্বল বাঁধগুলি৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাহায্য আসছে, তবে...
বিরতিহীন চলছে নিখোঁজদের খোঁজ৷ উদ্ধারকর্মীরা সাবধানে কাজ করছেন, যেমন দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ উদ্ধারকৃতদের প্রয়োজন আশ্রয়, খাবার, পানি ও চিকিৎসা, জানাচ্ছেন জাতিসংঘের জরুরি সাহায্য বিষয়ক কো-অর্ডিনেটর মার্টিন গ্রিফিথস৷ বিশেষ করে কলেরার ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে পানীয় জল না থাকায়৷
ছবি: Hamza Turkia/Xinhua/IMAGO
দূষিত পানি
লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গোটা ডেরনা শহরের বেশিরভাগ পানিই এখন দূষিত৷ জমে থাকা আবর্জনার পাশাপাশি জীবজন্তু ও মানুষের মৃতদেহ ও নানা বিষাক্ত পদার্থ জলে মিশে এমনটা হয়েছে৷ আলজেরিয়া থেকে আসা উদ্ধারকর্মীদের এক দল বিষাক্ত পানিতেও ডুব দিচ্ছেন৷
ছবি: Algerian Civil Defense/Handout/AA/picture alliance
ভেসে আসছে মৃতদেহ
উদ্ধারকর্মীদের দেখা যাচ্ছে সৈকত থেকে মৃতদেহ সরাতে৷ বন্যার পানি এমন অনেক মৃতদেহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ভূমধ্যসাগরে৷ মাল্টার তীরেও শয়ে শয়ে ভেসে আসছে লাশ৷ অন্যদিকে, বন্যার পানির সাথে ভেসে গিয়ে থাকতে পারে ল্যান্ডমাইন, এমন আশংকাও করা হচ্ছে৷
ছবি: Ayman Al-Sahili/REUTERS
নিহতের জন্য গণকবর
পানি ও কাদা থেকে যেসব মৃতদেহ বের করা হচ্ছে, তা দাফন করা হচ্ছে একসাথে৷ দ্রুত মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে যাতে কোনো ধরনের জীবাণু না ছড়ায় ও ধর্মমতে দাফন সম্পন্ন করা হয়৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মৃতের পরিচিতি জানা কঠিন হয়ে পড়ছে৷
ছবি: Hamza Al Ahmar/AA/picture alliance
শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য
জার্মান সেনা ইতিমধ্যে লিবিয়ায় সাহায্য পাঠানো শুরু করেছে৷ প্রতি দিন বেনগাজির বিমানবন্দরে পৌঁছাচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাহায্য পণ্য৷ বেনগাজি থেকে বন্যাকবলিত ডেরনার দূরত্ব তিনশ কিলোমিটার৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা
গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ প্রার্থনা করছেন লিবিয়ার বন্যার্তদের জন্য৷ ছবিতে প্রার্থনারত এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে৷ মিশরের কায়রোর আল-আজহার মসজিদে তিনি প্রার্থনা করছেন লিবিয়ার মানুষের পাশাপাশি মরক্কোর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যেও৷