লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন বিপদগ্রস্ত ৩১০ বাংলাদেশি
৫ ডিসেম্বর ২০২৫
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৫১ মিনিটের দিকে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বহনকারী ফ্লাই ওইয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে৷ আগের দিন, স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লিবিয়া থেকে দেশের পথে রওনা হন তারা৷ বিষয়টি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে নিশ্চিত করেছেন লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা৷
বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে এবং লিবিয়ার জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় এই ৩১০ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে৷
প্রত্যাবাসিত বাংলাদেশিদের মধ্যে মিসরাতায় ছিলেন ১৫১ জন এবং ত্রিপোলিতে ছিলেন ১৫৯ জন৷ লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মিসরাতা থেকে প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ত্রিপোলির সরকারি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়৷ সেখানে দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহায়তা দেয়া হয়৷
উল্লেখ্য, এটি লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত চতুর্থ বিশেষ চার্টার ফ্লাইট৷ এর আগে, গত অক্টোবরে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় তিনটি ফ্লাইটে মোট ৯২৮ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার ত্রিপোলির অভ্যর্থনা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের বিদায় জানান৷ এ সময় দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়া এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন৷
দূতাবাসের সক্রিয় উদ্যোগে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জেল ও জরিমানা মওকুফ করে নিরাপদে দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলেও জানান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার৷
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘‘অনিয়মিত অভিবাসন শুধু ব্যক্তির আর্থিক ও মানসিক ক্ষতিই করে না, বরং দেশের সুনামও ক্ষুণ্ণ করে৷''
দেশে ফিরে সবাইকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে অন্যদের সচেতন করার পাশাপাশি পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি, দেশে ফিরে নতুন জীবন শুরু করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার কথাও বলেন রাষ্ট্রদূত৷
এ সময় লিবিয়ার বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি৷ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য লিবিয়ার জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার ও দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার৷
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দূতাবাস ও লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রচেষ্টা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আন্তরিক সমন্বয়ের কারণেই এই মানবিক প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷''
ভবিষ্যতেও বিপদগ্রস্তও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি৷
বাংলাদেশিদের অভিবাসীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে লিবিয়া সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-র সঙ্গেও ঘনিষ্ঠাভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ দূতাবাস৷ এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দূতাবাস অভিবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা, বহির্গমন ছাড়পত্র এবং জেল-জরিমানা মওকুফে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আসছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৮২৯ জন বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবেপ্রত্যাবাসন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস৷
টিএম/এসিবি (লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস)
প্রথম প্রকাশ: ইনফোমাইগ্রেন্টস
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷