ইউরোপীয় এক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় গবেষকরা এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা দিয়ে লিভারের রোগীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, কখন তাঁদের হাসপাতালে যেতে হবে৷
নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস ওর বলছেন, ‘‘আমরা রোগীদের চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করছি যেন মনিটরিং চলাকালীন তাঁদের শরীর খারাপ হওয়ার সংখ্যাটা কমে৷ আমরা এতে সফল হলে রোগীদের জীবনযাপনের মান কিছুটা উন্নত হবে, কারণ, তাঁদের হাসপাতালে কম যেতে হবে৷ রোগীদের কথা বিবেচনা করলে এটি অন্যতম এক সুবিধা৷''
আরেক গবেষক স্টেফান ডাসেন একটি যন্ত্র দেখিয়ে বললেন, ‘‘এই যন্ত্র দিয়ে ‘ক্লট' বা পিণ্ড গঠন করতে রক্তের কত সময় লাগে, তা জানা যায়৷ এছাড়া রক্তে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্রিয়েটিনিন, অ্যালবুমিন, বিলিরুবিন ইত্যাদির মাত্রা কত, তা-ও পরিমাপ করা যায়৷ এসবের মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হলে ধরে নিতে হবে, লিভারে সমস্যা হয়েছে৷''
এই যন্ত্র দিয়ে রোগীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হৃদস্পন্দনের মাত্রা, ত্বকের তাপমাত্রা বারক্তচাপ ইত্যাদিও মাপতে পারবেন৷ নিয়মিতভাবে রক্তের চাপ পর্যবেক্ষণ করা একটি চ্যালেঞ্জের কাজ৷
আরো কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার পর শিগগিরই যন্ত্রটি বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে গবেষকরা আশা করছেন৷
প্রকল্পের সমম্বয়ক ক্যালাম ম্যাকনিল বলছেন, ‘‘শরীরের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখার মতো শরীরে পরা এই যন্ত্র খুব শিগগিরই বাজারে আসার মতো পর্যায়ে রয়েছে৷ আর রক্তের বায়োকেমিস্ট্রি মাপার যন্ত্র আসতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে৷ স্মরণশক্তি, নতুন কিছু শেখা, সিদ্ধান্ত নেয়া – এ সব সক্ষমতা কী অবস্থায় আছে, তা মাপার যন্ত্র এক বছরের মধ্যেই চলে আসতে পারে৷''
জেডএইচ/এসিবি
জীবনযাত্রা বদলান, লিভার বাঁচান
লিভার বা যকৃৎ এমন একটি অঙ্গ, যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তার অবদান রেখে থাকে৷ অথচ মানুষ তার খাওয়া-দাওয়া এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে প্রায় অজান্তেই এই মহার্ঘ অঙ্গটির ক্ষতি করে থাকে, একেবারে প্রাণসংশয় অবধি৷
ছবি: Fotolia/J. Chabraszewski
ভাইটাল অর্গান
যকৃৎ বা লিভার মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে একটি অপরিহার্য অঙ্গ৷ শরীরে লিভার নানা ধরনের কাজ করে: বিষাক্ত পদার্থের দূরীকরণ থেকে শুরু করে প্রোটিন সিন্থেসিস৷ এছাড়া খাবার হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে লিভার৷
ছবি: Fotolia/ag visuel
হেপাটাইটিস
জার্মানিতে প্রায় আধ কোটি মানুষ কোনো না কোনোরকম যকৃতের রোগে ভোগেন৷ তার মধ্যে প্রথমেই আসে হেপাটাইটিস বা লিভারের ইনফ্ল্যামেশন: যা সাধারণত এ, বি, সি, ডি এবং ই গোত্রীয় হয়৷ যদিও এগুলো ভাইরাস-বাহিত, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গম থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবার লিভারের ক্যানসার হওয়ার প্রধান কারণ৷
ছবি: Fotolia
অ্যালকোহল
মাত্রাধিক মদ্যপান থেকে যে লিভারের ক্ষতি হয়, তা কারো অজানা নেই৷ ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিস যার মধ্যে পড়ে৷ সিরোসিস হলো যকৃতের রোগের একটা চূড়ান্ত রূপ৷ এ রোগে পেটের মধ্যে ফ্লুইড জমে, এছাড়া স্কার টিস্যু ও নডিউলস দেখা দেয়৷ সিরোসিস সারানো সম্ভব নয় এবং শেষমেষ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা যকৃৎ প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনো পথ থাকে না৷
ছবি: DW/A. Slavnic
লক্ষণ
লিভারের যে ক্ষতি হয়েছে বা অসুস্থ যকৃতের লক্ষণ হলো মলের রং পাতলা এবং মূত্রের রং ঘন হওয়া, জন্ডিস, পেট, পায়ের গোড়ালি এবং পা ফোলা, অতিমাত্রায় ক্লান্তি, সহজেই রক্ত পড়া এবং ক্ষত দেখা দেওয়া আর লিভারের ব্যথা৷
ছবি: Fotolia/olly
মেদ ও তার পরিণাম
সারা বিশ্বে আজ প্রযুক্তি, সমৃদ্ধি এবং আধুনিক জীবনধারার কারণে মেদবহুল মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ অথচ শরীরে মাত্রাধিক মেদ থাকলে তা ডায়বেটিস থেকে শুরু করে হৃদরোগ এবং ফ্যাটি লিভারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
ছবি: Imago
লিভারের ক্ষতি এড়াতে
খাবারের দিকে খেয়াল রাখুন, হাঁটাচলা করুন – অর্থাৎ সাধারণভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাত্রা এক্ষেত্রেও একাধারে পথ্য এবং প্রতিষেধক৷ তবে যাঁদের যকৃতের রোগ আছে, তাঁদের সাধারণত প্রোটিন ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ গ্রহণ কমাতে এবং কার্বোহাইড্রেট বাড়াতে বলা হয়৷