বিশ্বের অনেক শহরের বিশেষ আকর্ষণ থাকে৷ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের একটি প্রাচীন ট্রাম শহরের আত্মার প্রতীক বলে বিবেচনা করা হয়৷ সেই ট্রামে চেপে লিসবনের প্রধান দ্রষ্টব্যগুলি ঘুরে দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/J. Moebes
বিজ্ঞাপন
লিসবন শহরের বিখ্যাত ২৮ই নম্বর ট্রামের প্রায় সাত কিলোমিটার গতিপথ চড়াই-উতরাইয়ে ভরা৷ একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নড়বড়ে ইলেকট্রিক ট্রাম পর্তুগালের রাজধানীর সেরা আকর্ষণগুলির পাশ দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে৷ ট্রামের লাইন মাত্র ৯০০ মিলিমিটার চওড়া৷ প্রায় ১৮ বছর ধরে নুনো কামাশো এই ঐতিহাসিক যান চালাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, এই ট্রাম চালাতে বেশ মজা লাগে৷ লাইনের উপর কোনো যান চালাতে তিনি খুব ভালোবাসেন৷
মার্তি মুনিশ চত্বর থেকে এই ট্রাম টিলার উপর সাঁও ভিসেন্তি দি ফোরা মনাস্ট্রি পর্যন্ত যাত্রীদের নিয়ে যায়৷ তাতে এখনো প্রাচীন কাঠের বেঞ্চে বসার সুযোগ রয়েছে৷ শহরের পুরানো আলফামা পাড়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম চলে৷ আগে রক্ষীরা সেখানে যান নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন ট্রাফিক লাইট সেই কাজ করে৷ নুনো কামাশো এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘‘এখান থেকে একটিমাত্র ট্র্যাক রয়েছে৷ অন্য ট্রাম বা গাড়ি উলটো দিক থেকে আসতে পারে বলে খুব সাবধান থাকতে হয়৷’’
লিসবনের আত্মার প্রতীক ‘ট্রাম ২৮’
04:33
This browser does not support the video element.
জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই এখানে ঘরবাড়ি ছোঁয়া যায়৷ আলফামা লিসবনেরপ্রাচীনতম অংশের মধ্যে পড়ে৷ সেখানকার উঁচুনীচু পথ ও সরু অলিগলির কথা ভেবেই এই ট্রাম তৈরি করা হয়েছিল৷ শহরের নানা ভিউয়িং পয়েন্ট থেকে পর্যটকরা এই ট্রামে ওঠানামা করেন৷ তেশু নদীর মোহনার দৃশ্য তাঁরা উপভোগ করেন৷
ট্রামের যাত্রাপথে একের পর এক দ্রষ্টব্য রয়েছে৷ সান্টা লুসিয়া গির্জার বাইরে রং করা চিনামাটির টাইলস শোভা পাচ্ছে৷ লিসবনের বর্ণাঢ্য ইতিহাস তাতে ফুটে উঠেছে৷ পরের স্টপ ‘সে পাত্রিয়ার্কাল’৷ শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গির্জার পাশ দিয়ে খাড়া পথ নেমে গেছে৷ ট্রাম চালানোর কায়দা সম্পর্কে নুনো কামাশো বলেন, ‘‘ট্রামের একাধিক ব্রেক রয়েছে৷ একটি অকেজো হলে অন্যটি ট্রাম থামাতে পারবে৷ চালাতে গেলে হাতল সামনে ঘোরাতে হয়৷ টেনে ধরলে চাকা পিছনদিকে ঘুরে ব্রেক করে৷ এটা নিউম্যাটিক ব্রেক, এটা ম্যাগনেটিক এবং অন্যটি হ্যান্ড ব্রেক৷’’
‘কালসাদা দে সাঁও ফ্রানসিস্কো’ নামের রাস্তায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ খাড়া পথ বেয়ে উঠতে হয়৷ বিশ্বের অন্য কোনো ট্রাম সেটা পারে না৷
শেষ পর্যায়ে সংসদ ভবন ও বাসিলিকা দা ইশত্রেলার পাশ দিয়ে ট্রাম যায়৷ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ৩৮টি স্টপ পেরিয়ে শহর ঘোরার অভিজ্ঞতা দারুণ৷ তার উপর ট্রামটিও অন্যতম দ্রষ্টব্য বটে৷
রেগিনা নিডেনজু/এসবি
২০১৪ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানির বিচিত্র সব পাতালস্টেশন
জার্মানির যোগাযোগ ব্যবস্থার বিচিত্র চিত্র তুলে ধরেছেন ফটোগ্রাফার মিচা পাভলিৎসকি৷ তাতে ধরা পড়েছে পাতাল রেলের জ্যামিতিক চিত্র৷
ছবি: Micha Pawlitzki
মিউনিখ: মারিয়েনপ্লাৎস স্টেশন
আলো, আকার ও রঙের বিচিত্র সন্নিবেশ ঘটেছে এখানকার চিত্র কর্মে৷ জ্যামিতিক স্থাপত্য ও নকশার মিশেল দেখা যায় মিউনিখের এই স্টেশনে৷
ছবি: Micha Pawlitzki
কোলোন: অ্যসেরে কানালস্ট্রাসে স্টেশন
চিত্রগ্রাহক পাভলিৎসকির জন্ম ১৯৭২ সালে৷ তিনি সবসময় ল্যান্ডস্কেপের সাথে স্থাপত্যের মিশ্রণকে তাঁর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছেন৷ তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং জিইও ম্যাগাজিনসহ বিশেষ কিছু পত্রিকায় কাজ করেছেন৷ তাঁর বই ও ক্যালেন্ডারের সংখ্যা ১৩০টিরও বেশি৷
ছবি: Micha Pawlitzki
ফ্রাংকফুর্ট: ভেস্টেন্ড স্টেশন
পাতাল রেল স্টেশনের নেতিবাচক দিকগুলো পাভলিৎসকির ফটোগ্রাফিতে প্রতিফলিত হয়নি৷ স্টেশনগুলোতে কী পরিমাণ ভীড় হয়, চুরি চামারি কোনটারই ছবি নেই৷
ছবি: Micha Pawlitzki
মিউনিখ: হাজেনব্যার্গেল স্টেশন
চিত্তাকর্ষক মোটিফের সন্ধানে পাভলিৎসকি ঘুরে বেড়িয়েছেন জার্মানির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে৷ প্রায় দু বছর ধরে ঘুরে তিনি ছবিগুলো তুলেছেন গভীর রাতে, যখন স্টেশনে কেউ থাকত না৷ ফলে নিশ্চিন্তে শান্ত পরিবেশে নিজের কাজটা করতে পারতেন পাভলিৎসকি৷
ছবি: Micha Pawlitzki
স্টুটগার্ট: কিরশটালস্ট্রাসে স্টেশন
পাভলিৎসকির ফটোগ্রাফির কম্পোজিশন জ্যামিতিক৷ পাতাল রেল স্টেশনের এ ধরনের চিত্র এর আগে আর কেউ ধারণ করেননি৷
ছবি: Micha Pawlitzki
হামবুর্গ: উবারসিকুয়ার্টির স্টেশন
২০১৩ সালে গ্রেগর ইন্টারন্যাশনাল ক্যালেন্ডার অ্যাওয়ার্ড এর পক্ষ থেকে তাঁর অর্কিড ক্যালেন্ডারের জন্য গোল্ড মেডেল পান পাভলিৎসকি৷
ছবি: Micha Pawlitzki
মিউনিখ: ভেস্টফ্রিডহোফ স্টেশন
জার্মানির মধ্যে মিউনিখের পাতাল রেল স্টেশনগুলোই বেশি অনুপ্রাণিত করেছে চিত্রগ্রাহক পাভলিৎসকিকে৷
ছবি: Micha Pawlitzki
মিউনিখ: কান্ডিডপ্লাৎস স্টেশন
পাভলিৎসকির দৃষ্টিতে জার্মানির অন্য স্টেশনগুলো থেকে এটি একেবারেই ভিন্ন৷ এর নকশায় রয়েছে বৈচিত্র্য৷
ছবি: Micha Pawlitzki
নুরেমব্যার্গ : মাক্সফেল্ড স্টেশন
পাভলিৎসকির এসব ছবি ২০১৩ সালে ফটোগ্রাফির বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷ বইটির নামই দেয়া হয়েছে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’৷ তবে তাঁর যাত্রা এখানেই শেষ নয়৷ তিনি পাতালরেলের আরো কিছু ছবি তুলবেন৷ সেগুলো হয়ত নতুনভাবে ধরা দেবে আমাদের কাছে৷