শহরে ইঁদুরের উপদ্রব হলে বিড়াল-বাহিনী কাজে লাগালে কেমন হয়? হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালাকে না পেয়ে লিসবন শহরের বেওয়ারিশ বিড়াল কাজে লাগিয়ে এমন প্রচেষ্টাই শুরু হয়েছে৷ শহরবাসীর মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
লিসবন শহরের বিড়াল প্রায় নিঃশব্দে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়৷ এবার শহরের প্রায় ছয় কোটি ইঁদুর শায়েস্তা করতে সেই বিড়াল-বাহিনী কাজে লাগানো হচ্ছে৷ সেই লক্ষ্যে সবার আগে বিড়ালগুলিকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে হয়৷ আনা ডুয়ার্তে ও তাঁর পথঘাটের প্রাণী কল্যাণ সংগঠনের সহকর্মীরা বেওয়ারিস বিড়াল ধরে সেগুলির পুনর্বাসন করেন৷ স্ট্রিট অ্যানিম্যালস অ্যাসোসিয়েশনের আনা ডুয়ার্তে মনে করিয়ে দেন, ‘‘বিড়াল শিকারি প্রাণী৷ বিড়ালের গন্ধ পেলে ইঁদুর পালিয়ে যায়৷ আমরা বিড়ালের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে ইঁদুর দূরে রাখছি৷’’
সেই লক্ষ্যে লিসবনে ‘বিড়াল পেট্রোলিং বাহিনী’ গড়ে তোলার উদ্যোগ ৷ তবে জংলি বিড়াল আকর্ষণ করতে হলে ধৈর্যের প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বিফল হওয়ায় প্রাণী সংরক্ষণকারীরা বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন৷ পারলে গোটা কলোনি বন্দি করতে চান তাঁরা৷ আনা ডুয়ার্তে বলেন, ‘‘বিড়াল সহজেই বন্ধু খুঁজে নেয়৷ এই প্রাণী একইসঙ্গে ঘুমায়, খেলা করে৷ ফলে বিচ্ছিন্নভাবে না করে একসঙ্গে সব বিড়ালের পুনর্বাসন করা অনেক সহজ৷’’
ইঁদুর তাড়াতে বিড়াল সেনা
04:04
লিসবন শহরে বিড়ালের প্রায় হাজারখানেক কলোনি বা বসতি রয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷ কারো মতে, বিড়াল উপকারে আসে৷ অন্যদের কাছে বেওয়ারিশ বিড়াল বোঝা ছাড়া কিছুই নয়৷
মারিসা কারেশ্মা দোস রেইস ঠিক সেটাই প্রমাণ করতে চান৷ তিনি পৌর কর্তৃপক্ষের প্রাণী সংক্রান্ত কর্মকর্তা ও ‘ক্যাট পেট্রোল' প্রকল্পের সহ উদ্যোক্তা৷ তাঁর মতে, ‘‘বিড়াল ও মানুষের জন্য তো বটেই, এমনকি ইঁদুরের জন্যও এটা ভালো৷ কারণ এটা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক পদ্ধতি৷ বিড়ালের ভয়ে ইঁদুর আর দেখা যায় না৷’’
একটি বিড়াল ধরা পড়েছে৷ সেটির চোখেমুখে আতঙ্ক৷ বিড়ালটি এখনো জানে না যে ভালোর জন্যই সেটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আনা ডুয়ার্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোনো বসতি সম্পর্কে ক্ষোভ থাকলে বিড়ালের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে৷ সেগুলিকে বিষ খাওয়ানো বা নিপীড়ন করা হতে পারে৷ কোনো পুরানো ভবন ভেঙে নতুন করে তৈরির সময় তাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হয়৷’’
লিসবন শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি স্কুল এমনই একঝাঁক বিড়ালের নতুন কলোনি হয়ে উঠেছে৷ সারাক্ষণ বিড়াল ঘোরাফেরা করছে৷ সহকারী প্রিন্সিপাল ও শিক্ষিকা হিসেবে আঙ্গেলা লোপেস মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সঠিক শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, প্রাণীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শেখাও জরুরি৷ আমরা ভালো নাগরিক সম্পর্কে অনেক কথা বলি৷ প্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির এটা ভালো উপায়৷’’
আনা দুয়ার্তেও এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত৷ ‘ক্যাট পেট্রোলিং’ এই উদ্যোগের সূচনা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, এটা সূচনামাত্র৷ সমস্যার সমাধান করতে আমাদের আরও মানবিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্র চাই৷’’
পথিকৃৎ হিসেবে তাঁদের প্রতি বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও লিসবনের ‘ক্যাট পেট্রোলিং' আপাতত তার কাজ করে চলেছে৷
নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি
পোষা প্রাণী মানুষের সুখ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
হোক কুকুর, বেড়াল কিংবা খরগোশ – এরা ছোট, বড় বা প্রবীণ – সকলেরই বিশ্বাসী বন্ধু৷ পোষা প্রাণী ছোটদের যেমন দায়িত্ব নিতে শেখায় ও আত্মবিশ্বাসী করে, প্রবীণদের তেমনি রাখে ‘ফিট’৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/P. Rösler
শিশুদের জন্য পোষা প্রাণী
অনেক শিশু অস্থির বা অশান্ত প্রকৃতির হয়, লেখাপড়ায় মন বসে না বা অন্য কিছুতেও তেমন আগ্রহ নেই তাদের৷ এ সব ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিশুকে যে কোনো একটি পোষা প্রাণী দিন৷ দেখবেন তাকে যত্ন, খাওয়া-দাওয়া, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া – এ সব করার মধ্য দিয়ে সে দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে৷ দায়িত্ববোধ থেকেই বাড়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস৷ তাই পোষ্য থাকলে তাদের দেখাশোনা করতে করতে পড়াশোনা, খেলাধুলাতেও ভালো করবে শিশুরা৷
ছবি: Fotolia/otisthewolf
হাঁস, মুরগি
পোষা প্রাণী বলতে যে শুধু বিদেশি কুকুর, বেড়াল বোঝায় – তা নয় কিন্তু! আমাদের দেশেও দেখা যায়, যেসব মানুষ মুরগি, হাঁস বা অন্য কোনো প্রাণী পোষেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীল হন৷ পোষা প্রাণীর প্রতি মালিকের অনেক দায়িত্ব থাকে৷ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওদের খাওয়াতে, স্নান করাতে হয়৷ আবার পোষ্য হাঁস, মুরগিরা ডিম দিলে সে ডিম শুধু খাওয়াই হয় না, আনন্দও দেয়৷ আর ডিম ফুটে বচ্চা যখন হয়, তখন তো আনন্দের সীমা থাকে না৷
ছবি: Monika Wüllner
পাখি
অনেকেরই বেড়াল বা কুকুরের লোম থেকে অ্যালার্জি হয়৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কুকুর বা বেড়াল পুষতে পারেন না৷ তবে ইচ্ছে করলে তাঁরা বাড়িতে পাখি পুষতে পারেন, পরামর্শ ডাক্তারদের৷ খাঁচায় বন্দি পাখিও কিন্তু আপনাকে দিতে পারে অনেক সুখ আর আনন্দ৷ বিশেষ করে সেটা যদি কথা বলা পাখি হয়৷
ছবি: Proaves
মস্তিষ্কের বিশ্রাম
যাঁদের কর্মস্থলে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়, বিশেষ করে মস্তিষ্কের চাপ যাঁদের খুব বেশি হয়, তাঁদের জন্যও পোষা প্রাণী বেশ উপকারী৷ কারণ পোষা প্রাণী ব্রেন বা মস্তিষ্ককে পুরোপুরি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হতে পারে সহজেই – যা সুস্থ থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন৷
ছবি: Fotolia/Ljupco Smokovski
প্রবীণদের বন্ধু কুকুর
কুকুর যে প্রভুভক্ত প্রাণী – সেকথা সকলেই জানেন৷ জার্মানিতে কুকুরের মালিকরা তাই গর্ব করেই বলেন, তাঁরা বাড়ি ফেরার আগেই দরজায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে কুকুরটি, প্রিয় মালিককে লেজ নেড়ে সম্ভাষণ জানানোর জন্য৷ জার্মানিতে পোষা কুকুর রয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি৷ কারণ কুকুরকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিনে অন্তত পাঁচবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে৷ এভাবেই কুকুর তার মালিককে মুক্ত বাতাসে হাঁটিয়ে ‘ফিট’ রাখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Landov Mike Cardew
নিঃসঙ্গতা দূর করে
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁদের বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে তাঁরা সাধারণত স্থিতিশীল ও সুখী হন, একাকিত্বে ভোগেন না৷ পশ্চিমা বিশ্বে অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, কুকুরের মালিকদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে, শুধুমাত্র কুকুরকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে৷ ইউরোপে প্রবীণদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা অসুস্থ থাকার একটি বড় কারণ৷একটা কুকুর বা বেড়াল থাকলে সেই নিঃসঙ্গতা থেকেও মুক্তি!
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তানের সাধ
নিঃসন্তান অনেক নারীই প্রাণী পোষেন এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁরা খানিকটা হলেও মায়ের দায়িত্ব পালন করেন৷ পোষা প্রাণীটিকে ভালোবাসা দেন একং অনেকক্ষেত্রে সেটা ফেরতও পান৷ পোষা প্রাণী তাই নিঃসন্তান বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতাও দূর করে৷ বলা যেতে পারে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর একটা উপায় অবশ্যই প্রাণী পোষা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মৃত্যুর পরও একসাথে
জার্মানিতে কুকুরদের জন্য আলাদা কবরস্থান আছে৷ তবে সম্প্রতি জার্মানির রাইনলান্ড-ফালৎস রাজ্যে এমন একটি কবরস্থান তৈরির পর উদ্বোধন হয়েছে, যেখানে কুকুর এবং কুকুরের মালিক মৃত্যুর পর একসাথে চিরনিদ্রায় থাকতে পরেন৷ অর্থাৎ যাঁরা জীবিত অবস্থায় কুকুরের সঙ্গ উপভোগ করেছেন এবং মৃত্যুর পরও একসাথে থাকতে চান, এমন মানুষদের জন্যই এ কবরস্থান৷