জিনা মার্টিনের লড়াইয়ের ফলে যুক্তরাজ্যে আসতে চলেছে নতুন আইন৷ লুকিয়ে স্কার্টের নীচের ছবি তোলা বা ‘আপস্কার্টিং'-এর বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের ফল এই আইন৷
বিজ্ঞাপন
২৭ বছরের জিনা মার্টিনের লড়াই শুরু হয় লন্ডনের বিখ্যাত হাইড পার্কে একটি কনসার্টের সময় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে৷ উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরের মেয়ে জিনা তখন কনসার্টে গান শুনতে মগ্ন৷এক ব্যক্তি সেই সুযোগে তাঁর স্কার্টের তলা থেকে মোবাইলে ছবি তোলে৷ বিষয়টি জিনার নজরে আসে যখন সেই ব্যক্তির বন্ধুর ফোনে জিনা নিজের ছবি দেখতে পান৷ লোকটির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে জিনা পুলিশকে দেখালেও ছবিটি ফোন থেকে মুছে দিয়েই দায় সারেন তারা৷
তবে থেমে থাকেননি জিনা৷ ইংল্যান্ডে এই ‘আপস্কার্টিং' আইনের চোখে অপরাধ নয় জানার পর তাঁর মনে হয় কিছু একটা করা দরকার৷ শিক্ষিত, প্রগতিশীল পরিবারের নারীবাদী মেয়ে জিনা অনলাইনে একটি স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালিয়ে প্রায় এক লক্ষ সই সংগ্রহ করেন৷ তাঁর লড়াইয়ের ফলে ‘আপস্কার্টিং', যা এতদিন ছিল আইনের আওতার বাইরে, বর্তমানে ব্রিটিশ সংসদে আলোচনার ঝড় তুলছে৷
কিন্তু এই লড়াই মোটেও সহজ ছিল না৷ অনলাইনে গালি-গালাজের পাশাপাশিধর্ষণের হুমকিও পেয়েছেন৷ এক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছদ্মনাম নিতে হয় তাঁকে৷
মিনিস্কার্টের ৫০ বছর
নারীদের ছোট্ট একটি পরিধেয়: একাধারে তারুণ্য ও নারীবাদের প্রতীক; অপরদিকে অশালীন ও অশ্লীল বলে রক্ষণশীলদের চক্ষুশূল৷ এক টুকরো বস্ত্রই শুধু নয়, বিংশ শতাব্দীর সামজ ও সংস্কৃতির একটি মাইল ফলকও বটে৷ এরই নাম মিনি বা মিনিস্কার্ট৷
ছবি: Getty Images
চোখে পড়ার জন্যই যার জন্ম
মিনিস্কার্ট এমনই এক বস্তু, যা ৫০ বছর আগেও মানুষের নজর কেড়েছে এবং আজও কাড়ে৷ নন্দনতত্ত্বে নারীদেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা আর যৌন আবেদনের মধ্যে যতোটুকু ফারাক, মিনির ক্ষেত্রেও ঠিক ততটা৷ দেহ একই থাকছে, বাড়ছে কমছে শুধু হেমলাইন৷
ছবি: imago/McPHOTO
‘উদ্ধৃতি চিহ্ন’
মিনির মজাই হলো, তা যা অবারিত রাখে, অর্থাৎ সুন্দর, সুডৌল পদযুগল৷ আবার তা অবলীলাক্রমে এমন একটা নান্দনিক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সমালোচনা করার মতো আর কিছু থাকে না – নাকি থাকে?
ছবি: Fotolia/Franz Pfluegl
‘টুইগি’
খড়কুটোর মতো পাতলা হাত-পা-ওয়ালা এই মডেলটিকে আজও লন্ডনের সুইঙ্গিং সিক্সটিজ-এর প্রতীক বলে মনে করা হয়৷ আসল নাম লেসলি হর্নবি৷ পরবর্তী জীবনে অভিনয়ও করেছেন৷ আজও তাঁর ছবি দেখলে মনে হয়, টুইগি রক্তমাংসের মানুষ নন, তিনি একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্টের থেকেও বড় – তিনি জীবন সম্পর্কে একটি মন্তব্য৷
ছবি: Getty Images
মেরি কোয়ান্ট
লন্ডনের চেলসিতে ‘বাজার’ নামধারী একটি ফ্যাশন বিপণী চালাতেন মেরি কোয়ান্ট৷ পঞ্চাশের দশকের শেষেই আরো ছোট স্কার্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, যা পর্যবসিত হয় ১৯৬৪ সালে তাঁর যুগান্তকারী সৃষ্টিতে: মিনিস্কার্ট৷ এই কাহিনির প্রামাণ্যতা নিয়ে হালে দ্বিধা দেখা দিয়েছে৷ কিংবদন্তী বলে, মেরি নাকি তাঁর প্রিয় মোটরগাড়ি, অস্টিন মিনির নামে খাটো স্কার্টটির নামকরণ করেন৷ এখানে মডেলদের সঙ্গে মেরি কোয়ান্ট (ডানদিকে)৷
ছবি: Express/Express/Getty Images
হাই আর্ট
মিনিস্কার্ট ছিল স্ট্রিট ফ্যাশন, ষাটের দশকে লন্ডনের মেয়েরা খাটো স্কার্ট পরতে শুরু করে: মেরি কোয়ান্ট নিজেই এ কথা বলেছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যেই সেই রাস্তার ফ্যাশন ‘ওৎ কুতুর’, অর্থাৎ হাই ফ্যাশনে পৌঁছে যায়৷ শুধু তাই নয়, স্বয়ং ফ্যাশন গুরু ইভ স্যাঁ লরাঁ তাঁর সুবিখ্যাত মন্ড্রিয়ান ড্রেসটিকে মিনি ড্রেস-ই করেছেন৷ পিয়েট মন্ড্রিয়ান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের এক ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী৷
ছবি: Getty Images
গ্লোরিয়া স্টাইনেম
নারীবাদের প্রথম পর্বে যাঁরা নারীদের হয়ে কলম ধরেছিলেন এবং সোচ্চার হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে পড়েন জার্মেইন গ্রিয়ার এবং গ্লোরিয়া স্টাইনেম৷ এঁরা কিন্তু ষাটের দশকে মিনিস্কার্টকে নারীমুক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করতেন এবং উভয়ে মিনিস্কার্টও পরেছেন৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
শাকিরা
কলম্বিয়ার এই গায়িকা বিশ্বজয় করেছেন গান গেয়ে৷ মঞ্চে তিনি যখন তাঁর শো দেন, তখন পঞ্চাশ বছরের পুরনো ফ্যাশান স্টেটমেন্ট মিনিস্কার্টকে বাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷
ছবি: Getty Images
7 ছবি1 | 7
কিন্তু তাঁর পরিবার, আইনজীবী ও বন্ধুদের সহায়তায় কঠিন সময় পেরোন তিনি৷ একটুও দমে না গিয়ে ‘আপস্কার্টিং'-এর শিকার অন্য নারীদের সাথে যোগাযোগ করেন৷ এই লড়াইয়ে প্রাথমিক ধাক্কা আসে যখন সাংসদ ক্রিস্টোফার চোপ জিনার প্রস্তাবিত আইন নাকচ করে দেন৷ তবে দিন দিন জিনার উদ্যোগের সমর্থক বাড়তে থাকায় আইন প্রণয়নের কথা ভাবতে বাধ্য হয় টেরেসা মে'র সরকার৷ সুদীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে আসছে নতুন আইন৷ লুকিয়ে স্কার্টের তলার ছবি তুললে দিতে হবে জরিমানা৷ কারাদণ্ডও হতে পারে৷
এই সাফল্যের কৃতিত্ব পৃথিবীজুড়ে চলমান ‘মি টু' আন্দোলনকেও দিয়েছেন জিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই আমার লড়াই অনেকটা সহজ হয়ে গেল তখন৷ অনেকেই আমায় মেসেজ করেন তাঁদের সাথে ঘটা এমন ঘটনার কথা জানিয়ে৷ অবশেষে আমি তাঁদের উপযুক্ত লড়াইয়ের পথ বাতলাতে পারবো৷ এই আইন তাঁদেরকেও আমার মতো কিছুটা স্বস্তি দেবে মনে করি৷''