লুক্সেমবুর্গে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের প্রভাব কী
১০ জুলাই ২০২৫
বরং কিছু ভিক্ষুক এখন চুরি করার পরিকল্পনা করছেন৷ শহর কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের উদ্যোগ সফল মনে করছে৷
লুক্সেমবুর্গ শহরের কেন্দ্রে গ্রঁন্দ ব়্যুই এক জনপ্রিয় শপিং কেন্দ্র৷ দামি সব দোকান, অনেক ভিড়৷ ডেভিড এখানে প্রায়ই আসেন৷ ৪১ বছর বয়সি এই ব্যক্তি গৃহহীন এবং ভিক্ষুক৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে এখানে ট্রাম থেকে বাসে ওঠেন৷ এটা সবচেয়ে ভালো স্থান৷''
চেক প্রজাতন্ত্রের ডেভিড অনেক বছর আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে কাজ করে একপর্যায়ে লুক্সেমবুর্গে চলে আসেন৷ এই স্থানে তিনি আগে নিয়মিত ভিক্ষা করতেন৷ কিন্তু গত বছর ভিক্ষাবৃত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শহর কর্তৃপক্ষ, ফলে পুলিশের আনাগোনো বেড়েছে বলে জানান ডেভিড৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানে ভিক্ষা করতাম৷ এখন দশ মিনিটের মধ্যে তারা (পুলিশ) হাজির হয়ে বাধা দেয়৷ জটিলতা করলে পরিচয়পত্র দেখতে চায়৷ না হলে সব গুছিয়ে নিয়ে অন্যত্র যেতে বলে৷''
সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা অবধি শহরের কেন্দ্র, কয়েকটি সড়ক, চত্বর ও পার্কে ভিক্ষা করা নিষেধ৷ কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে ২৫০ ইউরো জরিমানা৷
ডেভিড মনে করেন, দাম্ভিক আমলারা ভিক্ষুকদেরকে শহর ছাড়া করতে এই পথ বেছে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা তাদের একাউন্টে টাকা পাঠায়৷ তাদের গাড়ি, বাড়ি আছে৷ ফলে জীবন নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না৷ অন্যদিকে আমরা রাস্তায় কোনোমতে টিকে আছি৷''
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হয়েছে? ভিক্ষুকদের এখনও রাস্তায় দেখা যায়, তবে সংখ্যায় কম৷ এই পথচারী বলেন, ‘‘দুই এক বছর আগের তুলনায় কম ভিক্ষুক দেখছি৷’’
আরেকজনের মন্তব্য, ‘‘সংঘবদ্ধ ভিক্ষাবৃত্তি কমেছে, তবে ভিক্ষুক সবসময় থাকবে৷’’
মেয়র লেডি প্যলফার মনে করেন, নিষেধাজ্ঞায় কাজ হয়েছে৷ অতীতে ভিক্ষুকদের চক্র শহরকে অনিরাপদ করে তুলেছিল৷ এখন সেই অবস্থা নেই৷
তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই দেখা যায়, আগ্রাসী ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িতরা বেশ তথ্যসমৃদ্ধ৷ ফলে লুক্সেমবুর্গ শহরে নতুন আইন চালুর পর রাতারাতি তারা হারিয়ে যায়৷’’
সাহায্যপ্রার্থী অনেক মানুষ শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ‘ভয়েস অব স্ট্রিট' নামের এক দাতব্য সংস্থায় জড়ো হন৷ এখানে ৫০ পয়সায় খাবার পাওয়া যায়, রয়েছে গোসলের ব্যবস্থা ও পোশাক৷ কর রাজস্ব থেকে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করা হয়৷
ব্যবস্থাপক আলেক্সান্ড্রা অক্সেলাই আমাদের জানান যে, মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, দিনে এখন সাড়ে চারশো জন৷ তার মতে নিষেধাজ্ঞার কারণে শহরের কেন্দ্র থেকে সমস্যা অন্যত্র সরে যাচ্ছে৷
অক্সেলাই বলেন, ‘‘আমরা শহরের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি চাই৷ আমার এমন কিছু দেখাতে চাই যা বাস্তব নয়, আমরা দারিদ্র্য লুকাতে চাই৷ কিন্তু এটা আর লুকানো সম্ভব নয়৷ এটা নতুন লুক্সেমবুর্গ৷’’
এখানে আসা সবাই দারিদ্র হলেও গৃহহীন বা ভিক্ষুক নয়৷ কিন্তু শহরের কেন্দ্রে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হওয়ায় ভিক্ষুকরা এখন কী করছেন?
তাদের অধিকাংশই ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি নন৷ তাদের কেউ কেউ ভিক্ষা করতে না পারলে চুরি করতে চান৷
ডেভিড সিগারেট ও কফির বিনিময়ে দেখা দিয়েছেন৷ এবং তার জন্য এক কাজের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার এক বন্ধু একজন ইটালীয় পাচক৷ তার রান্নাঘরে থালাবাসন পরিষ্কার করা বা অন্য কোনো কাজ পাওয়া যাবে কিনা জানতে চেয়েছি৷''
সেই কাজ না হওয়া অবধি শহরতলিতে ভিক্ষা করতে চান ডেভিড৷
প্রতিবেদন: টোবিয়াস ডামার্স/এআই