সত্যিই কি প্রেমের নেশায় ভারতে এসেছিলেন ওই নারী, না কি তিনি গুপ্তচর? প্রশাসনিক মহলে এই প্রশ্নও উঠছে।
বিজ্ঞাপন
শেষরক্ষা হলো না। শেষপর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হলেন এক পাকিস্তানের তরুণী। কিন্তু থেকে গেল এক প্রেম কাহিনি।
ঘটনার সূত্রপাত অনলাইন লুডোয়। উত্তরপ্রদেশের তরুণ মুলায়ম সিং যাদব কাজের সূত্রে চলে গেছিলেন বেঙ্গালুরুতে। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন তিনি। আর অবসরে খেলতেন অনলাইন লুডো। সেই লুডোর সূত্রেই তার সঙ্গে আলাপ হয় ১৯ বছরের ইকরা জিভানির। পাকিস্তানের এই তরুণী কিছুদিনের মধ্যেই মুলায়মের প্রেমে পড়ে যায়। প্রেম গাঢ় হয়। দুইজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
রাষ্ট্র যেভাবে ‘বিরোধীদের’ বিদেশ থেকে আটক করে
ফ্রিডম হাউস বলছে, বিরোধীদের বিদেশ থেকে ধরে নানাভাবে শায়েস্তা করে বিভিন্ন দেশের সরকার৷ কোনো কোনো দেশ গোপনে গোয়েন্দা অভিযান চালায় অন্য দেশে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপহরণ, এমনকি হত্যাও করে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. J. Phillip
সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত
২০২০ সালে নিখোঁজ হন ওরহান ইনান্দি৷ কিরগিস্তানের রাজধানী বিশেকে তুর্কি-কিরগিজ এই শিক্ষাবিদের গাড়ির দরজা ছিল খোলা৷ হঠাৎ উধাও হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছিল ইনান্দিকে হয়ত অপহরণ করা হয়েছে৷ সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, গুলেনপন্থি হিসেবে পরিচিত ইনান্দিকে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি আটক করেছে৷ পরে ইনান্দির স্ত্রী জানান, তার স্বামীর ডান হাতের তিনটি অংশ পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Sapat
বিদেশে ‘বিরোধী’ নির্যাতনে ৩১ দেশ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ফ্রিডম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৩১টি দেশ বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচক নাগরিকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি হত্যাও করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. J. Phillip
তালিকার শীর্ষে যারা
অপহরণ, আটক, গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান পরিচালনা, হত্যা, সহিংস হামলা, প্রত্যর্পণ, দমন-নিপীড়ন এবং গুম- বিদেশে অবস্থানরত ‘বিরোধীদের’ বিরুদ্ধে এসবের যে-কোনো একটি করেছে, এমন ৩১টি দেশের নামের তালিকা দিয়েছে ফ্রিডম হাউস৷ সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন, উজবেকিস্তান, রুয়ান্ডা, রাশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, ইথিওপিয়া এবং লিবিয়া৷
বিদেশ থেকে বিরোধীদের ধরা সহজ!
ফ্রিডম হাউসের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল লিনৎসার বলেন, কাউকে বিদেশ থেকে ধরে আনা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ নজরদারি করে, গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়ে বিদেশের মাটিতে কারো ওপর হামলা চালানো বা তাকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো এখন আর অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়৷
ছবি: James Lawler Duggan/AFP
সাত বছরে ৬০৭ জন
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬০৭ জন মানুষ নিজের দেশের বাইরে খুন,অপহরণ অথবা অন্য ধরনের হামলার শিকার হয়েছেন৷ তবে লিনৎসার মনে করেন প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/empic/P. Byrne
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে সবচেয়ে পটু তিন দেশ
অন্য দেশে ঢুকে নিজেদের নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা চালায় চীন, তুরস্ক এবং মিশর৷ তবে এর বাইরেও অনেক দেশই যে এমনটি করে, তা মনে করাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনেছে ফ্রিডম হাউস৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওয়ার অন টেরর’-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রও বেশ কয়েকবার এমনটি করেছে৷ উদাহরন হিসেবে খালেদ আল মাসরিকে অপহরণ করে সিআইএ-র নির্যাতন এবং জুলিয়ান আসাঞ্জকে হত্যার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
ছবি: Emrah Gurel/AP Photo/picture alliance
চীনের উইগুর-দমন কৌশল
বিদেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলায় সবচেয়ে সক্রিয় চীন৷ সাম্প্রতিক সময়ে চীন উইগুরদের ওপরই এমন হামলা সবচেয়ে বেশি চালিয়েছে৷ এ কাজে চীন সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সহায়তা নিয়ে থাকে৷ সেই ব্যক্তি কোন দেশে আছে তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানার পর তাকে ধরতে সেই দেশের সহায়তা চাওয়া হয়৷ থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নেয়৷ তারপর তাকে ফিরিয়ে দেয় চীনে৷
বিদেশ থেকে অপহরণে এগিয়ে তুরস্ক
ইসাবেল লিনৎসার জানান, ফ্রিডম হাউসের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের সবচেয়ে বেশি অপহরণ করেছে তুরস্ক৷ তুরস্কের পরই রয়েছে মিশর৷ তিনি আরো জানান, তুরস্ক সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটির মাধ্যমে গোপনে, অবৈধভাবেই কাজটি সম্পন্ন করে৷ জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে তুরস্ককে বিদেশে এমন গোপন অভিযান পরিচালনা বন্ধ করতে বলেছে৷
ছবি: Sapat
8 ছবি1 | 8
ভারতের এক তরুণের সঙ্গে পাকিস্তানের এক তরুণীর বিয়ে হওয়া সহজ নয়। সহজ যে নয়, জানতেন এই যুগলও। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই নেপালের রাস্তা ধরে ভারতে প্রবেশ করেন জিভানি। দেখা হয় মুলায়মের সঙ্গে। জিভানি নাম বদলে হয়ে যান রাভা যাদব। বিয়ে করেন তারা। একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে একটি আধারকার্ডও বানিয়ে ফেলেন জিভানি ওরফে রাভা। এরপর পাসপোর্ট বানানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পুলিশের নজরে পড়ে যান।
বেঙ্গালুরুর পুলিশ মুলায়ম এবং জিভানি দুইজনকেই গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। জিভানি গুপ্তচর কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মুলায়ম এবং জিভানি দুইজনকেই দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে।
সত্যিই কি জিভানি গুপ্তচর? না কি প্রেমের তাগিদেই পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে পৌঁছেছেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি দম্পতির প্রতিবেশীরা। তবে নাম প্রকাশ করা যাবে না, এই শর্তে একজন জানিয়েছেন, ওই দম্পতি সকলের সঙ্গেই খুব ভালো ব্যবহার করতো।
ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) অফিসাররাও একাধিকবার ওই দম্পতিকে জেরা করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।