দেখতে অনেকটা সিগাল পাখির মতো হলেও অ্যালব্যাট্রস আকারে অনেক বড়৷ বেআইনি মাছধরাসহ নানা কারণে এই প্রজাতি লুপ্তপ্রায়৷ গবেষকরা সেই বিপদ দূর করতে প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
অ্যালব্যাট্রস পাখি তার ডানা প্রায় সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত মেলতে পারে৷ দক্ষিণ গোলার্ধের সম্ভবত সবচেয়ে খানদানি এই পাখি লুপ্তপ্রায় হয়ে উঠছে৷
ভারত মহাসাগরে ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ ও তাঁর সহকর্মীরা পাখিগুলির গায়ে ট্রান্সমিটার লাগিয়েছেন৷ গত বছরের শরৎ কাল থেকে তাঁরা আকাশে অ্যালব্যাট্রস পাখির গতিবিধির উপর নজর রাখছেন৷ ছোটবেলা থেকেই অঁরি এই সামুদ্রিক পাখি দেখে মুগ্ধ৷ অঁরি বলেন, ‘‘অ্যালব্যাট্রস ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে৷ সামুদ্রিক ঝড়ও তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না৷ বাতাস কাজে লাগিয়েই তারা ঘোরাফেরা করে৷ তবে এই পাখির উড়ালের মধ্যে সত্যি বেশ রাজকীয় ও চমৎকার একটা ব্যাপার রয়েছে৷ সমুদ্রে পাড়ি দিলে সব পক্ষিবিজ্ঞানীর অন্তত একটি অ্যালব্যাট্রস দেখার স্বপ্ন থাকে৷’’
তবে এমন সম্ভাবনা দিনে দিনে কমে চলেছে, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অ্যালব্যাট্রসের বিচরণ নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ গবেষকদের ধারণা, গোটা বিশ্বে এই প্রজাতির মাত্র ২৫,০০০ প্রাণী টিকে রয়েছে৷
খোরাকের সন্ধানে অ্যালব্যাট্রস প্রায়ই নৌকার পিছু নেয়৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ বলেন, ‘‘ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জে যাবার নৌকা থেকে আমি প্রথম অ্যালব্যাট্রস দেখি৷ হঠাৎ যেন পাখিটি উদয় হলো৷ সমুদ্র অস্থির ছিল৷ আমরা দেখলাম অ্যালব্যাট্রস নৌকার দিকে উড়ে এসে উপর দিয়ে চলে গেল এবং নৌকার পাশে উড়তে লাগলো৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ করে আবার সমুদ্রে উধাও হয়ে গেল৷’’
অ্যালব্যাট্রস টিকিয়ে রাখতে চলছে গবেষণা
05:07
জেলেদের কারণে বিপদ
এই পাখি মূলত জেলে নৌকা অনুসরণ করে৷ তবে দুর্ভাগ্যবশত অনেক জেলে পানির উপর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ জালের দড়ি ফেলে রাখে, যেগুলির মধ্যে অসংখ্য হুক বা বঁড়শি থাকে৷ টোপ ছিনিয়ে নিতে গিয়ে অ্যালব্যাট্রস প্রায়ই বঁড়শি গিলে ফেলে, যার পরিণাম ভীষণ কষ্টকর মৃত্যু৷
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব জেলে নৌকার মাছ ধরার অনুমতি থাকে না৷ ফলে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলি শনাক্ত হবার সিগন্যালও পাঠায় না৷ পানির উপরিভাগ থেকে জাল দ্রুত গভীরে নামানোর জন্য ওজনদার দড়ির মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকে না৷ ফলে গি দুয়ামেলের মতো সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক জলসীমার সমস্যা হলো, যে সেখানে কোনো অধিকার স্বীকৃত নয়৷ ফলে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির হাতে সেখানে কোনো আইনি পদক্ষেপ প্রয়োগ করে এই সব নৌকার বেআইনি মাছ ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷’’
আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ
সে কারণে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের ‘ওশেন সেন্টিনেল রিসার্চ প্রজেক্ট’ শুরু করে অন্য পথে বেআইনি মাছধরা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷ তাঁরা ১৭০টি পাখির শরীরে রাডার ট্রান্সমিটার লাগিয়েছেন৷ সেই যন্ত্র এমনকি সেই সব নৌকাও শনাক্ত করতে পারে, যেগুলি নিয়ম অনুযায়ী নিজস্ব অবস্থান জানাতে সংকেত পাঠাচ্ছে না৷ সেটি দেখিয়ে অঁরি বলেন, ‘‘এটা একটা ট্রান্সমিটার৷ এর মধ্যে জিপিএস অ্যান্টেনা রয়েছে, যেটি নিখুঁতভাবে সেই জায়গার প্রতি নির্দেশ করতে পারে, যেখানে রাডার শনাক্ত করা হয়েছে৷ তারপর আরেকটি অ্যান্টেনা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের সংকেত পাঠায়৷’’
বিস্ময়কর স্টারলিং পাখি
যেন একরাশ কালো মেঘ৷ স্টারলিং পাখিগুলো এমনভাবে দলবেঁধে আকাশে উড়ে উড়ে জ্যামিতিক আকৃতি তৈরি করে যে , তা সব অ্যারোবেটিক্স দলকেই হার মানাবে৷ ক্যামেরার চোখে দেখুন ইসরায়েলের আকাশে ধরা পড়া এমন চমৎকার দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
কী অপরূপ
কখনো ঝরা পাতার মতোন, কখনো ওড়ার চেষ্টা করা ঘুঘু, কিংবা কখনো সাঁতরে বেড়ানো বিশাল তিমি মাছের আকৃতি তৈরি করে পাখির ঝাঁক৷ এই স্টারলিংগুলো ইউরোপীয় পরিযায়ী পাখি৷ ইসরায়েলে আসে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ছোট পাখি! ছোট পাখি!
এই ছবিগুলো দক্ষিণ ইসরায়েলের বেইট কামা গ্রাম থেকে তোলা৷ রাতে ঘুমোতে যাবার আগে পাখিগুলো নানান আকৃতি তৈরি করে৷ শুধু যে এরা আকৃতি তৈরি করে তা-ই নয়, কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে পুরো এলাকা৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
নিখুঁত আকার
বিজ্ঞানিরা ঠিক জানেন না, কিভাবে তারা এসব আকৃতি তৈরি করে৷ কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, এরা ইচ্ছে করে এমন করে না৷ বরং ঝাঁকের একটি পাখি তার নিকটবর্তী আরেকটির কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব তৈরি করে ওড়ে৷ তাতেই এমন আকৃতি তৈরি হয়৷ তা বলে এতটা নিখুঁত?
ছবি: Reuters/A. Cohen
দ্রুত প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের পাখি বিশেষজ্ঞ জাকারি স্ল্যাভিন বলেন, ‘‘ঠিক যেন মাছের মতো৷ এই ঝাঁকের কোনো নেতা নেই৷ কিন্তু তারা এমনভাবে থাকে যেন একসঙ্গে একটি গন্তব্যে পৌঁছায়৷ এদের একজন গতিপথ বদলালে এরা দ্রুত সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে৷’’
ছবি: Reuters/A. Cohen
পরিযায়ী স্টারলিং
সাধারণত শীত ও বর্ষায় স্টারলিংয়ের এমন ঝাঁক দেখা যায়৷ গ্রীষ্মের শেষ দিকে এই পাখিগুলোর প্রজনন প্রক্রিয়া শেষ হয়৷ এরপর বড় বড় ঝাঁকে এরা অভিযাত্রা শুরু করে৷ পরে শীতের শেষে অথবা বসন্তের শুরুতে এরা তাদের প্রজননস্থলে ফিরে আসে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
দশের লাঠি একের বোঝা
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এরা এমন ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়? বিশ্লেষকদের মন্তব্য যে, পাখিগুলো দলবেঁধে ঘুরে বেড়ালে এদের হাজারো চোখে একসঙ্গে খাবার খোঁজা সহজ হয়৷ এতে একই খাবারের খোঁজে থাকা প্রাণিদের এ লড়াইয়ে পরাজিত করা সহজ হয়৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
বাজপাখির চোখ ফাঁকি
আরো একটি কারণ, নিরাপত্তা৷ চিল, বাজপাখিদের হাত থেকে বাঁচতে এমন উপায় বেছে নিয়েছে তারা৷ বিশ্লেষকরা বলেন, তারা এমনভাবে ঘুরে যেন, বাজপাখিদের চোখে একেকটি পাখি আলাদা করে ধরা পড়া কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
কতদূর সমুদ্দুর
এরা যে শুধু ইউরোপেই ঘোরাঘুরি করে তা নয়৷ এই পরিযায়ী পাখিগুলোর ওড়ার সীমানা উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ ইউরোপ, এমনকি পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
8 ছবি1 | 8
বিজ্ঞানীরা পাখিদের শরীরে বসানো ট্রান্সমিটার থেকে পাওয়া তথ্য আইনসঙ্গত জেলে নৌকা থেকে পাঠানো তথ্যের সঙ্গে তুলনা করেন৷ এভাবে তাঁরা জানতে পারেন, যে সমুদ্রের বুকে প্রায় ৩০ শতাংশ নৌকারই প্রয়োজনীয় অনুমতি নেই৷ গবেষকদের দাবি, এমন কিছু নৌকো স্পেন ও চীনের পতাকার ছত্রছায়ায় ঘোরাফেরা করছে৷
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল?
স্পেনের টেকসই মাছধরা বিভাগের মহাপরিচালক ইসাবেল আর্তিমে গার্সিয়া অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে একেবারেই প্রস্তুত নন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মহাসাগর বা অন্য যে কোনো মহাসাগরে স্পেনের পতাকার ছত্রছায়ায় যে সব নৌকা চলছে, সেগুলির উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে৷ আমরা প্রত্যেকটি নৌকা মনিটর করি এবং সেগুলির কার্যকলাপ না জানা অসম্ভব৷’’
কিন্তু পক্ষিবিজ্ঞানীরা নিজেদের গবেষণার উপর আস্থা রাখেন৷ তাঁদের সংগৃহিত তথ্য যে বেআইনি মাছধরা বন্ধ করতে এবং অ্যালব্যাট্রস বাঁচাতে সাহায্য করবে, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত৷ অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ বলেন, ‘‘কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় মৃত্যুর হার বেশি এবং সেখানকার বেশিরভাগ নৌকা শনাক্ত করার প্রণালী বন্ধ রয়েছে – সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এমন প্রমাণ দিতে পারলে তা হবে সঠিক দিশায় এক পদক্ষেপ৷’’
সমুদ্রে বিচরণরত অ্যালব্যাট্রস নিয়ে কাজের সুবাদে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ একইসঙ্গে সংরক্ষণবাদী ও গবেষক হয়ে উঠেছেন৷ তিনি জানেন, এই প্রজাতির অস্তিত্ব বাঁচানোর সময় কমে চলেছে৷ তাই বেআইনি মাছধরায় রাশ টানতে তিনি নিজের সংগৃহীত তথ্য কাজে লাগাচ্ছেন৷ ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জের আকাশে অ্যালব্যাট্রসের উড়াল চালু রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর৷
সুসানে ড্যোরহাগে/এসবি
পাখির এত রঙ!
ছয় হাজার প্রজাতির পাখির উপর নজর রেখে পুরুষ ও স্ত্রী পাখির রঙে এত পার্থক্যের কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা৷ বর্ণিল কিছু পাখির সঙ্গে পরিচিত হতে চান? তবে ঘুরে আসুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Jensen
অদ্ভুত তোতা
বেশিরভাগ পুরষ পাখি স্ত্রী পাখিদের থেকে বেশি সুন্দর হলেও তোতার ক্ষেত্রে তা খাটে না৷ পুরুষ তোতা ও স্ত্রী তোতা দেখতে অনেকটা একই রকমের৷ ভারতে লাল-সবুজ পালকের তোতা দেখা যায়৷ এমন রঙিন তোতা দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
কোনটা পুরুষ, কোনটা মহিলা
গবেষকেরা দেখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ পাখির তুলনায় নারী পাখির বর্ণ মলিন থাকে৷ এটি জানার পর এই ছবি দেখে আপনি নিশ্চয়ই অনুমান করে ফেলেছেল বামদিকের পাখিটি নারী আর ডানেরটি পুরুষ৷
ছবি: Bill Holsten
বেশ আলাদা
অনেক সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখিগুলো এতটাই আলাদা হয় যে এদের দেখে একই প্রজাতির বলে মনে নাও হতে পারে৷ পুরুষ ট্যান্সার পাখি দেখতে কালো ও লাল বর্ণের হলেও স্ত্রী ট্যান্সারদের মধ্যে এসব রঙই নেই!
ছবি: Bill Holsten
সাজগোজ
গবেষকেরা দেখেছেন, যে প্রজাতির পাখি আকারে যত বড় হয়, সেটি তত বেশি রঙে স্ত্রী পাখির কাছে শোভা পায়৷
ছবি: Bill Holsten
প্রেম নিবেদন এত কঠিন!
কিছু পুরুষ পাখিকে স্ত্রী পাখিগুলোকে প্ররোচিত করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়৷ বিশেষ ভঙ্গিমায় লেজ কাঁপানো, নাচানাচি করা এমনকি ডানাগুলোকে তুলোর বলের মেলেও ধরতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Schulze
অনন্য ময়ূর
কথিত আছে বৃষ্টি হলে ময়ূর নেচে ওঠে৷ আসলে পুরুষ ময়ূর স্ত্রী ময়ূরকে আকর্ষণ করতে ডানা মেলে৷ ফলে পুরুষ ময়ূর যত বেশি রঙ ধারণ করে স্ত্রী ময়ূরগুলো ততটাই ফ্যাকাশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U.Anspach
শকুনের রাজা
এই সুন্দর শকুনগুলো দক্ষিণ অ্যামেরিকাতে পাওয়া যায়৷ এগুলোর ডানাগুলো কালো, সাদা এবং বাদামি রঙের হলেও মাথা ও ঠোট রঙিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Lopez
এত বড় ঠোট!
হর্নবিল বা ধনেশের ঠোট খুব বড়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের ঠোটগুলো হলুদ, লাল ও সাদা রঙের মিশেলে হয়৷ এই পাখির ঠোটগুলো অনন্য হওয়ার কারণে প্রায়ই শিশুদের কার্টুনে এর উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Jensen
চিংড়ি খেয়ে চিংড়ির রং!
ফ্লেমিংগো পাখি চিংড়ি খেয়ে বেঁচে থাকে৷ জেনে অবাক হবেন যে, চিংড়ি খেতে খেতে এই পাখিটি চিংড়ির রঙ ধারণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Hiekel
রঙিন মায়না
ময়না পাখির বেশিরভাগ অংশ কালো বা বাদামী বর্ণের হলেও পূর্ব আফ্রিকায় বিভিন্ন ধরণ ও রঙের ময়না পাওয়া যায়৷