ইউক্রেনের পুর্বাঞ্চলের লুহানস্ক অঞ্চল দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া৷ দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরজেই সোইগু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কাছে লুহানস্ক দখলের খবর জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স থেকে এ খবর জানানো হয়৷
প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য লুহানস্ক দখলকে বর্নণা করেছেন এইভাবে যে, ‘‘এ অঞ্চলটিকে কিয়েভের অর্থাৎ ইউক্রেনের শাসন থেকে মুক্ত করা হয়েছে৷'' লুহানস্কের ইসেচানস্ক শহরের দখলের পর এমন ঘোষণা দেয় রাশিয়া৷
তবে ইউক্রেন অবশ্য রাশিয়ার এ দাবির সতত্যা নিশ্চিত করেনি৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইসিচানস্কে নিজেদের অবস্থার ধরে রাখার জোরালো চেষ্টা করে যাচ্ছিল ইউক্রেনীয় সেনারা৷
ইউক্রেনের পুর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত লুহানস্ক৷ ইউক্রেনে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হলে লুহানস্ক ও দনেৎস্ক দখলের চেষ্টা চালায় রাশিয়ার সেনারা৷
রাশিয়ান সেনাদের সঙ্গে মিলে এ অঞ্চলের বিদ্রোহীরাও ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিদ্রোহীরা অবশ্য ২০১৪ সালে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই এ অঞ্চলে সরব ছিল৷
রোববার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, রাশিয়ার সেনা ও তাদের মিত্ররা ইসিচানস্ক শহরের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে৷
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার-এর বিশ্লেষকরা এক বিবৃতিতে জানায়, সম্ভবত ইসিচানস্ক শহর থেকে ইউক্রেনের সেনাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷ এর পরে রাশিয়ান সেনারা শহরটির দখল নেয়৷
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি৷ নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মোকাবিলা করছে ইউক্রেন৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: MOHAMMED ZAATARI/AA/picture alliance
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Tass/imago images
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Russian Defense Ministry via AP/picture alliance
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
ছবি: Mikhail Voskresenskiy/SNA/imago images
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: United Archives International/imago images
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Emrah Yorulmaz/AA/picture alliance
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
রাশিয়ান সেনারা যে লুহানস্ককে ঘিরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে সে বিষয়টি আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল৷
অঞ্চলটি পুরোপুরি দখলের বিষয়ে রাশিয়ার ঘোষণা আসার আগেই, লোহানস্কের গভর্নর সেরহি গিদাই টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানান, ‘‘লুহানস্ককে ঘিরে রাশিয়ান সেনারা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে৷ তারা নিষ্ঠুরভাবে শহরটিতে আক্রমণ করছে৷’’
আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জেলেনস্কির
এদিকে যুদ্ধে আক্রান্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি৷
রোববার দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, দখলদাররা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্গঠনই নয়, ইউক্রেনের মানুষের জন্য নতুন করে সবকিছু করতে হবে৷ আর এর মানে হলো এই মুহূর্তে ইউক্রেনে মোটা অংকের বিনিয়োগ প্রয়োজন৷
উল্লেখ্য ইউক্রেনের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার সুইজারল্যান্ডে দুইদিনের এক আলোচনায় বসছেন পশ্চিমাদেশগুলোসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের নেতারা৷