লেখকের টাকায় বই প্রকাশের হিড়িক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯বইমেলায় যে এতো নতুন বই প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে, তার অধিকাংশেরই মান প্রশ্নসাপেক্ষ৷ ‘‘এতো বই, কিন্তু পড়ার মতো কয়টি?'' – এ প্রশ্নটি উত্থাপন করতে শোনা যায় অনেককেই৷ এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, যে অনেকগুলো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে – যারা নতুন লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই প্রকাশ করে৷ বই প্রকাশের ক্ষেত্রে টাকাটাই তাদের কাছে মুখ্য বিষয়৷ লেখার মানের বাছ-বিচারের কোনো চেষ্টা বা প্রবণতা তাদের নেই৷ এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও নিজের টাকায় বই প্রকাশের হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
অমর একুশে বইমেলায় নিজের একটি বই, যদি তা হয় প্রথম বই, তাহলে সেটা প্রকাশের জন্য নবীন কবি-লেখকদের মধ্যে এক ধরণের প্রণোদনা কাজ করে৷ দুটি প্রক্রিয়ায় তাদের বই প্রকাশও হয়ে যায়৷ কেউ কেউ ছুটে যান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছে এবং প্রকাশনার ‘খরচ'এর টাকা তুলে দিয়ে বই বের করেন৷ আবার কেউ ছাপাখানায় গিয়ে নিজেই কোনো প্রকাশনা সংস্থার নাম দিয়ে বইটি বের করে ফেলেন৷ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই টাকার বিনিময়ে বই বের করে দেয়ার জন্য ‘দোকান' খুলে বসেছেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে টাকার বিনিময়ে বইগুলো সে প্রতিষ্ঠানের নামেই বের করেন৷ আবার অনেক বড়-বড় প্রকাশনা সংস্থা নিজেদের সুনামকে পুঁজি করে শৌখিন লেখকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্য আদায় করে থাকে৷ নবীন লেখকদের কবিতা, ছড়া, উপন্যাস জাতীয় বই প্রকাশের জন্য সাধারণত লেখকের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়৷
জানা গেছে, এক ধরণের প্রকাশক আছেন যাঁরা নতুন লেখকদের সাথে প্রতারণা করেন৷ লেখকদের কাছে টাকা নিয়ে বই বের করেন এই শর্তে, যে লেখককে দুই থেকে তিন শ' বই দিয়ে দেবেন – বাকি বই তিনি বিপণন করবেন৷ কিন্তু তিনি লেখকদের দেয়ার কপি এবং মেলার জন্য কয়েক কপির বাইরে আর কোনো কপি না ছেপে ওই টাকাও মেরে দেন৷ এঁরা ৪৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের জন্য ২০ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন৷ বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলে টাকার অংক বেড়ে যায়৷ সব নবীন লেখকের বইই যে টাকার বিনিময়ে প্রকাশিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়৷ অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থাও রয়েছে যারা তরুণ লেখকদের বইও প্রকাশ করে থাকে৷ ইতিহাস কিংবা সিরিয়াস কোনো বিষয় হলে এবং তা প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হলে নবীন লেখকদের বইও অনেক প্রকাশক দায়িত্ব নিয়ে বের করেন৷