সরকার গঠন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার না করলে লেবাননের আইন প্রণেতাদের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবরোধ আরোপ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস৷
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে দেশটি বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে৷
প্রায় এক বছর ধরে লেবাননে কোন নির্বাচিত সরকার নেই৷ অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে চলছে দেশ৷ এরমধ্যে লেবানন পড়েছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে৷ গত বছরের আগস্টে বৈরুতের বিস্ফোরণ এই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে৷
বিস্ফোরণে ‘পঙ্গু’ এক পরিবারের গল্প
৪ আগস্ট বৈরুতে বিস্ফোরণে মারা যান ১৭৯ জন, আহত হন ৬০০০ জন৷ নিহত, আহতদের পরিবারের এখন কী অবস্থা তা বুঝতে ছবিঘরে দেখুন আদেলের পরিবারের জীবন...
ছবি: Reuters/H. McKay
ধনী থেকে গরিব
এক গুদামে রাখা দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যায় বৈরুতের একটা অংশ৷ ধ্বংস হয়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত৷হঠাৎ পথে বসে যায় অনেক পরিবার৷ অনেকেই এখন আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে আশ্রিত৷
ছবি: Reuters/M. Azakir
আদেলের পরিবার
রিটা ফারাজ ওঘলোর বাড়িও ধ্বংস হয়ে যায় বিস্ফোরণে৷ তার স্বামী আদেলের একটা পা ক্ষতবিক্ষত৷ চিকিৎসার খরচ বহণ করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে৷ স্বামী, দুই সন্তান, মা, সৎ বাবা আর এক বোনকে নিয়ে খুব কষ্টে কাটছে রিটার জীবন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
যা ঘটেছিল
৪ আগস্টের বিস্ফোরণের সময় আদেল ছিলেন রাস্তায়৷ হঠাৎ বিকট একটা শব্দ,আকাশ ঢেকে যেতে লাগল ধোঁয়ায়৷ আদেল পড়ে গেলেন রাস্তায়৷ দেখলেন ডান পা-টা ক্ষতবিক্ষত৷ চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘বাঁচাও, বাঁচাও৷’’ কিন্তু অনেকে এগিয়ে এলেও আদেলের পায়ের অবস্থা দেখে ভয়ে চলে যাচ্ছিলেন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা
এখন কেমন আছেন জানাতে গিয়ে আদেল বললেন, ‘‘আর ওষুধে কাজ হচ্ছে না৷ তাই এখন ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছি৷ মাঝে মাঝে পায়ে নিজেই আলতো করে আঘাত করি৷ তারপর ব্যথায় কাঁদতে শুরু করি৷মাঝে মাঝে আবার পা-কে বলি, পাঁচ মিনিটের জন্য (ব্যথা থেকে) একটু মুক্তি দাও৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
বাবার মতো হবে না তো!
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবানন যুদ্ধে পা হারিয়েছিলেন আদেলের বাবা৷ আদেলের খুব মনে পড়ে বাবার কথা, ‘‘আমার বাবার পঙ্গুত্ব দেখে দেখে বড় হয়েছি আমি৷ তার হাতেও ব্যথা ছিল৷ আমার মতো বাবার পায়েও স্ক্রু লাগানো ছিল৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
দায়ী সরকার
লেবাননের অধিকাংশ মানুষের মতো আদেল-রিটার পরিবারও ৪ আগস্টের বিস্ফোরণের জন্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ আদেলের মতে, ‘‘তারা (সরকার) আসলে দায়িত্ব নেয়ার উপযুক্তই নয়৷ তারা তো কখনো নিজেদের মানুষকে, দেশকে রক্ষা করেনি৷ তারা শুধু নিজেদেরই রক্ষা করেছে এবং এক দল গুন্ডা তাদের সমর্থন দিচ্ছে৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
6 ছবি1 | 6
নয় মাস প্রচষ্টার পরও সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ায় গত মাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেছেন৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, সরকার গঠন বা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কোন দিক থেকেই লেবাবননে কোন অগ্রগতি নেই৷ বৈরুত বিস্ফোরণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে মাস এটিকে দেশটির আইন প্রণেতাদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন' আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন৷
এদিকে গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে৷ পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে লেবাননের রাজনৈতিক নেতাদের উপর অবরোধ আরোপের সুযোগ রাখা হয়েছে সেখানে৷
রাজনৈতিক নেতাদের উপর চাপ প্রয়োগে ইউরোপের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে অভিহিত করেন মাস৷ তবে জার্মানির কূটনীতিকরা এখনও লেবাননের নাগরিক সমাজকে সমর্থন ও মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে৷
লেবাননের অর্থনৈতিক সংকট
গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে দুই হাজার ৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ এই বিস্ফোরণে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের গায়ে আরো বড় ধাক্কা লাগে৷ পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে বিদ্যুত ও জ্বালানি চাহিদাও পূরণ সম্ভব হচ্ছে না এখন৷ গত বছর দেশটি ঋণ খেলাপিও হয়েছে৷
গত ১২ মাসে স্থানীয় মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ডের দরপতন হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাংক জুলাইতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, লেবাননের অর্থনীতির আকার চলতি বছর আরো দশ ভাগ কমে যেতে পারে৷