দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন লেবাননের সংসদের স্পিকার নাবিহ বেরি৷ বাড়ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা৷
বিজ্ঞাপন
শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবোল্লাহর ঘনিষ্ঠ নাবিহ বেরি সংসদে উপস্থিত ব্যক্তিদের জানান যে, নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া বর্তমানে একেবারেই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ দেশের অবস্থা ডুবন্ত জাহাজের মতো, যাকে উদ্ধার করতে প্রয়োজন কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ৷
বিভিন্ন দেশের কাছে বাড়তে থাকা দেনা ও আর্থিক মন্দার পরিবেশে লেবাননে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ৷ ২৯ অক্টোবর জনগণের চাপে পদত্যাগ করেন তিনি৷
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
রবিবার বাড়তে থাকা জনরোষের মধ্যে দেশের ব্যাংকগুলি জানায় যে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছে তারা৷ সপ্তাহে ১ হাজার ডলারের বেশি অর্থ তুলতে পারবেন না কেউ৷ পাশাপাশি কেউ জরুরি খরচ ছাড়া বড় অঙ্কের লেনদেন করতে পারবেন না বলেও জানানো হয়েছে৷ ব্যাংকের কর্মচারীরাও ধর্মঘটে রয়েছেন৷
নতুন সরকার কত দূর?
হেজবোল্লাহ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন৷ এই হেজবোল্লাহ ও স্পিকার বেরি দুজনেই চাইতেন সরকার চালান আল-হারিরি৷ কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না৷
উল্লেখ্য, লেবাননের রাষ্ট্রকাঠামো অনুযায়ী, একজন সুন্নি মুসলিম ব্যক্তিই কেবল লেবাননের প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে পারেন৷ সাবেক অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ সাফাদির প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তিনি তা নাকচ করে দেন৷ তাই নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেমে রয়েছে৷ সামনে নেই কোনো নির্দিষ্ট প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী৷
এদিকে, ইরান-ঘনিষ্ঠ হেজবোল্লাহ জানিয়েছে যে, প্রতিবাদী গোষ্ঠীদের সাথে ‘রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ খুঁজছে তারা৷ ফলে, কী হবে লেবাননের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা৷