লেবাননে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না হেজবোল্লাহ ও তাদের সমর্থক দলগুলি। সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন থেকে সামান্য দূরে তারা।
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনো দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
কী ফলাফল হয়েছে
১২৮ সদস্যের পার্লামেন্টে হেজবোল্লাহ ও তার সহযোগী দলগুলি ৬২টি আসন জিতেছে। গতবার তারা জিতেছিল ৭১টি কেন্দ্রে। ফলে অল্পের জন্য তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
২০২০-র বৈরুত বিস্ফোরণ ও করোনার ফলে দেশের অর্থনীতি বেহাল হওয়ার পর এই প্রথম নির্বাচন হলো লেবাননে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শিয়াদের জন্য সংরক্ষিত আসনে হেজবোল্লাহ ও তার সহযোগী দলগুলি ২৭টি আসনে জিতেছে। কিন্তু যেগুলি শিয়াদের জন্য সংরক্ষিত নয়, সেখানে ভালো ফল করতে পারেনি তারা। তাদের বিরোধী এবং সৌদি ও অ্যামেরিকাপন্থি ক্রিশ্চান দলগুলি ২০টি আসনে জিতেছে। হেজবোল্লাহপন্থি ফ্রি প্যাট্রিওটিক মুভমেন্ট পেয়েছে ১৮টি আসন। সংস্কারপন্থি নতুন দল ফোর্স ফর চেঞ্জ পেয়েছে ১২টি আসন।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
নতুন প্রার্থীরা জিতেছেন
প্রতিষ্ঠিত দল ও চেনামুখের প্রতি আকর্ষণ কিছুটা হারিয়েছেন লেবাননের ভোটদাতারা। গত দুই বছর ধরে লেবাননের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। জাতিসংঘের হিসাব, লেবাননের চারভাগের মধ্যে তিনভাগ মানুষই খুব গরিব।
এই অবস্থায় একেবারে জনগণের মধ্যে থেকে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে আসা বিরোধী প্রার্থীরা জিতেছেন।
এবার নির্বাচনে অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল, হেজবোল্লাহের হাতে যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আছে, তা থাকা উচিত কি না।
এখন প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচন কী করে হবে? রীতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চান, প্রধানমন্ত্রী সুন্নি মুসলিম এবং স্পিকার শিয়া মুসলিম হন।