সোমবার লেবাননে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। সরকারের দায়িত্ব নিতে পারেন মুস্তাফা আবিদ।
বিজ্ঞাপন
সব ঠিক থাকলে লেবাননের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মুস্তাফা আবিদ। রাজনৈতিক মহলে তত পরিচিত না হলেও, কূটনৈতিক মহলে আবিদ জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের কূটনৈতিক পদ সামলেছেন তিনি। সোমবারই তাঁর মনোনয়নের কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
রোববার লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের একটি দল আলোচনা করে মুস্তাফা আবিদকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন। তাঁদের বক্তব্য, আবিদ দ্রুত ক্ষমতা গ্রহণ করে, নতুন মন্ত্রিসভা তৈরি করে বৈরুতের সংস্কার কাজে হাত দিন। কিছু দিন আগে বৈরুত বন্দরের একটি গুদামে বিস্ফোরণের পর কার্যত গোটা শহরটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। ১৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তারই মধ্যে সরকার বিরোধী বিক্ষভে উত্তাল হয়ে ওঠে বৈরুত সহ গোটা লেবানন। হাসান দিয়াবের সরকারের উপর চাপ এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাঁর সঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিসভার বহু সদস্য। বৈরুতের রাজনৈতিক অলিন্দে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনও মুখই এত দিন পর্যন্ত সামনে আসেনি।
বৈরুত বিস্ফোরণ : দ্রোহে, শোকে এক সপ্তাহ
বৈরুত বিস্ফোরণের সপ্তাহ পূর্তিতে প্রজ্বলিত মোমবাতি আর প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ফেস্টুন হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ, শোকার্ত মানুষ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/H. McKay
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
বৈরুতের এক গুদামে রাখা রাসায়নিক বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত অন্তত ১৭১ জন নিহত, ছয় হাজারের বেশি আহত এবং তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বিক্ষোভ তীব্রতর
আগে থেকেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল লেবাননে৷ তবে ৪ আগস্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বিক্ষোভ তীব্রতর হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, বিস্ফোরণের জন্য সরকারের গাফলতি এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি দায়ী৷ এ কারণে সরকারের পদত্যাগের দাবিও তোলেন তারা৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
পদত্যাগের হিড়িক
বিক্ষোভের মুখে দেশ পরিচালনায় নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব ও অন্তত তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Azakir
বিস্ফোরণের সপ্তাহ পূর্তি
১১ আগস্ট, মঙ্গলবার বৈরুত বিস্ফোরণের এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়৷ সপ্তাহ পূর্তিতে প্রজ্বলিত মোমবাতি আর প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ফেস্টুন হাতে রাস্তায় নামেন ক্ষুব্ধ, শোকার্ত মানুষ৷ ছবিতে বিস্ফোরণে স্বজন হারানো দু’জনের কান্না৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বিক্ষুব্ধ জনতা
মঙ্গলবার বৈরুত বন্দর এলাকায় বিক্ষুব্ধ, শোকার্ত জনতার স্রোত নামে৷ ৪ আগস্ট সেখানেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
মোমবাতি জ্বালানো
বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন এক নারী৷
ছবি: Reuters/H. McKay
‘খুনী সরকার’
এক বিক্ষুব্ধ তরুণের হাতে প্ল্যাকার্ড, সেখানে লেখা, ‘‘আমার সরকার আমার মানুষদের হত্যা করেছে৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
অশ্রুসিক্ত নান
একক গির্জার নানরাও অংশ নিয়েছেন বিক্ষোভ আর শোক মিছিলে৷ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাদের একজন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
গান শেষ...
একজনের হাতের প্ল্যাকার্ডে বিস্ফোরণে নিহত প্রিয়জনের ছবি, ছবির ওপরে লেখা ‘‘গান শেষ হয়েছে, তবে সুর এখনো বাজছে... পরপারে শান্তিতে থাকো৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
পতাকায় শোক
মঙ্গলবার বিস্ফোরণ স্থলে উড়েছে এই পতাকা৷ নিহতদের প্রতি শোক জানাতে লেবাননের এই পতাকাতেও দেয়া হয়েছে কালো দাগ৷
ছবি: Reuters/A. Taher
10 ছবি1 | 10
বিশেষষজ্ঞদের বক্তব্য, মুস্তাফার প্রধানমন্ত্রী হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের যে গোষ্ঠী মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন করেছে, লেবাননের রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব সর্বাধিক। সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত এই গোষ্ঠীর সব চেয়ে বেশি সাংসদ আছে দেশে। ওই সাংসদরাই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। এ ছাড়াও হেজবোল্লাহও নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানাবে বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্য দিকে, জার্মানির দূতাবাস নতুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে সোমবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া খুব বেশি সমস্যার হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। যদিও অতীতে এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সময় লেগেছে।
কেন তারা লেবাননকে ফ্রান্সের অধীনে দেখতে চান?
আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননকে ফ্রান্সের অধীনে দেখতে চেয়ে অনলাইনে একটি পিটিশন শুরু হয়েছে৷ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার জন এতে সাক্ষর করেছেন৷ কিন্তু কেন?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Malla
সরকারবিরোধী আন্দোলন
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের পর এখন লেবাননের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷ তাই গত অক্টোবরে সে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়৷ আর্থিক দুরবস্থার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Malla
অনলাইন পিটিশন
মঙ্গলবার বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের পর বুধবার কমিউনিটি পিটিশন ওয়েবসাইট avaaz.com-এ একটি পিটিশন শুরু হয়৷ ‘লেবাননকে আগামী ১০ বছরের জন্য ফ্রান্সের অধীনে নিন’ শীর্ষক এই পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘‘লেবাননের কর্মকর্তারা দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন৷... তাই আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু পরিচালনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে লেবাননের ফ্রান্সের অধীনে যাওয়া উচিত৷’’
ছবি: Reuters/M. Azakir
মাক্রোঁর সফর
১৯২০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত লেবানন ফ্রান্সের অধীনে ছিল৷ মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ লেবানন সফরে যান৷ সেখানে বৈরুতের বাসিন্দারা তার কাছে লেবাননের নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কারণ তুলে ধরেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/B. Hussein
মাক্রোঁর মন্তব্য
ফরাসি প্রেসিডেন্ট লেবাননের বাসিন্দাদের জানান, তিনি লেবাননের নেতাদের কাছে ‘একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ প্রস্তাব করবেন৷ এরপর ১ সেপ্টেম্বর আবারও লেবাননে আসবেন৷ এই সময়ের মধ্যে লেবাননের নেতারা প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করলে তার দায়িত্ব তিনি নেবেন বলে বৈরুতের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন মাক্রোঁ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/B. Hussein
আন্তর্জাতিক সম্মেলন
মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন দেশ লেবাননে সহায়তা পাঠাচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Nohra
সংস্কারের ডাক
অর্থনীতি ঠিক করতে ২০ বিলিয়ন ডলার চায় লেবানন৷ এ লক্ষ্যে মে মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল৷ কিন্তু সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় আলোচনা স্থগিত আছে৷ ফ্রান্স, জার্মানিও লেবাননে রাজনৈতিক সংস্কারের উপর জোর দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Hussein
6 ছবি1 | 6
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, লেবাননের নতুন রাজনৈতিক অঙ্কে ফ্রান্সের যথেষ্ট প্রভাব আছে। বস্তুত, বৈরুতে বিস্ফোরণের পরে সবার প্রথম সেখানে পৌঁছেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। গত সপ্তাহেও তিনি বৈরুতে দ্বিতীয়বার সফর করেন। প্রথমবারেই মাক্রোঁ বলেছিলেন, বৈরুতে নতুন সরকার আসা দরকার। নতুন সরকারই পারে দেশের সংস্কার করতে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় সফরের পরেই প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে মুস্তাফা ভেসে ওঠেন রাজনৈতিক আবহে।
লেবাননের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। করোনার আগে থেকেই দেশের জনগণ অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছে। করোনা-কালেও দেশে একই কারণে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তারই মধ্যে বৈরুত বিস্ফোরণ অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও নানা অশান্তি রয়েছে। সীমান্তেও ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী পক্ষে কাজ করা খুব সহজ হবে না। তবে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের ধারণা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইউরোপের বৃহৎ শক্তি, বিশেষত ফ্রান্সের অঙ্গুলিহেলনেই কাজ করতে হবে মুস্তাফাকে।