লেবাননের রাজনৈতিক সিস্টেমে সংস্কার সম্ভব নয়৷ তবে এখন সংস্কার করতে চাপ দিচ্ছে ফ্রান্স৷ দেশটির নেতৃত্বে দ্রুত পরিবর্তন না আনলে কিছু নিষেধাজ্ঞার জন্য অবশ্যই তৈরি থাকতে হবে, জানিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
বিজ্ঞাপন
বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের চার সপ্তাহ পরে রাজনৈতিক নেতৃত্বে সংস্কার করার জন্য লেবাননের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ অক্টোবরের মধ্যে সংস্কার ব্যবস্থা চালু করলেই লেবাননকে দীর্ঘ মেয়াদী আন্তর্জাতিক সহায়তা দেয়া হবে, বৈরুত সফরকালে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি নতুন সরকার গঠন করা হচ্ছে বলে ভূমধ্যসাগরীয় দেশটির রাজনীতিবিদেরা মনে করছেন৷ জার্মানিতে লেবাননের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তফা আবিদকে লেবাননের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করাকে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো৷
লেবাননে মৌলিক পরিবর্তন আনার জন্য আগামী কয়েক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তা না করা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পলিটিকোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন মাক্রোঁ৷
লেবানন গত কয়েক মাস ধরে গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে৷ একদিকে করোনা মহামারি এবং অন্যদিকে বৈরুত বিস্ফোরণের ফলে লেবাননের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে৷
এনএস/কেএম (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
বিস্ফোরণে ‘পঙ্গু’ এক পরিবারের গল্প
৪ আগস্ট বৈরুতে বিস্ফোরণে মারা যান ১৭৯ জন, আহত হন ৬০০০ জন৷ নিহত, আহতদের পরিবারের এখন কী অবস্থা তা বুঝতে ছবিঘরে দেখুন আদেলের পরিবারের জীবন...
ছবি: Reuters/H. McKay
ধনী থেকে গরিব
এক গুদামে রাখা দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যায় বৈরুতের একটা অংশ৷ ধ্বংস হয়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত৷হঠাৎ পথে বসে যায় অনেক পরিবার৷ অনেকেই এখন আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে আশ্রিত৷
ছবি: Reuters/M. Azakir
আদেলের পরিবার
রিটা ফারাজ ওঘলোর বাড়িও ধ্বংস হয়ে যায় বিস্ফোরণে৷ তার স্বামী আদেলের একটা পা ক্ষতবিক্ষত৷ চিকিৎসার খরচ বহণ করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে৷ স্বামী, দুই সন্তান, মা, সৎ বাবা আর এক বোনকে নিয়ে খুব কষ্টে কাটছে রিটার জীবন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
যা ঘটেছিল
৪ আগস্টের বিস্ফোরণের সময় আদেল ছিলেন রাস্তায়৷ হঠাৎ বিকট একটা শব্দ,আকাশ ঢেকে যেতে লাগল ধোঁয়ায়৷ আদেল পড়ে গেলেন রাস্তায়৷ দেখলেন ডান পা-টা ক্ষতবিক্ষত৷ চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘বাঁচাও, বাঁচাও৷’’ কিন্তু অনেকে এগিয়ে এলেও আদেলের পায়ের অবস্থা দেখে ভয়ে চলে যাচ্ছিলেন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা
এখন কেমন আছেন জানাতে গিয়ে আদেল বললেন, ‘‘আর ওষুধে কাজ হচ্ছে না৷ তাই এখন ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করছি৷ মাঝে মাঝে পায়ে নিজেই আলতো করে আঘাত করি৷ তারপর ব্যথায় কাঁদতে শুরু করি৷মাঝে মাঝে আবার পা-কে বলি, পাঁচ মিনিটের জন্য (ব্যথা থেকে) একটু মুক্তি দাও৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
বাবার মতো হবে না তো!
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবানন যুদ্ধে পা হারিয়েছিলেন আদেলের বাবা৷ আদেলের খুব মনে পড়ে বাবার কথা, ‘‘আমার বাবার পঙ্গুত্ব দেখে দেখে বড় হয়েছি আমি৷ তার হাতেও ব্যথা ছিল৷ আমার মতো বাবার পায়েও স্ক্রু লাগানো ছিল৷’’
ছবি: Reuters/H. McKay
দায়ী সরকার
লেবাননের অধিকাংশ মানুষের মতো আদেল-রিটার পরিবারও ৪ আগস্টের বিস্ফোরণের জন্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ আদেলের মতে, ‘‘তারা (সরকার) আসলে দায়িত্ব নেয়ার উপযুক্তই নয়৷ তারা তো কখনো নিজেদের মানুষকে, দেশকে রক্ষা করেনি৷ তারা শুধু নিজেদেরই রক্ষা করেছে এবং এক দল গুন্ডা তাদের সমর্থন দিচ্ছে৷’’