তুরস্ক থেকে উদ্বাস্তুরা নৌকায় করে ইজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে আসেন৷ শুধু সেপ্টেম্বর মাসে এ ভাবে জলে ডুবে মারা গেছেন ৮০ জন৷ ওদিকে ইউরোপ এখনও উদ্বাস্তু সংকট সমাধানের পন্থা খুঁজছে৷
বিজ্ঞাপন
ছোট ছোট রবারের বোটে করে সঙ্কীর্ণ মিউতিলিনি প্রণালী পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসার প্রচেষ্টায় গত এক মাসে যে ৮০ জন উদ্বাস্তু প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কিছু কম ছিল না৷ গতকালও গ্রিক উপকূলরক্ষীরা যে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে ছিল একজন মহিলা ও দু'টি শিশুর লাশ৷
ওদিকে সপ্তাহান্তেই ঘোষণা করা হয় যে, দ্বীপের কবরখানায় আর জায়গা নেই, কাজেই কর্তৃপক্ষ একটি রেফ্রিজারেটেড কনটেনারে আরো ৫০টি লাশ রাখছেন৷ গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস আজ বৃহস্পতিবার লেসবসে যাচ্ছেন৷ গতকালই তিনি মন্তব্য করেন যে, ইউরোপীয় নেতৃবর্গ যে এই ধরনের নৌকাডুবি ও তার সঙ্গে জড়িত প্রাণহানি বন্ধ করতে পারেননি, সেজন্য তিনি ‘‘লজ্জিত''৷
হাঙ্গেরি সার্বিয়ার সঙ্গে তার সীমান্ত বন্ধ করে দেবার পর তথাকথিত বলকান রুটে উদ্বাস্তুর স্রোত ক্রোয়েশিয়ার দিকে যেতে শুরু করেছে৷ অস্ট্রিয়াও এবার হাঙ্গেরি সীমান্তে বাছাই নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে৷
দীর্ঘ পথ
তুরস্কের এডির্নে শহরের কাছে সিরীয় উদ্বাস্তুরা ছোটদের কোলে করে পায়ে হেঁটে চলেছেন গ্রিক সীমান্তের দিকে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
সব বাধা পার হয়ে
গ্রিস আর ম্যাসিডোনিয়ার সীমান্তে গেভগেলিয়া শহরে তারের বেড়ার ধারে এক অভিবাসী শিশু৷ শুধুমাত্র ১৪ই সেপ্টেম্বরের রাত্রেই সাড়ে সাত হাজারের বেশি উদ্বাস্তু ম্যাসিডোনিয়ায় ঢোকেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Atanasovski
প্রবেশ নিষেধ
১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরির সীমান্ত চার মিটার উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঢাকা৷ শত শত উদ্বাস্তু সীমান্ত কেন্দ্রে নাম লেখাতে পারেন বটে, আবার ক্ষেত্রবিশেষে বহিষ্কৃতও হতে পারেন৷ বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হওয়ার সাজা তিন বছর অবধি কারাদণ্ড, কাঁটাতারের বেড়ার ক্ষতি করলে পাঁচ বছর৷
ছবি: DW/N. Rujević
সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদার হচ্ছে
অস্ট্রিয়া আর হাঙ্গেরির মধ্যে সীমান্তে অস্ট্রিয়ান তরফে হাইলিগেনক্রয়েৎস শহর৷ মঙ্গলবার রাত্রি থেকেই বাছাইভাবে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালু করার কথা ঘোষণা করে ভিয়েনা সরকার৷ স্লোভেনিয়া, ইটালি এবং স্লোভাকিয়ার সঙ্গে সীমান্তেও নাকি অনুরূপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হতে পারে, বলে জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: dpa
রেলস্টেশনে ভিড়
অস্ট্রিয়ার সালৎসবুর্গ শহরের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বাস্তুরা অপেক্ষা করছেন জার্মানিগামী ট্রেনের৷ রবিবার জার্মানি সাময়িকভাবে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় মিউনিখ রেলওয়ে স্টেশন – এবং শহরের উপর উদ্বাস্তু সমাগমের চাপ কমানোর আশায়৷ অবশ্য সোমবার সকালেই তা আবার তুলে নেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Gindl
মিউনিখে আরেক যাত্রার শুরু
মিউনিখ শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনে পথের খোঁজ দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা৷ ট্রেনের জানলার কাচে যে শিশুমুখ, সে-ই তো ভবিষ্যৎ...
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
বলকান রুট
উদ্বাস্তুর স্রোত এবার ক্রোয়েশিয়া হয়ে উত্তরে যাবার চেষ্টা করবে৷ তাদের গন্তব্য: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস কিংবা সুইডেনের মতো কোনো সমৃদ্ধ, স্বাগতিক দেশ৷
7 ছবি1 | 7
ইউরোপ অভিমুখে উদ্বাস্তুর স্রোত অব্যাহত৷ উদ্বাস্তুরা আসছেন তথাকথিত বলকান রুট ধরে৷ অপরদিকে উত্তর আফ্রিকা থেকে বোটে করে আসা বন্ধ হয়ে যায়নি৷ একটি নতুন রুট খুলেছে রাশিয়া হয়ে নরওয়ে অভিমুখে৷ হালে নারী ও শিশুদের আগমন লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ওদিকে শীত এসে পড়ল৷ তাছাড়া এই উদ্বাস্তুদের দেশান্তরী হবার প্রক্রিয়ায় বহু শিশু কোনোরকম নাগরিকত্ব ছাড়াই জন্মাচ্ছে – অথবা একটি নাগরিকত্ব হারাচ্ছে, অথচ তাদের অন্য কোনো নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থা ইউএনএইচসিআর টুইট করেছে যে, সারা বিশ্বে ‘‘প্রতি দশ মিনিটে একটি করে শিশু বিনা নাগরিকত্বে জন্মগ্রহণ করছে৷''
ইইউ-এর ‘রিলোকেশন প্ল্যান'
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা তাঁদের বহুঘোষিত ‘পুনর্বাসন পরিকল্পনা' যে আদৌ শুরু হতে পেরেছে, তাই নিয়েই খুশি, বিশেষ করে বুধবার, যখন প্রথম ৩০ জন উদ্বাস্তুকে বিমানযোগে গ্রিস থেকে লুক্সেমবুর্গ পাঠানো হয়৷ সেপ্টেম্বরে ইইউ দেশগুলি গ্রিস ও ইটালি থেকে এক লাখ ষাট হাজার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেয়৷ সে যাবৎ ইটালি থেকে সাকুল্যে ৮৬ জন ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে৷ পরিকল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে এই ব্যাপক ফারাক ‘দ্য গার্ডিয়ান' সহ অনেক পত্রিকারই নজর এড়ায়নি৷
খোদ সুইডেন এবার জানিয়েছে যে, তারা সুইডেন থেকে ইইউ-র অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বাস্তু ‘রিলোকেশন' করার অনুরোধ করবে, কেননা ‘‘আমরা যেভাবে এই সব মানুষদের গ্রহণ করতে চাই, সুইডেনের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়'' – বলেছেন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন৷
জার্মানির সমস্যা
জার্মানির প্রথম সমস্যা নিঃসন্দেহে এই যে, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, এমনকি পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, সেই সব উদ্বাস্তুদের কাছে জার্মানি হল তাদের ‘‘স্বপ্নের দেশ''৷ ওদিকে জার্মান জনগণের মধ্যে চাঞ্চল্য বাড়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে৷ তার কারণ অনুমান করা কঠিন নয়৷ ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট' লিখছে: ‘‘একশো বাসিন্দার একটি ছোট্ট জার্মান গ্রামকে ৭৫০ জন উদ্বাস্তুর বাসের ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে৷''
জার্মান সরকারও জানেন যে, এবার সক্রিয় হবার সময় এসেছে, কিন্তু সিডিইউ-সিএসইউ-এসপিডি জোট সরকারের মধ্যে এখন প্রতিটি দলের মনোভাব ও অবস্থান স্বতন্ত্র৷ বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও সিএসইউ প্রধান হর্স্ট সেহোফার সীমান্তে ট্র্যানজিট জোনের দাবিতে অনড় থাকার পর প্রধানমন্ত্রী ও সিডিইউ প্রধান আঙ্গেলা ম্যার্কেল যদি বা তাতে নিমরাজি হলেন – তো বেঁকে বসেছে এসপিডি দল: তারা চায় দেশের অভ্যন্তরে রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র৷
বুধবার আবার বাভেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হ্যারমান জানিয়েছেন যে, সিএসইউ দল সাংবিধানিক আদালতের এক সাবেক বিচারপতিকে খতিয়ে দেখতে বলেছে, বার্লিনের অভিবাসন নীতি সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাভেরিয়ার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করছে কিনা৷ অর্থাৎ উদ্বাস্তু নীতি নিয়ে সেহোফার-ম্যার্কেল বা সিএসইউ-সিডিইউ কোঁদল মেটেনি৷ তাছাড়াও বাকি থাকছে ইউরোপীয় কোঁদল৷ কাজেই জার্মানির ‘‘ডেয়ার স্পিগেল'' পত্রিকা তার ইংরেজি টুইটে বলেছে: ‘‘উদ্বাস্তু সমস্যা সামধানের জন্য বার্লিনের একটা দারুণ সমাধান আছে৷ কিন্তু তা শীঘ্র বাস্তবায়িত হবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই৷''
বার্লিনের কবরখানা
বার্লিনের ২২৪টি কবরখানায় সঙ্গীসাথীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটার মজাই আলাদা৷ আবার অনেকে যান এই আশ্চর্য শহরটির ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হতে৷
ছবি: B. von Brauchitsch
দেবদূতের ভিড়ে
বার্লিনের কবরখানাগুলির জন্য একটি আলাদা টুর গাইড লিখে ফেলেছেন ইতিহাসবিদ বরিস ফন ব্রাউকিচ৷ বিশ্বের আর কোনো বড় শহরে এতোগুলো কবরখানা নেই৷ কবর যেখানে আছে, সেখানে দেবদূতেরা থাকবেই৷ ছবির দুই দেবদূতকে দেখতে পাবেন বার্লিনের ‘মিটে’ এলাকার একটি কবরখানায়, যেখানে হেগেল-এর মতো দার্শনিক, ব্যার্টল্ট ব্রেশট-এর মতো নাট্যকার সমাহিত আছেন৷
ছবি: B. von Brauchitsch
যুদ্ধের স্মৃতি
বার্লিনেও বোমা পড়েছে, যুদ্ধ বেঁধেছে, গোলাগুলি চলেছে৷ কবরখানাগুলি তার ক্ষতচিহ্ন বহন করছে৷ মিটে এলাকার ডরোথেয়েনস্টাট-ফ্রিডরিখসভ্যার্ডার কবরখানার এই সমাধিসৌধটি পড়েছিল গোলাবর্ষণের মুখে৷ তার চিহ্ন আজও বর্তমান৷
ছবি: B. von Brauchitsch
পারিবারিক সমাধি
মরণে যে বাঁধন কাটে না৷ প্রেনৎসলাউয়ার ব্যার্গ এলাকার গেয়র্গেন-পারোকিয়াল কবরখানায় এই অসাধারণ কবরটি দেখা যাবে৷ কিন্তু বিপদ ঘনাচ্ছে অন্য দিক থেকে৷ কবরখানাটি পড়ে খুব দামি একটি আবাসিক এলাকায়৷ প্রোমোটারদের এদিকে নজর পড়তে আর ক’দিন?...
ছবি: B. von Brauchitsch
রোম্যান্টিক
বার্লিনের সবচেয়ে বিখ্যাত ইহুদি কবরখানাটি ভাইসেনজে এলাকায়, কিন্তু যুগপৎ প্রাচীনতম ও আজও ব্যবহৃত ইহুদি কবরখানাটিকে পাওয়া যাবে প্রেনৎসলাউয়ার ব্যার্গ এলাকার শ্যোনহাউজার অ্যালি-তে৷ এখানে সমাহিত মাক্স লিবারমান-এর মতো চিত্রকর, জিয়াকোমো মায়ারবেয়ার-এর মতো সঙ্গীতস্রষ্টা৷
ছবি: B. von Brauchitsch
ধ্বংসের মুখে
কবরখানার শত্রু অনেক৷ রোগভোগ, অকালমৃত্যু কমছে; সমাজে ধর্মের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে৷ ফলে বার্লিনের অনেক ঐতিহাসিক কবরখানা আজ বন্ধ হওয়ার মুখে৷ যদিও এর ফলে বার্লিনের ইতিহাসের একাংশ হারিয়ে যাবে – তা-তে প্রোমোটারদের কি আসে যায়?
ছবি: B. von Brauchitsch
সুইসাইড সেমেটারি
লোকমুখে ‘আত্মহননকারীদের কবরখানা’ নাম পেয়েছে গ্রুনেভাল্ড-ফর্স্ট এলাকার এই কবরখানাটি৷ যারা আত্মহত্যা করে, তাদের সাধারণত গির্জার কবরখানায় স্থান হয় না – কিন্তু এই কবরখানাটির ক্ষেত্রে গির্জা কর্তৃপক্ষ তেমন উচ্চবাচ্য করেননি৷ ছবিতে যে ক্রুশগুলি দেখা যাচ্ছে, সেগুলি রুশ বিপ্লবের পর হতাশ জারপন্থিদের কবর৷
ছবি: B. von Brauchitsch
রুশি, তুর্কি, বার্লিনবাসী
বার্লিনের ইতিহাস এক মিশ্র সংস্কৃতির ইতিহাস৷ তার একটি দৃষ্টান্ত হলো রাইনিকেনডর্ফ এলাকার এই রুশ সনাতনপন্থি কবরখানাটি৷ অপরদিকে জার্মানির সবচেয়ে পুরনো তুর্কি কবরখানাটি দেখতে পাওয়া যাবে নয়ক্যোলন এলাকার কলাম্বিয়াডাম-এর কাছে৷
ছবি: B. von Brauchitsch
বিভক্ত বার্লিন
শার্লটেনবুর্গ এলাকার ক্যাথলিক কবরখানাটি বার্লিন প্রাচীর গঠনের সময় পশ্চিম বার্লিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল৷ পূর্ব জার্মানির কর্তৃপক্ষ এই কবরখানাটির রক্ষণাবেক্ষণের কোনো প্রচেষ্টাই করেননি৷