একটি দেশের বা একটি জাতির আত্মপরিচয় তার লোকসংস্কৃতি৷ আর বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিই এ দেশের মূল সংস্কৃতির ভিত্তি৷ এখানকার সাহিত্য, জীবনবোধ, মুক্তিযুদ্ধ, জীবনাচরণ লোকসংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণ মানুষের ভাষা, জীবনবোধ, বিনোদন, সাহিত্য, পেশা – এ সব নিয়েই গড়ে ওঠে ‘লোকসংস্কৃতি'৷ এই সংস্কৃতির মধ্যে থাকে সহজিয়া সুর৷ কোনো কৃত্রিমতা থাকে না লোকসংস্কৃতিতে৷ এটা সহজাত, সহজিয়া আর স্বাভাবিক বহতা নদীর মতো৷ পোশাকি সংস্কৃতির বিপরীতে এক শক্তিশালী সোঁদা মাটির গন্ধ ভরা স্বকীয় সংস্কৃতি৷ এর কোনো বিনাশ নাই৷ আছে আধুনিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার উদারতার ইতিহাস৷ তাছাড়া এই সংস্কৃতির ভাষাও লোকজ৷ যাকে বলা হয় লোকভাষা৷ সাধারণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মুখে, কথায়, ভাষার ব্যবহারে, লেখায় এর প্রকাশ৷
গ্রামীণ জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্য, জীবনবোধের প্রকাশ৷ তাঁদের পোশাক, খাবার, প্রার্থনা, পূজা-পার্বণ, ফসল, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বাসস্থান, বাহন, জীবন সংগ্রাম, দ্বন্দ্ব, বিরহ – এ সবই লোকসংস্কৃতিকে রূপ দেয়৷ লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে তার সামগ্রিক প্রকাশ ঘটে৷ লোকগানে, কবিতায়, সাহিত্যে, উৎসবে, খেলাধুলাতেও প্রকাশ পায় লোকসংস্কৃতি৷
বাংলাদেশের কিছু লোকসংস্কৃতি
গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে বৈচিত্রময় সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে৷ কিন্তু এর অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে কালের হাওয়ায়৷ বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: M. M. Rahman
নৌকা বাইচ
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে শত শত বছরের ঐহিত্য হিসেবে এখনো টিকে আছে নৌকা বাইচ৷ সাধারণত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নদীনালা যখন পানিতে টইটম্বুর থাকে, সেসময়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়৷ নৌকা বাইচের সময় ঢোল ও করতালের সাথে সাথে মাঝি-মাল্লারা এক সুরে গান গেয়ে বৈঠা চালান৷
ছবি: M. M. Rahman
ষাঁড়ের লড়াই
অতীতে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় একটি শৌখিন একটি খেলা ছিল ষাঁড়ের লড়াই৷ ফসল তোলার পরে ফাঁকা মাঠে আয়োজন করা হতো জনপ্রিয় এ খেলাটির৷ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষেরা জড়ো হতেন শ্বাসরুদ্ধকর এ খেলা দেখতে৷ বর্তমানে এই শৌখিন এ খেলাটি বিলুপ্তির পথে৷ বাংলাদেশে অবশ্য খেলাটির আয়োজনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে৷
ছবি: M. M. Rahman
গরুর গাড়ির দৌড়
বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খেলা৷ ফসল তোলার পর কৃষকদের আনন্দ দিতে খালি মাঠে এ দৌঁড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ আর গরুর গাড়ি নিয়ে এ খেলায় অংশ নেন মূলত কৃষকরাই৷ রোমাঞ্চকর এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে গ্রামীণ মেলাও বসে৷
ছবি: M. M. Rahman
মোরগ লড়াই
গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা মোরগ লড়াই৷ বাংলাদেশ থেকে এ খেলাটি হারাতে বসলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় এখনো মোরগ লড়াইয়ের ঐতিহ্য টিকে রয়েছে৷
ছবি: M. M. Rahman
লাঠি খেলা
বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির একটি অংশ লাঠি খেলা৷ ঢোলের তালে নেচে নেচে আত্মরক্ষার নানান কৌশল দেখানো হয় লাঠি খেলার মাধ্যমে৷ একসময় রোমাঞ্চকর এ খেলাটি গ্রামাঞ্চরে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হতো৷ তবে এখন আর আগের মতো খেলাটির আয়োজন হয় না৷
ছবি: M. M. Rahman
সার্কাস
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো কিছু সার্কাসের আয়োজন হয়৷ তবে লোকসংস্কৃতির এই অনুষঙ্গটির এখন দুর্দিন বলা যায়৷ নানারকম শারীরিক কসরত, পশু-পাখির খেলা আর হাস্যরসের খোঁজে সার্কাস দেখতে অতীতে দলবেঁধে যেতেন গ্রামবাংলা মানুষেরা৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ নানা কারণে এ শিল্পটি এখন সংকটের মুখে৷
ছবি: M. M. Rahman
গ্রামীণ মেলা
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অন্যতম উপাদান গ্রামীণ মেলা৷ বাংলাদেশের সর্বত্রই এখনো প্রচুর মেলা বসে৷ গ্রামের পরিমণ্ডল অতিক্রম করে এখন শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে মেলার সংস্কৃতি৷ তবে হাজার বছরের পুরনো গ্রামীণ মেলা দিনে দিনেই জৌলুশ হারাচ্ছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বায়োস্কোপ
বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্য বায়োস্কোপ৷ রং-বেরঙের কাপড় পরে, হাতে ঝুনঝুনি বাজিয়ে গাঁয়ের মেঠোপথে এখন আর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় না বায়োস্কোপওয়ালার৷ খঞ্জনি আর খালি গলায় গাওয়া গানের তালে বাক্সের ভেতর বদলে যাওয়া ছবি দেখে এককালে গল্পের জগতে হারিয়ে যেত গ্রামবাংলার মানুষ৷ টেলিভিশন শত শত চ্যানেলের ভিড়ে বায়োস্কোপের এখন তাই হারাতে বসেছে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
যাত্রা-পালা
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে যাত্রাপালাও বেশ উল্লেখযোগ্য৷ তবে জঙ্গিবাদ আর অশ্লীলতার ছোবলে যাত্রাপালা এখন হারাতে বসেছে বাংলাদেশ থেকে৷ অতীতে শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গ্রামমাঞ্চলে যে যাত্রাপালা বসত নানা কারণে এখন আর তার দেখা মেলে না৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
লোকজ গান
বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে নানারকম লোকজ গান৷ ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, মারফতি, বাউলগান, গম্ভীরাসহ নানান লোকজ গানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
নকশিকাঁথা
বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে টিকে আসে নকশিকাঁথা৷ এখনো বাংলাদেশের যশোর, জামালপুরসহ গ্রাম বাংলার বিভিন্ন এলাকার ঘরে ঘরে তৈরি হয় নজরকাড়া নকশিকাঁথা৷ ঐতিহ্যবাহী নকশি কাঁথা এখন বাংলাদেশের গণ্ডি পেড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছ বিশ্ব দরবারেও৷
ছবি: M. M. Rahman
তাঁত শিল্প
একসময় ঢাকাই মসলিনের সুনাম ছিল বিশ্বজোড়া৷ মসলিন হারিয়ে গেলেও টিকে আছে ঢাকাই জামদানি৷ এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো টিকে আছে এই তাঁত শিল্প৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুমিল্লার খাদি, ঝালকাঠীর গামছা নরসিংদীর লুঙ্গি ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
আছে প্রবাদ-প্রবচন, খনার বচন, লোককথা৷ এরমধ্যে আছে প্রকৃতির কথা, ঋতুর কথা, ভালো-মন্দের কথা, জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় দিকের কথা৷ এ সবের সঙ্গে আছে বিজ্ঞানের সম্পর্ক, আছে যুক্তির সম্পর্কও৷ লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদানের রূপ-প্রকৃতির বিচার করে একে চারটি প্রধান ধারায় ভাগ করা হয়: বস্তুগত, মানসজাত, অনুষ্ঠানমূলক ও প্রদর্শনমূলক৷
গ্রামীণ জনপদের লোকসমাজ জীবনধারণের জন্য যেসব দ্রব্য ব্যবহার করে, তা বস্তুগত সংস্কৃতির উপাদান৷ যেমন বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, যানবাহন, সকল পেশার যন্ত্রপাতি, কুটিরশিল্প, সৌখিন দ্রব্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধপত্র ইত্যাদি৷
মৌখিক ধারার লোকসাহিত্য মানসজাত লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত৷ লোককাহিনি, লোকসংগীত, লোকগাথা, লোকনাট্য, ছড়া, ধাঁধা, মন্ত্র, প্রবাদ-প্রবচন প্রভৃতি গদ্যে-পদ্যে রচিত মৌখিক ধারার সাহিত্য৷
অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনমূলক লোকসংস্কৃতির মধ্যে লোকনাট্য, যাত্রা, নৃত্য ও খেলাধুলা প্রধান৷ বাউল, গম্ভীরা, জারি গানের সঙ্গে নাচ, সারি গানের সঙ্গে সারি নাচ, লাঠি খেলার সঙ্গে লাঠি নাচ, খেমটা গানের সঙ্গে খেমটা নাচ এবং ঘাটু গানের সঙ্গে ঘাটু নাচ ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ হোলির গীত, গাজীর গীত, মাগনের গীত, বিবাহের গীত, হুদমার গীত প্রভৃতি লোকসংস্কৃতির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ৷
‘বাংলাদেশে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে কেন্দ্র করেই লোকসংস্কৃতির উদ্ভব’
হস্তশিল্প লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ভুবন৷ এ সব হস্তশিল্পে মানুষের মেধা, নৈপুণ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়৷ যেমন নকশিকাঁথায় পায় শিল্পী মনের প্রকাশ৷ বেতশিল্প, বাঁশশিল্প, কাঠশিল্প, চামড়াশিল্প, বুননশিল্প সমৃদ্ধ করেছে লোকসংস্কৃতিকে৷ মসলিনের যুগ পেরিয়ে আজকের জামদানি লোকশিল্পেরই অবদান৷
সাধারণভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসরত ‘অক্ষরজ্ঞানহীন' ও ঐতিহ্যের অনুসারী বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ‘লোক' বলে অভিহিত করা হয়৷ এই ধরনের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, সমাজব্যবস্থা, বিশ্বাস-সংস্কার ও প্রথা-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিতে মিল আছে৷ মার্কিন লোককলাবিদ স্টিথ থমসন এই লোক-মানসিকতার অভিন্ন গতি-প্রকৃতি দেখিয়েছেন তাঁর গবেষণায়৷ বাংলার কৃষক ফসল তোলার সময় এক গোছা ধান মাঠ থেকে এনে ঘরের চালে ঝুলিয়ে রাখেন৷ একে বলা হয় ‘লক্ষ্মীর ছড়া'৷ বিশ্বের নানা দেশের কৃষকসমাজেও একই প্রথা চালু আছে৷ কোথাও তা ‘শস্যরানি', কোথাও ‘শস্যপুতুল', কোথাও বা ‘শস্যমাতা' নামে অভিহিত৷ তাই লোকসংস্কৃতির একটা বিশ্বজনীন ও সর্বকালীন রূপ আছে৷
লোকসংস্কৃতির গবেষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব মনে করেন, ‘‘সাধারণের জীবন ধর্মই হলো লোকসংস্কৃতি৷ আর বাংলাদেশে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে কেন্দ্র করেই লোকসংস্কৃতির উদ্ভব৷ গ্রামীণ জীবনের একটি যাত্রাপালা সহজ এবং সাধারণ জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ এটারই পোশাকি রূপ হলো নাটক৷ তাই সহজেই বলা যায় আধুনিক সংস্কৃতি তথা সাহিত্যের ভিত্তিই হলো লোকসংস্কৃতি বা লোকসাহিত্য৷''
‘লোকসংস্কৃতির নানা বিকৃত রূপ আমরা আজকাল দেখতে পাই’
তিনি বলেন, ‘‘পার্থক্যটি হলো ভাষার৷ লোকসংস্কৃতির ভাষা লোকজ বা আঞ্চলিক৷ লালন ফকির বা হাসন রাজার গান লোকগান৷ লোকজ ভাষার ব্যবহার আছে তাঁদের গানে৷ নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গানে কখনো কখনো আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার থাকলেও, সেটা প্রধান নয়৷ তাছাড়া লোকসাহিত্যে সাধারণের জীবন প্রাধান্য পায়৷ আধুনিক সাহিত্য কিন্তু সেখান থেকেই তার উপাদান নেয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে লোকসংস্কৃতিই এখনো প্রধান৷ এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি বরং বেড়েছে৷ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা একাডেমি থেকে লোকভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকাশ করেছেন ষাট-এর দশকে৷ গত পাঁচ-সাত বছরে বাংলা একাডেমি ৬৪ জেলার লোককথা, প্রবাদ, লোকসাহিত্যের ওপর ৬৪টি বই প্রকাশ করেছে৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল বিশ্ববিদ্যায় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফোকলোর' বিভাগ চালু হয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘আমাদের লোকসংস্কৃতির চর্চা আরো বাড়াতে হবে৷ এই চর্চাই পারে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করতে৷ তাই এই সংস্কৃতির চর্চাই আমাদের সংস্কৃতিবান করবে৷''
লোকসংস্কৃতির আরেকজন গবেষক নর্দান ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘‘লোকসংস্কৃতির নানা বিকৃত রূপ আমরা আজকাল দেখতে পাই৷ বাউল গানের সুরকে বিকৃত করা হয়৷ লোকগানের সুর বিকৃত করা হয়৷ এটা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি৷ এটা যাঁরা করেন, তাঁরা জীবনসংস্কৃতির ক্ষতি করেন৷ আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ – এ সব তো লোকসংস্কৃতিরই অবদান, লোকসংস্কৃতির ফসল৷''
তিনি বলেন, ‘‘লোকসংস্কৃতি মানে হলো লোকজ্ঞান৷ ডাক ও খনার বচন৷ আজকে আমরা কৃষির উন্নয়নে এই লোকজ্ঞান ব্যবহার করছি৷ ‘ফোকলোর' মানে লোকজ্ঞান, ফোক লার্নিং, ফোক উইজডম, যা আমাদের সমৃদ্ধ করে৷ আমাদের গভীর জীবনবোধের দিকে নিয়ে যায়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম ফোকলোর-এর ‘লিভিং মিউজিয়াম'৷ বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি আমাদের৷ কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো একটা ‘ফোকলোর ইন্সটিটিউট' করতে পারিনি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সেটা লোকসংস্কৃতির অবদান৷ আমাদের এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আমাদের তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ তাঁদের চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তা না হলে আমরা জাগব কীভাবে?''
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ গ্রামীণ মেলা৷ বিভিন্ন পালা পার্বণকে কেন্দ্র করে বছরজুড়ে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ছোট-বড় গ্রামীণ লোকজ মেলা বসে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে৷ কয়েকটি গ্রামীণ মেলা দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লোক ও কারুশিল্প মেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রতি বছর মাসব্যাপী বসে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব৷ সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছর এ মেলা শুরু হয় জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ লোকজ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সব রকম লোকজ সংস্কৃতি ও কুটির শিল্প সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হন শিল্পীরা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বৈশাখী মেলা
এটি মূলত সার্বজনীন লোকজ মেলা৷ বাংলা নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের সর্বত্রই আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার৷ নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে এ বৈশাখী মেলা৷ স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এই মেলার মূল আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রাস মেলা
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়নের পূর্ণিমা তিথিতে বসে রাসমেলা৷ অনেক হিন্দু পুন্যার্থী আর পর্যটক এ উৎসবে শামিল হতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন৷ এ উপলক্ষ্যে পাঁচ দিনের একটি মেলাও মেলা বসে দুবলার চরে৷ মেলাটি চলে আসছে ১৯২৩ সাল থেকে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লাঙ্গলবন্দের মেলা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলমম্বীরা চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী বা অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নানের জন্য সমবেত হন৷ এ উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী মেলা বসে ব্রহ্মপুত্রের দুই তীরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
গুড়পুকুরের মেলা
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি ৩০০ বছরেরও বেশি৷ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ চলে একমাস৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
পোড়াদহের মেলা
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে আড়াইশ বছর ধরে বসে ব্যতিক্রমী এক মেলা৷ প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার বসে দুই দিনের এ মেলা৷ এ মেলার মূল আকর্ষণ বড় বড় আকৃতির নানা রকম মাছ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রাশ লীলার মেলা
মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা কমলগঞ্জ আর আদমপুরে কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাস লীলা৷ এ উপলক্ষে তিন দিনের মেলা বসে কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুরের সনাঠাকুর মণ্ডপ এলাকায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রথের মেলা
সাধারণত বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথের মেলা বসে৷ সবচেয়ে বড় রথের মেলা বসে সাভারের ধামরাইয়ে৷ এছাড়া কুষ্টিয়ার রথখোলার মেলা, রাজশাহীর পুঠিয়ার রথের মেলা, সিলেটের লামাপাড়া রথযাত্রার মেলা উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লালন মেলা
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে মরমী শিল্পী লালন সাঁইয়ের সামাধিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দুইবার লালনমেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ তার একটি হচ্ছে লালন সাঁইজির তিরোধান তিথি উপলক্ষে এবং অন্যটি দোলপূর্ণিমায় লালন প্রবর্তিত সাধুসঙ্গ উপলক্ষে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মধু মেলা
যশোরজেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে প্রতি বছর বসে সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা৷ বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে হয় এ মেলার আয়োজন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বটতলায় বৌমেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চারশ’বছরের পুরানো একটি বট গাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে বউ মেলা৷ বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা পরিবারের সুখ শান্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানকার বট গাছকে পূজা করেন৷ এ উপলক্ষে পাঁচদিনের মেলাও বসে বট গাছের চারপাশে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
11 ছবি1 | 11
এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷