1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভা নির্বাচন ২০০৯ ও পশ্চিমবঙ্গ

২১ এপ্রিল ২০০৯

পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের প্রচার মূলত দুটি ইস্যুতে৷ এক, শিল্পায়ন, দুই গোর্খাল্যান্ড৷

শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে কি আবার জনসমর্থনের আশা করতে পারেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?ছবি: DW

শিল্পায়নের প্রেক্ষাপট

প্রথমে শিল্পায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাক৷ একটানা ৩২ বছরের বামশাসনের প্রায় তিন চতুর্থাংশ জুড়ে হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও আর ঝান্ডাবাজির কবল থেকে এ রাজ্যের শিল্পকে মুক্ত করার কাজটা বছর দশেক আগে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ রাজ্যের বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পায়নের চাকাটাকেও ফের গড়াতে শুরু করেছেন তিনিই৷ এক সময় যে রাজ্যে কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শিল্পপতিদের লগ্নি তুলে নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়াই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে তিনি রাজ্যকে আবার শিল্পমুখী করে তুলতে পেরেছেন৷

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এই শিল্প ভাবনা এতটাই জোরদার যে তাঁর সবথেকে পছন্দের শিল্পক্ষেত্র তথ্য প্রযুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন এবং ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার জন্য তিনি দলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে সমানে লড়ে গেছেন৷ তাঁর এই সদিচ্ছার যে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা, তারই প্রতিফলন ঘটেছিল ২০০৬ সালের রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলাফলে৷ ২৯৫টি আসনের মধ্যে ২৩৫টি আসন জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল তাঁর দল৷

এই সমর্থনকেই হয়তো এবারের লোকসভা ভোটে ধরে রাখতে পারতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, যদি না সিঙ্গুর - নন্দীগ্রাম ঘটত৷ বিধানসভা ভোটে শিল্পায়নের পক্ষে রায় দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু জনমত অগ্রাহ্য করে বাধ্যতামূলক শিল্পায়নের পক্ষে নয়৷ ফলে জোর করে শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করতে গিয়ে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া, নন্দীগ্রামে কেমিকেল হাব-এর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে, যার প্রভাব পড়তে পারে এবারের লোকসভা ভোটে৷

কিন্তু এই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামকেই এবার প্রচারের হাতিয়ার করেছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট৷ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বুদ্ধ, কিন্তু সিঙ্গুর নিয়ে নয়৷ বরং বিরোধীদের শিল্প-বিরোধী আন্দোলনের জন্যই যে টাটাদের ন্যানো প্রকল্প রাজ্য ছেড়ে চলে গেল, বিরোধীদের জন্যই যে নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব বা কাটোয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে পারছে না, সে নিয়ে সোচ্চার হয়েছে তাঁর দল৷ কারণ তাঁরা সম্ভবত বুঝেছেন যে, শিল্পায়নের রাস্তায় পশ্চিমবঙ্গের আবার এই পিছন পানে হাঁটা অনেক মানুষই পছন্দ করছেন না৷ এক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের ভেদাভেদ কিন্তু প্রায় নেই৷ তার কারণ গ্রাম, মফস্বলের মানুষের সামাজিক উত্তরণের বাসনা৷ তাদের অর্থনৈতিক আশা-আকাংখা৷ মফস্বল শহরেও আজকাল শপিং মল তৈরি হয়, ভালই চলে৷ নামজাদা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা এখন শহর ছাড়িয়ে হাত বাড়িয়েছে জেলা শহরগুলোর দিকে, বিরাট বিরাট আবাসন তৈরি হচ্ছে সেখানে৷ কাজেই নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরের জমিরক্ষার আন্দোলনের সাফল্য সম্ভবত গোটা রাজ্যের কথা বলছে না৷

শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বামফ্রন্টকে দুর্বল করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: AP

বাংলার ঐক্যের প্রশ্ন

অন্যদিকে এবারের নির্বাচনের দ্বিতীয় ইস্যু গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বামফ্রন্টকে বিশেষ মাথা ঘামাতে হয়নি৷ গত কয়েকটা পর্যটক মরশুমে পাহাড়ে যখন তখন বনধ্ ডেকে, পর্যটকদের হেনস্থা করে, বিশেষত পাহাড়-বিলাসী, দার্জিলিং-প্রিয় বাঙালি ট্যুরিস্টদের ঘোর দুর্বিপাকে ফেলে বিরুদ্ধ প্রচারের কাজটা বিমল গুরুংরাই অনেকটা করে দিয়েছেন৷ সমতল থেকে সিপিএম স্বনামে এবং নানাবিধ বাঁচাও কমিটি আর বিকাশ পরিষদের বেনামে সেই গন্ডগোলে ইন্ধন জুগিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতার জায়গাটা আরও পোক্ত করেছে৷ তাই এবার ভোটের আগে যখন সিপিএম তাদের পোস্টারে আর দেওয়াল লিখনে মমতার ব্যাঙ্গচিত্র দিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘দিদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে দার্জিলিংকে আলাদা করতেও রাজি, আপনিও কি তাই চান?’’ তখন মমতা নিশ্চুপ৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা যখন বলেছিল, যে দল তার নির্বাচনী ইস্তাহারে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে স্বীকৃতি দেবে, পাহাড়ের সমর্থন তাদের দিকেই থাকবে, তখনও মমতা এবং তাঁর দল ছিল লক্ষ্যণীয়ভাবে নিস্পৃহ৷ পাহাড়ে মোর্চার সমর্থনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে মোর্চার সঙ্গে কংগ্রেসের আলোচনা কিছুটা এগোলেও, শেষপর্যন্ত একরকম ওয়াক ওভার দিয়ে দেওয়া হল বিজেপি-কে৷ পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ওই একটি লোকসভা আসনে বিজেপি নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু মমতার কোনও ভাবান্তর নেই৷ এর থেকে অন্তত একটা ব্যাপার পরিস্কার – বিচ্ছিন্নতাবাদের সঙ্গ নিতে রাজি নয় তৃণমূল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী কামতাপুরী লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে অবশ্য সঙ্গে রেখেছেন মমতা, কিন্তু সেটা উত্তরবঙ্গে কিছুটা রাজনৈতিক সুবিধে পেতে৷ যেভাবে তিনি আছেন লালগড়ের আদিবাসী আন্দোলনে৷ বা যেভাবে তিনি সঙ্গে রেখেছেন অতি বাম এসইউসি-কে৷ কিন্তু বামবিরোধী ভোট যাতে এবার ভাগ না হয়, সেজন্য মমতার জোট এবার মূলত কংগ্রেসের সঙ্গেই৷ কিন্তু সেই জোটের ভবিষ্যৎ কী?

বাম দলগুলি সরকারের উপর সমর্থন তুলে নেওয়ায় তাদের উচিত শিক্ষা দিতে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেছবি: AP

বিরোধী জোটের সাফল্যের সম্ভাবনা

বিধানসভা হোক বা লোকসভা, ভোটের টিকিট না পেয়ে নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা, বা ভোটের সময় সাবোতাজ করে দলীয় প্রার্থীকে ডুবিয়ে দেওয়া, এটা কংগ্রেসের চিরকালীন ঐতিহ্য৷ একেবারে সর্বভারতীয় স্তর পর্যন্ত এই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে৷ পশ্চিমবঙ্গেও টিকিট না পেয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রনব মুখোপাধ্যায়কে খাস প্রদেশ দফতরের সামনে নিগ্রহের চেষ্টা, ক্ষুব্ধ প্রনবের পাল্টা পদাঘাত, এই নাটক গত বিধানসভা নির্বাচনেও এ রাজ্যে সবাই দেখেছে৷ কাজেই তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হলে, কিছু আসন দলীয় প্রার্থীদের হাতছাড়া হলে যে বিক্ষোভ হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক৷ এবারও খুব জোরে শোরে না হলেও, সেই অসন্তোষের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও৷ কিন্তু এবারই প্রথম বিরোধী ভোট একজোট রাখার গুরুত্বটা যেন সাধারণ স্তরের কর্মীদের মধ্যেও চারিয়ে গেছে৷ ভোটের যৌথ প্রচারে সেই ঐক্যবদ্ধ মানসিকতা চোখেও পড়ছে৷ তবে তার জন্য যে পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা ভোটে পুরনো সব হিসেব-নিকেশ উল্টে যেতে পারে – এমন ভেবে নেওয়াটা কষ্ট কল্পনা হয়ে যাবে৷ কারণ সাংগঠনিকভাবে এখনও পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার সামর্থ কোনও রাজনৈতিক দলের নেই৷ ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোটেরও না৷

তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শেষ কথা বলে জনগণ৷ কোনও শাসকদল বা সংগঠন নয়৷

প্রতিবেদক: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ