লোকসভা ভোটের আগে জানুয়ারিতে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন
২১ জুন ২০২৩
আগামী ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির দিন অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এরকম অনেক পাথরই ঠাঁই পাবে রামমন্দিরে। ছবি: Goutam Hore/DW
বিজ্ঞাপন
দিনক্ষণ তৈরি হয়ে গেল। ২০২৪-এর ১৪ জানুয়ারি রামমন্দিরে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এই বছরের অক্টোবরের মধ্যে মন্দিরের একতলা তৈরি হয়ে যাবে। রামমন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র এই কথা জানিয়েছেন।
২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা ভোট হতে পারে। বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৬ জুন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল এপ্রিল-মে মাসে। সেই হিসাবে ভোটের মাস কয়েক আগে রামমন্দিরে মূর্তি বসে যাচ্ছে। রামমন্দিরের দরজা খুলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।
বিরোধীরা আগেই অভিযোগ করেছিলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট হিন্দুত্বের আবহে করতে চান মোদী। রাজনৈতিক হিসাব কষেই রামমন্দিরের উদ্বোধন করা হবে।
নৃপেন্দ্র মিশ্র যা বলেছেন
নৃপেন্দ্র মিশ্র বলেছেন, মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে ১০ দিন ধরে অনুষ্ঠান চলবে। গোটা বিশ্বজুড়ে যাতে তা লাইভ দেখানো হয়, তার ব্যবস্থা করতে চাইছে ট্রাস্ট। সেইমতো আলোচনাও চলছে। মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান চলবে ১৫ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ অগাস্ট ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করবেন গর্ভগৃহে।
ছবি: AFP/S. Kanojia
আমন্ত্রিত ১৭৫ জন
করোনাকালে এই অনুষ্ঠান করা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত করোনায় আক্রান্ত। অমিত শাহেরও করোনা হয়েছে। কিছু নিরাপত্তা রক্ষীরও। তাই নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কাটছাঁট করে ১৭৫-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মূল মঞ্চে থাকার কথা পাঁচজনের। প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, আরএসএস প্রধান এবং ট্রাস্টের প্রধান নিত্যগোপাল দাসের। বাকিরা সামনে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন।
ছবি: IANS
মুসলিম অতিথি
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মামলাকারী ইকবাল আনসারি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে তাঁকেই প্রথম কার্ড পাঠানো হয়। আনসারি জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই যাবেন। মামলার রায় এসে গেছে। বিরোধ এখন অতীতের ঘটনা। শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার ফারুকিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছবি: IANS
সারা দেশ থেকে জল ও মাটি
ভূমিপুজো অনুষ্ঠানের জন্য দেশের সব প্রধান নদী থেকে জল এসেছে অযোধ্যায়। এসেছে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মাটি। অযোধ্যার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরযূর জল তো আছেই। ভূমিপুজোর পর মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মন্দির হবে তিন তলা। গর্ভগৃহের উপর থাকবে শিখর, যা ১৬১ ফুট উঁচু। পাঁচটি গম্বুজ থাকবে। পুরো মন্দির হবে পাথরের তৈরি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
আবার ২৮ বছর পর
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই প্রথমবার অযোধ্যায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আঠাশ বছর আগে তিনি অযোধ্যায় গিয়েছিলেন মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে। ভাষণও দিয়েছিলেন। তারপর আর যাননি। এ বার প্রথমে তিনি যাবেন হনুমান গড়ির মন্দিরে। রামের আগে বজরঙ্গবলীর পুজো দিতে হয়, এই রীতি মেনে সেখানে পুজো দিয়ে যাবেন মূল অনুষ্ঠানে। ভূমিপুজো করবেন বারাণসী থেকে আসা পুরোহিতরা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া
অযোধ্যা এখন কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া। বস্তুত লখনউ থেকে অযোধ্যা যেতে গেলেই কিছুটা দূর পর পর পুলিশের ব্যারিকেড। যাঁরা যাচ্ছেন, পরিচয়পত্র দেখিয়ে যেতে হচ্ছে। নাম লিখে রাখা হচ্ছে। শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তায় কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
হলুদের ছোঁয়া
অযোধ্যায় এখন নজর কাড়ছে হলুদ রং। প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে যাবেন, তাতে রয়েছে হলুদ তোড়ন। দুইপাশে হলুদ পতাকা। কিছু বাড়িতেও পড়েছে হলুদের পোচ। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, পুরসভা এই কাজ করেছে জ্যোতিষী ও বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে। হলুদ না কি শক্তির প্রতীক। শুধু হলুদ নয়, অযোধ্যায় এখন রং-এর মেলা। হলুদ ও গেরুয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সবুজ, নীল, মেরুন সহ একাধিক রং।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু
ভূমিপুজো উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু। ভূমিপুজো শেষ হলেই যা বিলি করা হবে। ফলে অযোধ্যায় লাড্ডুর কারিগররা চূড়ান্ত ব্যস্ত। দেশি ঘি, বেসন ও চিনি সহযোগে বানানো হয় এই লাড্ডু।
ছবি: IANS
বিশেষ কৌটায় লাড্ডু বিলি
লাড্ডু বিলি করা হবে বিশেষ টিফিন কৌটায়। করোনার কারণে অযোধ্যাবাসীরা বাড়িতে বসে টিভিতেই অনুষ্ঠান দেখবেন। তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারে লাড্ডুর কৌটো।
ছবি: IANS
সেজে উঠেছে অযোধ্যা
সেজে উঠেছে অযোধ্যা। ঝকঝকে রাস্তা। অনেক রাস্তা চওড়া হয়েছে। নতুন করে পিচ পড়েছে। চারদিকে পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। রাতে সরযূর তীরে বাড়ি ও মন্দির নানা রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। অন্য তীর থেকে দেখলে বোঝা যায়, কতটা রঙিন করে তোলা হয়েছে অযোধ্যাকে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
9 ছবি1 | 9
তিনি জানিয়েছেন, মন্দির হবে ৩৬০X২৩৫ ফুটের। প্রথম তলায় ১৬০টি স্তম্ভ বা থাম থাকবে। দ্বিতীয় তলায় ১৩২টি ও তৃতীয় তলায় ৭৪টি থাম থাকবে। মোট পাঁচটি মণ্ডপ থাকবে মন্দিরে। রাম মন্দিরের দেওয়াল হবে বেলেপাথর ও মার্বেল দিয়ে। রাজস্থান থেকে এই পাথর আনানো হয়েছে। গোটা মন্দিরে কোনও স্টিল বা ইটের ব্যবহার হবে না।
মন্দিরে ৪৬টি সেগুন কাঠের দরজা থাকবে। গর্ভগৃহের দরজা-সহ তিনটি দরজা সোনার হবে। মন্দিরের চূড়াটিও সোনায় মোড়া থাকবে। দেওয়ালেও সোনার কাজ থাকবে। নৃপেন্দ্র মিশ্রের দাবি, কম করে হাজার বছর যাতে মন্দিরটি টিকে থাকে এমনভাবেই বানানো হচ্ছে।
ট্রাস্টের সদস্য চম্পত রাই টাইমস নাওকে বলেছেন, ''রামমন্দির পরিসরে আরো সাতটি ছোট মন্দির হবে। সেগুলি বিভিন্ন ঋষি ও রামায়ণের সঙ্গে জড়িত দেবদেবীর মূর্তি থাকবে।''
ট্রাস্টের হিসাব, রামমন্দির বানাতে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিটি দূতাবাসে এই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে।
অযোধ্যার রামমন্দির এবং উত্তরপ্রদেশের ভোট
04:02
This browser does not support the video element.
'রাজনীতি নয়'
বিজেপি নেতা সুদেশ বর্মা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''শ্রীরামকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দেখা ঠিক হবে না। রাম হলেন ঐক্যের প্রতীক। রাম হলেন মূল্যবোধের প্রতীক। যারা বিজেপি-র কাজ ভালোবাসেন তারা ২০২৪-এ বিজেপি-কে ভোট দেবেন। বিজেপি কী করেছে, কী করছে, তা তো মানুষের সামনেই আছে। ফলে ২০২৪-এ জয়ের ব্যাপারে আমাদের মনে কোনো দ্বিধা নেই।''
প্রভাব পড়বে
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আশিস গুপ্ত মনে করেন, ''মন্দিরের প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়তে বাধ্য। বিশেষ করে উত্তরভারত, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে রামনবমী পালন করা হচ্ছে, তা থেকেই পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে।''
ডয়চে ভেলেকে আশিস বলেছেন, ''প্রভাব পড়বে বলেই তো মন্দির তৈরির কাজ পুরো শেষ না করেই তাড়াহুড়ো করে মন্দিরের দরজা সকলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। ১৪ জানুয়ারির পরের মাসগুলোতে বিজেপি-র প্রচারে প্রধান বিষয়ই হবে রামমন্দির। গোটা উত্তরভারতে শ্রীরামের প্রভাব কতটা তা সকলেই জানেন। আর সেই প্রভাবকে ভোটে পরিণত করার ক্ষমতা বিজেপি-র আছে।''