গত কয়েক দশকের মধ্যে এমন লোকসানের মুখে পড়েনি সুইডিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম৷ প্রথম তিন মাসে তারা প্রায় ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারের কাপড় বিক্রি করতে পারেনি৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের শুরুটা ভালো হয়নি ফ্যাশান জায়ান্ট এইচ অ্যান্ড এম-এর৷ গত এক দশকের মধ্যে এই প্রথম তাদের মুনাফা কমেছে ৬২ শতাংশ৷ প্রথম তিন মাসে তারা প্রায় ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার কাপড় বিক্রি করতে পারেনি৷ এইচ অ্যান্ড এম-এর প্রধান নির্বাহী কার্ল-ইয়োহান পের্সোন জানিয়েছেন, ‘‘বছরের শুরুতেই আমরা একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷’’ এইচ অ্যান্ড এমের মোট দোকানের সংখ্যা ৪ হাজার ৭শ'৷ কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ দোকানই অল্প জায়গা নিয়ে তৈরি, ফলে প্রচুর মানুষের ভিড়, সে তুলনায় কর্মী কম৷ এমনকি অনলাইন পোর্টালও খুব ভালো নয় বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা৷
শিশুশ্রমের উপর ভিত্তি করে টিকে আছে যেসব শিল্প
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বলছে, বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি ২১ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে৷ ডয়চে ভেলে এমন কয়েকটি শিল্পের কথা তুলে ধরছে, যেগুলোর সাথে শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
কফি
আইএলও-এর তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেত্রে শিশুদের কাজ করাটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বেশিরভাগক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় তাদের৷ এই যেমন কলোম্বিয়া, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হন্ডুরাস, পানামা, এল সালভাদর, গিনি এবং আইভরি কোস্টে কফির বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷
ছবি: dpa
তুলা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তুলা সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷ তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেসব দেশ, যেখানে অর্থনীতি তুলা শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ যেমন আইভরি কোস্ট, যেখানে ৩০ লাখ মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ ‘কটন ক্যাম্পেইন’ নামের একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানেও তুলা শিল্পে শিশুদের জোর করে কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/Getty Images
ইটভাটা
মার্কিন শ্রম অধিদপ্তর এমন ১৫টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইটের ভাটায় শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, ইকুয়েডর, উত্তর কোরিয়া এবং পেরু রয়েছে এই তালিকায়৷
এই শিল্পে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত দু’টি দেশ হলো কলোম্বিয়া এবং বাংলাদেশ৷ কিন্তু বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ খাতে শিশুদের ব্যবহার করা হয়৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে জুতা কারখানায় সিরিয়ার শিশু শরণার্থীরা কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
চিনি শিল্প
গুয়াতেমালা, ফিলিপাইন্স, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আখ শিল্পে শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আইএলও দেখেছে ফিলিপাইন্সে চিনি তৈরির কারখানায় সাত বছর শিশুদের কাজে লাগানো হচ্ছে৷
ছবি: dpa
তামাক
আইএলও বলছে, তামাক শিল্প শিশুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কর্মক্ষেত্র৷ সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড গরমে, বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে কাজ করতে হয় শিশুদের৷ বেশিরভাগ তামাক কারখানায় শিশুরা কমপক্ষে দিনে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
সোনার খনি
আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে খনিতে, বিশেষ করে স্বর্ণ খনিতে শিশুদের কাজ করাটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার৷ খনিতে বিস্ফোরণে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে৷ এছাড়া খনির আশেপাশে বিশুদ্ধ পানি না থাকায় পাতলা পায়খানা, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস এবং যক্ষা রোগের ঝুঁকি রয়েছে এসব শিশুদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
7 ছবি1 | 7
তবে সাম্প্রতিককালে শিশু শ্রম নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছে ফ্যাশান ব্র্যান্ডটি৷ বলা হয় মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া থেকেই বেশিরভাগ কাপড় কেনে তারা৷ এই দেশগুলোর অনেক পোশাক কারখানায় অল্প পারিশ্রমিকে শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়৷ এইচ অ্যান্ড এম তাদের কাছ থেকে খুব কম দামে কাপড় কেনে৷
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কাপড় কেনে কোম্পানিটি৷ এইচ অ্যান্ড এমের জন্য বাংলাদেশের ২০০টি কারখানায় কাপড় তৈরি হয়৷ ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে ১১২৯ পোশাক কর্মী নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা চুক্তিতে সই করে কোম্পানিটি৷ কিন্তু যেসব কোম্পানি এর বাস্তবায়ন করেনি, সেগুলো থেকে এখনও এইচ অ্যান্ড এম পোশাক কেনে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
২০১৬ সালে সুইডিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে জানা যায়, মিয়ানমারের একটি পোশাক কারখানায় ১৪ বছরের শিশুরা প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করে৷ অথচ প্রতি ঘণ্টার জন্য তাদের দেয়া হয় মাত্র ১৫ সেন্ট৷
এছাড়া সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণের অভিযোগও রয়েছে এইচ অ্যান্ড এমের বিরুদ্ধে, কেননা, কাপড় রং করাতে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার হয়, সেগুলো ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে পানিকে বিষাক্ত করে তোলে৷