1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকাচার ভেঙে ছৌ নাচে এগিয়েছে মেয়েরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ মার্চ ২০১৯

পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলারা অনেক ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে৷ শতাব্দী প্রাচীন প্রথা ভেঙে এবার তাঁদের সাফল্য মিলেছে ছৌ নাচেও৷

ছবি: DW/P. Samanta

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার ছৌ নাচ মূলত বীররসের নাচ৷ তাই এই নাচে শারীরিক কসরত বেশি লাগে৷ ডিগবাজি খাওয়া বা উলফা এই নাচের অন্যতম গুরুত্বপূ্র্ণ অংশ৷ পুরুষ ভিন্ন অন্য কারো এই নাচে অংশ নেয়ার রেওয়াজ চালু ছিল না গত দশকেও৷ বলা যায়, মহিলারা ছৌ নাচে একদম ব্রাত্য ছিলেন৷ মহিলাদের চরিত্রে মেয়েদের মতো সাজগোজ করে পুরুষরাই মঞ্চে অবতীর্ণ হতেন৷ এখনও অধিকাংশ দলে সেই নিয়মই চলছে৷ কিন্তু, মিথ বা লোকাচার ভেঙে গত ছয়-সাত বছরে মহিলারাও ছৌ নাচে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছেন৷

পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকলাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে ইউনেস্কোর সঙ্গে রাজ্য সরকার হাত মিলিয়েছে৷ এর ফলে বাংলার যে লোকশিল্পগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল, তা আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে৷ রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পের হাত ধরে ছৌ নাচের পরিসর বড় হয়েছে৷ শিল্পীদের আর্থিক দুর্দশা কেটেছে৷ পুরুলিয়ায় এখন ৩০০ থেকে ৪০০টি পুরুষদের ছৌ নাচের দল রয়েছে৷ এমন অবস্থায় মেয়েরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন?

ছৌ নাচ

00:43

This browser does not support the video element.

বলরামপুর গ্রামের ছৌ শিল্পী জগন্নাথ চৌধুরীর উদ্যোগে প্রথম শুরু হয়েছিল শিশুদের ছৌ নাচের ওয়ার্কশপ৷ তারপর ধীরে ধীরে মহিলারা ছৌ নাচে অংশ নিতে শুরু করলেন৷ এই মুহূর্তে সাত থেকে আটটি মহিলাচালিত ছৌ নাচের দল রয়েছে৷ জগন্নাথের বড় মেয়ে মৌসুমী চৌধুরী প্রথম মহিলা ছৌ শিল্পী৷ মৌসুমীর ছৌ নাচের দলটির নাম মিতালি ছৌ মালডি৷ শিল্পীদের গ্রাম মালডির নামে এই নামকরণ৷ বাদ্যকাররা পুরুষ হলেও নৃত্যশিল্পী সবাই মেয়ে৷

ডয়চে ভেলেকে মৌসুমী বলেন, ‘‘বাবাকে ছৌ নাচে দেখে আগ্রহ জন্মায় আমার মধ্যেও৷ ২০১৩ থেকে শুরু করেছি ছৌ নাচ৷ এতদিন ধরে দেখে আসছি, ছৌ নাচে মেয়েদের চরিত্রগুলিও পুরুষরা করেন৷ প্রথম প্রথম মানুষ অপছন্দ করেছে৷ বাবাকেও অনেক কথা শুনতে হয়েছে৷ আমরা থেমে থাকিনি৷ এখন আমার দলে ১৫ জন মেয়ে আছে৷''

মহিলা ছৌ শিল্পী হিসেবে নরওয়েতে পা রেখেছেন মৌসুমী৷ অতীতে পুরুলিয়ার বহু পুরুষ ছৌ শিল্পীই বিদেশের মাটিতে নিজেদের শিল্পকলা তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু ২১ বছরের মৌসুমিই প্রথম মহিলা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে মহিলাদের কৃতিত্বের কাহিনি তুলে ধরেছেন৷ তিন-চার কেজি ওজনের মুখোশ আর ভারী পোশাক পরে লাফানো খুব একটা সহজ ব্যাপার ব্যাপার নয়৷ কিন্তু সেই অসাধারণ ব্যাপারই সম্ভব হয়ে উঠেছে মহিলাদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও অনুশীলনে৷ সরলা মুড়া, করুণা মাহাতোদের দল তাই প্রমাণ করেছে৷ জগন্নাথ বলেন, ‘‘মেয়েদের ছৌ নাচের সাফল্য সবে শুরু হয়েছে৷ এতদিন আমরা মেয়েদের সেই ক্ষমতা দেখিনি৷ কিন্তু এবার মেয়েরা ছেলেদের টেক্কা দিতে সক্ষম৷''

‘এবার মেয়েরা ছেলেদের টেক্কা দিতে সক্ষম’

This browser does not support the audio element.

পুরুলিয়ার স্কুলছাত্রীরাও ছৌ নাচে মনোযোগ দিয়েছে৷ রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের বিসি গার্লস স্কুলের কন্যাশ্রী বালিকারাও ছৌ দল গড়েছে৷ ছৌয়ের তালিম চলে সগড়কা গ্রামের লোক গবেষক সুভাষ রায়ের লোক সংস্কৃতি কেন্দ্রে৷ সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছৌ৷ মৌসুমী এখানে পড়াশোনা করে প্রথম হয়েছে৷ এখানে ছৌ নিয়ে পড়ছে তার বোন শ্যামলীও৷ সামাজিক সমস্যা নিয়েও মৌসুমি-শ্যামলীরা ছৌয়ের পালা তৈরি করে৷ সেখানে বাল্যবিবাহ বা নারী পাচারের মতো সমস্যা তুলে ধরা হয়৷ পাশাপাশি রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের প্রচারে ছৌ নাচকে কাজে লাগাচ্ছেন মহিলারা৷ মৌসুমীদের সাহায্য করেছেন মধুমিতা পালও৷ ছৌ নাচে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলাদা দল করেছেন তিনি৷ শহরে ছৌ নাচকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁরা নানা ধরনের কাহিনী পালার আকারে পরিবেশন করছেন৷

কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের ছৌ নৃত্যে মহিলাদের অংশগ্রহণ শুধু আর্থিক প্রয়োজনে এমনটা নয়, মনের তাগিদেও এগিয়ে এসেছেন তাঁরা৷ পুরুলিয়ার বামনিয়া ছৌ-ঝুমুর উৎসবে এসেছিলেন জামবাদ মহিলা দলের সদস্যরা৷ ধানখেতের উপর মঞ্চ বাঁধা হয়েছে৷ ধানের নাড়ার উপর সতরঞ্জি বিছিয়ে বসেছিলেন সদানন্দ, সন্ধ্যারানি মাহাতোরা৷ এই দলের গুরু সদানন্দ নিজের পরিবার নিয়েই গড়ে তুলেছেন দলটি৷ বাবার কাছে তিনি শিখেছেন ছৌ, এখন ছেলে গৌতম মাহাতোও জড়িয়ে এই শিল্পে৷

সদানন্দ বলেন, ‘‘মহিলারা ইচ্ছে প্রকাশ করল যে তারা নাচে অংশ নেবে৷ সব কাজে তারা সাহায্য করত, শুধু মঞ্চে নামত না৷ এখন ঘর সামলে ওরা আমাদের সঙ্গে নাচে যোগ দিয়েছে৷''

বছর তিনেক আগে তৈরি হয়েছে জামবাদের মহিলা ছৌয়ের দলটি৷ মোট ১২ জন মহিলা রয়েছে দলে৷ সদানন্দের স্ত্রী সন্ধ্যারানি, পুত্রবধূ অপর্ণা-সহ মাহাতো পরিবারেরই অধিকাংশ মহিলা৷ চলতি মরসুমে অনুষ্ঠানের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে বলে তৃপ্ত তারা৷ জনপ্রিয় হয়েছে জামবাদ মহিলা ছৌ দলের মহিষাসুর বধ, সীতাহরণ, ত্রিপুরাসুর বধ পালা৷

সন্ধ্যারানি বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম বেশ কঠিন মনে হত৷ তবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি৷ গৃহকর্ম সামলে অনুশীলন করি, ভালোই লাগে৷'

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ