গেল আট বছরে লোডশেডিং আগের চেয়ে কমেছে৷ কিন্তু একেবারে এই সমস্যা থেকে মু্ক্ত হয়নি বিদ্যুৎ খাত৷ এই গরমেও দুঃসহ লোডশেডিংয়ে ভুগেছে মানুষ৷ শহরের চেয়ে গ্রামের পরিস্থিতি আরো খারাপ৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের ১ নভেম্বর৷ হঠাৎ করেই বিকল হয় বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড৷ ফলাফল– ‘ব্ল্যাকআউট' এবং সে কারণে পুরো বাংলাদেশ প্রায় বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন৷ সেদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একটি সঞ্চালন লাইনের ত্রুটি থেকে বিদ্যুতের এই বিপর্যয়ের সূচনা হয়৷
গেল মে মাসেও আরেকবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বিদ্যুৎ খাত৷ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩৬ জেলার বাসিন্দারা একটানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকেন৷ ঝড়ের কবলে পড়ে সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটি উপড়ে পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়৷ এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দশটি বিদ্যুৎকেন্দ্র৷ পরবর্তীতে বিকল্প একটি রিলে লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল স্বাভাবিক করা গেলেও মূল লাইনটি আগামী সেপ্টেম্বরের আগে ঠিক হবে না৷ ফলে চারশ' মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি এখনো আছে৷
জ্বালানির যত উৎস
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১. তেল
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২. কয়লা
২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauch
৩. গ্যাস
তিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imago
৪. পানিবিদ্যুৎ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdier
৫. পরমাণুশক্তি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyring
৬. বায়ুশক্তি
বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
৭. সৌরশক্তি
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
৮. অন্যান্য উৎস
জিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
8 ছবি1 | 8
এসব ঘটনায় বারবার যে প্রশ্নটি এসেছে তা হলো, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে যতটা মনোযোগী, ততটা সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন বাড়ানো এবং এর ত্রুটি নিরসনে নয়৷ বিশেষ করে, পয়লা নভেম্বরের সেই ‘ব্ল্যাক আউট' সিস্টেমের দুর্বলতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে৷
এ বিষয়ে বুয়েট-এর কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণে সরকার এখন হয়তো গুরুত্ব দিচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি সবসময় অবহেলিতই ছিল৷ ‘‘এবার গরমের সময় প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং আমরা পেয়েছি৷ পরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বললেন যে, এবার সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য একটা বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ তাতে এটি বোঝাই যায় যে, অতীতে তারা এটিতে গুরুত্বই দেননি'', বলছিলেন তিনি৷
তবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোয় তিনি সরকারের প্রশংসা করেছেন৷ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট৷ আর গেল ৭ জুন এ যাবৎকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ৯,৪৭৯ মেগাওয়াট৷
তবে বিদ্যুতের এত উৎপাদন বাড়ার পরও এখনো লোডশেডিংমুক্ত না হবার কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘লোডশেডিং কমেছে৷ কিন্তু লোডশেডিংমুক্ত হতে পারিনি৷''
লোডশেডিং কেন আরো কমছে না
এ বিষয়ে ড. ইজাজের বক্তব্য হলো, শহরের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কিন্তু গ্রামের দিকে হয়নি৷ যেমন, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের সময় সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় ও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বন্ধ রাখতে হয়৷ তার সঙ্গে গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বন্ধ থাকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট৷ এর সঙ্গে এমনিতেই গরমে বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়৷ ঘন ঘন ও লম্বা সময়ের জন্য লোডশেডিং হওয়ায় জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়– এত বিদ্যুৎ গেল কোথায়? অনেককেই সামাজিক গণমাধ্যমে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, সরকার ১৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কথা বলে, তাহলে বিদ্যুৎ নেই কেন?
ড. ইজাজের মতে, উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তা হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু প্রকৃত উৎপাদনের বাস্তবতা ভিন্ন৷ ‘‘অনেক কেন্দ্র পুরোনো৷ তাই এগুলোর উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি প্রায়ই এগুলো বন্ধ রাখতে হয়৷ এছাড়া গ্যাস স্বল্পতার জন্য চালানো যাচ্ছে না এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট৷ এর বাইরে জ্বালানি তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ যেহেতু বেশি, তাই খরচ কমাতে সব তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানো হয় না৷ সমষ্টিগত ফল হচ্ছে, সিস্টেমে লোডশেডিং থাকছেই৷'' এছাড়া গ্রিড কতটা বিদ্যুৎ নিতে পারবে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে৷রমজানের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেছিলেন যে, ১০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা৷
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরেই যেহেতু দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানেই বিদ্যুতের ঘাটতি হচ্ছে৷ এর সঙ্গে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াটের কোনো সম্পর্ক নেই৷'' টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানান, যেহেতু সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার, তাই প্রতিবছরই চাহিদা বাড়ছে৷ সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব, সেগুলোকে কানেক্টেড করে ফেলা৷ তবে এর ফলে চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে৷ সেই চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের আরো কাজ করতে হবে৷''
কিন্তু সরকারের এই অবস্থানকে ‘রাজনৈতিক' আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন ড. ইজাজ৷ তাঁর মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় সংযোগ দেয়া হলেও বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তার কোনো অর্থ নেই৷ ‘‘যে আজকে সংযোগ পাচ্ছে, ধীরে ধীরে দিলে সে হয়ত দশ বছর পরে পেত, কিন্তু যারা বিদ্যুতের আওতায় আছেন তাঁরা নির্ভরশীল বিদ্যুৎ পেত৷ তাই আমি মনে করি, লোডশেডিং পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু যেই উন্নতির কথা আমরা ভেবেছিলাম সেই উন্নতি হয়নি৷''
পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ কী?
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
ছবি: Kerry Skyring
সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার বাতাসে ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চিন্তিত হওয়ার মতো তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিল৷ দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে এখনও ‘এক্সক্লুশন জোন’ আছে, যেখানে মানুষজনকে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
পরের শিকার জাপান
২০১১ সালের মার্চে জাপানে প্রথমে নয় মাত্রার ভূমিকম্প ও তারপর সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়ে৷ ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় নিউক্লিয়ার বোমা ফেলার কারণে যে পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ বের হয়েছিল, ফুকুশিমার ঘটনায় তার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ জাপানেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ ঐ অঞ্চলের শিশুদের টাইফয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের শিশুদের তুলনায় প্রায় ২০ গুন বেশি৷
ছবি: Reuters
৩০ থেকে ১ শতাংশ
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার আগে জাপানের বিদ্যুৎ চাহিদার ৩০ শতাংশ আসত পরমাণু শক্তি থেকে৷ তবে ২০১১ সালের পর সেটি নেমে এসেছে মাত্র এক শতাংশে৷
ছবি: REUTERS
সংকটে পরমাণু শক্তি শিল্প
বর্তমানে এই শিল্প আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্ষতি গুনছে৷ আর নতুন করে রিঅ্যাক্টর তৈরির কাজও স্থগিত আছে৷
ছবি: Reuters
ফ্রান্সে বাধা
‘প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর’ বা পিডাব্লিউআর নামে দেশটির সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নিয়ে ফ্রান্সের অনেক আশা ছিল৷ প্রকল্পটি বেশ নিরাপদ বলেই তারা মনে করেছিল৷ কিন্তু ২০১২ সালে এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ২০১৮ সালে সেটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ব্যয় হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ইউরো - প্রকৃত খরচের চেয়ে প্রায় তিন গুন বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Triballeau
নতুন রিঅ্যাক্টর তৈরি করবে ব্রিটেন
অনেক বছর ধরে দেশটি দুটি নতুন পিডাব্লিউআর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷ এতে খরচ হতে পারে ৩৩ বিলিয়ন ইউরো৷ তবে আর্থিকভাবে এটি লাভজনক হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ কারণ, ঐ রিঅ্যাক্টরগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তার দাম সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হবে৷ ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভর্তুকি দিতে হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/J. Tallis
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা
২০২২ সালের মধ্যে সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে একটি আইন পাস করেছিল জার্মানি৷ তবে বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসে সেই আইন থেকে সরে এসেছিলেন৷ তবে ২০১১ সালে জাপানে দুর্ঘটনার পর ম্যার্কেল তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
একে একে বন্ধ হচ্ছে
এখন পর্যন্ত জার্মানির নয়টি রিঅ্যাক্টর বন্ধ হয়েছে৷ বাকি আছে আটটি৷ সেগুলোও ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও ১৩২টি রিঅ্যাক্টর চালু আছে৷ ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকার কথা৷ এদের গড় বয়স এখন ৩২৷ ফলে মাঝেমধ্যেই ত্রুটি ধরা পড়ছে৷ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে বিক্ষোভকারীরা এগুলো এখনই বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/G. Rueter
চীন এখনও পরমাণু বিদ্যুৎ চায়
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও রাশিয়ায় এখনও নতুন কোনো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি৷ তবে চীন এখনও এর থেকে সরে আসেনি৷ বরং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে পরমাণু শক্তির কথা চিন্তা করছে তারা৷ পাশাপাশি সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের প্রসার ঘটানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের৷
ছবি: Imago/China Foto Press
11 ছবি1 | 11
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ গ্রাহকদের চেয়ে শিল্প গ্রাহকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন ইজাজ হোসেন৷ তাঁর মতে, এসব গ্রাহকের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি৷ উৎপাদন ঠিক রাখতে তাঁদের দরকার মানসম্পন্ন, লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ৷ আগে তাঁরা ক্যাপটিভ বা শিল্প বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ পেলেও এখন সেই সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে৷ তাই এখন তাঁদের ডিজেল জেনারেটরকে বিকল্প রাখতে হচ্ছে৷ এতে খরচ বাড়ছে৷
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য আরো সময় লাগবে৷ এক্ষেত্রে অর্থ জোগান একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘আরো দু'বছর আমাদের সঞ্চালন বিতরণে প্রচুর কাজ করা দরকার৷ কিন্তু তার জন্য প্রচুর অর্থও প্রয়োজন৷ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ ষাট হাজার কোটি টাকা দরকার৷ সরকার প্রতি বছর যে অর্থ দিচ্ছে তার শতভাগই খরচ করছি৷ কিন্তু আমাদের আরো অর্থ দরকার৷ তার জন্য কাজ করছি৷'' এরই মধ্যে মাতারবাড়ি ও পায়রা প্রকল্পসহ প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্পের কাজ চলছে বলে জানান তিনি৷
বিদ্যুৎ খাতের ‘জনবান্ধব' উন্নয়ন!
‘আগামী পাঁচ বছরে দরকার ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার’
২০০৯ সালে দায়িত্ব নেবার পর, আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি জ্বালানি তেলভিত্তিক অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছিল৷ জ্বালানি তেলে উৎপাদন খরচ বেশি হবার পরও স্বল্পমেয়াদে এসব প্রকল্প দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারায় এর প্রশংসাও মিলেছে৷ কিন্তু কথা ছিল, স্বল্প মূল্যের জ্বালানি, মূলত কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে উৎপাদন খরচও কমবে এবং নির্ভরশীল বিদ্যুতের জোগানও হবে৷ কিন্তু সে জায়গায় সরকার ‘ব্যর্থ' হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইজাজ৷ ‘‘সরকার ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে৷ ১০০টি তো দরকার নেই৷ ১০টি হলেই তো হয়ে যায়৷ ২০ মেগাওয়াটের ৫০০টা করার চেয়ে ১০০০ মেগাওয়াটের পাঁচটি করা বেশি জরুরি৷''
গত দুই মেয়াদের প্রথমবার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকার যে মহাপরিকল্পনা করেছিল, সেখানে ২০৩০ সাল নাগাদ ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল, যার ২৫ ভাগ ছিল দেশীয় কয়লা থেকে৷ দেশীয় কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় এবং বেসরকারি খাতে প্রকল্পগুলো আলোর মুখ না দেখায় সেই মহাপরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়৷ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঠিক সময়ে না আসায় বিদ্যুৎ বিভাগের সমালোচনা করেন অনেকেই৷ এ বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘‘কাজ হচ্ছে না এটি সত্য নয়৷ যাঁরা বলছেন, তাঁরা হাওয়ার উপরে বলছেন৷ তাঁরা পায়রায় যাননি৷'' তবে দীর্ঘমেয়াদি এসব প্রকল্প ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আলোর মুখ দেখতে শুরু করবে বলে জানান তিনি৷
সরকার সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ দেবার অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম৷ তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকার তাদের টানা দুই মেয়াদের প্রথমটিতে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের কথা বললেও পরবর্তীতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ‘কৌশলগত' পরিবর্তন এনেছে৷ ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম মেয়াদে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছিল৷ সেই খরচ কমাতে সরকার বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করার রোডম্যাপ করেছে৷ পরের মেয়াদে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেখা গেল যে, তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায়৷ একই কারণে আমরা দেখেছি, সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে৷''
তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পর অভ্যন্তরীণ বাজারে কিছুটা সমন্বয় করা হলেও তা জনগণের কাজে আসেনি৷ পাশাপাশি ঠিকমতো সমন্বয় না করার কারণে জ্বালানি তেলে আগে লোকসান হয়েছে এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে না পারায় গ্যাসের সংকট মেটাতে ব্যয়বহুল তরল গ্যাস বা এলএনজি আমাদানি করা হচ্ছে৷ আর এসব অজুহাতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে৷ এর ফলে ভোক্তার স্বার্থ বিপন্ন হয়েছে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক৷ ‘‘সরকারি খাতে শুধু নয়, বেসরকারি খাতকেও মুনাফার জায়গায় বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ আপনি জার্মানি থেকে বলছেন, জার্মানিতে সরকার নিউক্লিয়ার বন্ধ করে দিচ্ছে, কয়লা কমিয়ে আনছে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এরই মধ্যে ৩০ ভাগ সফল হয়েছে৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুতের দাম কমতে শুরু করেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম ঢালাওভাবে বাড়ানো হচ্ছে৷ এটা ভয়ানকভাবে জনস্বার্থবিরোধী৷''
‘বিদ্যুতের দাম ঢালাওভাবে বাড়ানো হচ্ছে, যা ভয়ানকভাবে জনস্বার্থবিরোধী’
নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি
এ অবস্থায় সরকার বিদ্যুৎ খাতের যে উন্নতি করেছে, তা দিয়ে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় জনগনের মাঝে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক৷ সে কারণেই ২০১৮-এর ডিসেম্বর নাগাদ যত বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মত অনেকের৷ ড. ইজাজের ধারণা, বিদ্যুৎ খাতের একটা গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাইবে সরকার৷ সেক্ষেত্রে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেহেতু এর মধ্যে উৎপাদনে আসবে না, তাই খরচ যা-ই হোক সরকার উৎপাদন যত সম্ভব বাড়ানোর চেষ্টা করবে৷ ‘‘মোটামুটি আগে যেভাবে ম্যানেজ করেছে, সেভাবেই ম্যানেজ করবে৷ খরচ যা-ই হোক'', বলেন তিনি৷
সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রতিক্রিয়া
বিদ্যুৎ অবশ্যই দরকার, বিশেষ করে গরিবদের তো আরো বেশি দরকার৷ তারপরও রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা হবে মর্মান্তিক৷ একদিকে দেশের-দশের প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্জয়ের ভয়৷ কী বলছে দেশের মানুষ?
ছবি: picture-alliance/dpa/Pacific Press/M. Hasan
মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতুর মতে, সুন্দরবনের পাশে এত বড় একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে একে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না৷ তাঁর মতে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প আছে৷
ছবি: DW
সায়েম ইউ চৌধুরী, পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক
৪০ বারেরও বেশি সুন্দরবনে গেছেন সায়েম৷ তিনি জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি সার কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস নিঃসরণ হয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ পুকুরের মাছ, গাছপালা, প্রাণী – সব মারা পড়ে৷ এ রকম ছোট একটা সার কারখানার দুর্ঘটনা থেকে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করার সক্ষমতা যেখানে নেই, সেখানে এত বড় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো দুর্ঘটনা হলে আমাদের সরকার কী-ই বা করার থাকবে?
ছবি: DW
মারুফ বিল্লাহ, স্থানীয় বাসিন্দা
মারুফ বিল্লাহর জন্ম রামপালেই৷ ছোটবেলা থেকেই তিনি সুন্দরবনকে ধ্বংস হতে দেখে আসছেন৷ আর এখন সুন্দরবন ঘেঁষে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে একে ধ্বংসের আরেক পায়তারা করছে সরকার৷ তিনি জানান, সিডর আর আইলার পরে আমরা দেখেছি ঐ জনপদকে সে যাত্রায় বাঁচিয়েছিল সুন্দরবন৷ এখন যদি আমরাই তাকে মেরে ফেলি, তাহলে জনগণ কোথায় যাবে? তাই তাঁর প্রশ্ন, জীবন আগে, নাকি বিদ্যুৎ আগে?
ছবি: DW
সাইমুম জাহান হিয়া, শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইমুম জাহান হিয়া মনে করেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন৷ এর পাশে বিশাল আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে যে কখনো কোনো দুর্ঘটনা হবে না – এটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না৷ তাঁর মতে, দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন আছে, এটা ঠিক, তবে সেটা সুন্দরবনকে ধ্বংস করে নয়৷
ছবি: DW
হাসিব মোহাম্মদ, শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব মোহাম্মদ কয়েকবার সুন্দরবনে গেছেন৷ আসলে এই বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র তাঁকে সবসময় টানে৷ তাই এ বনের কোনোরকম ক্ষতি করে তিনি এর কাছাকাছি রামপালের মতো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চান না৷ গত বছরের কয়েকটি ছোট ছোট জাহাজ সুন্দরবনে ডোবার পর যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি৷ তাঁর আশঙ্কা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে জাহাজ চলাচল বেড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাও বাড়বে৷
ছবি: DW
মিমু দাস, শিক্ষার্থী
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র মিমু দাসও মনে করেন, সুন্দরবনের এত কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা ঠিক হবে না৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর পড়ে তাঁর মনে হয়েছে যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করবে৷ মিমু বিদ্যুৎকেন্দ্র চান, তবে সেটা অন্য কোথাও৷
ছবি: DW
আদনান আজাদ আসিফ, মডেল ও অভিনেতা
মডেল ও অভিনেতা আদনান আজাদ আসিফ একজন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারও৷ কয়েক বছর ধরে সময় পেলেই তিনি সুন্দরবনে ছুটে যান৷ বিশ্বের সবেচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসস্থল৷ তাঁর মতে, সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস৷ আর এমনিতেই নানা কারণে এখানে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে৷ তাই এর কাছাকাছি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো প্রকল্প করে এ বনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না৷
ছবি: DW
আমিনুর রহমান, চাকুরিজীবী
ঢাকার একটি পরিবহন সংস্থায় কাজ করেন আমিনুর রহমান৷ তাঁর মতে, দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ দরকার৷ তাই বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে দেশের জন্য ভালোই হবে৷ তাছাড়া তিনি শুনেছেন যে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতিই করবে না৷
ছবি: DW
আব্দুল আজীজ ঢালী, মধু চাষি
সুন্দরবনে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মধু আহরণ করেন সাতক্ষীরার আব্দুল আজীজ ঢালী৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ বনের সঙ্গে থাকতে চান তিনি৷ সুন্দরবনে থাকলেও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না আব্দুল আজীজ৷
ছবি: DW
ভবেন বিশ্বাস, মাছ শিকারি
ভবেন বিশ্বাসের জীবিকার অন্যতম উৎস সুন্দরবন৷ উদবিড়াল দিয়ে এ বনে তিনি মাছ ধরেন ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে৷ তাঁর বাবা ও ঠাকুরদাদার এ পেশা এখনো তিনি ধরে রেখেছেন৷ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে এ খবর তিনি শুনে থাকলেও, এর ভালো বা খারাপের দিকগুলো – কিছুই জানা নেই তাঁর৷ তবে সুন্দরবনকে তিনি ভালোবাসেন, খুব ভালোবাসেন৷
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী হামিদ ২০১৯-এ অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হবে বলে আশা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি খাতে যেসব কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র, সেগুলো হয়ত আসতে পারছে না৷ সেক্ষেত্রে আমাদের ‘প্ল্যান বি' আছে৷ আগামী বছরের জুন নাগাদ এলএনজি আসছে৷ তাতে গ্যাস স্বল্পতার কারণে যে ১৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে আসতে পারছে না, সেটি উৎপাদনে আসবে৷ তাই ২০১৯ সাল নাগাদ আর কোনো সমস্যা হবে না৷''
বর্তমানে অন্তত ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ ডিজেল ও ফার্নেস তেল দিয়ে উৎপাদন করা হয়৷ ড. ইজাজ ও ড. আলমের মতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় বর্তমান সরকার অনেকটাই সুবিধা পেয়েছে৷ আগের মতো দাম থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ সামাল দিতে হিমসিম খেতে হতো৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷