লোস কোলোরাদোস হল কলম্বিয়ার একটি সুরক্ষিত অরণ্য৷ সেখানে বাস করে মালিবু উপজাতির লোকেরা৷ তাদের ছেলে-মেয়েরা এখন শিখছে নিজেদের হারানো ঐতিহ্যকে পুনরাবিষ্কার করতে: প্রকৃতিপ্রেম৷
বিজ্ঞাপন
জঙ্গলই যাদের বাড়ি
05:21
ক্রমেই আরো বেশি মানুষ লোস কোলোরাদোস ন্যাশনাল পার্কের প্রান্তে বাস করছেন, কেননা তাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই৷ লুইস অর্তেগাও এখানে বাড়ি বানিয়েছেন, যদিও তিনি জানেন এ কাজ বেআইনি৷ কী করবেন, শহরের কেন্দ্রে বাড়ি পাওয়া ভার, ভাড়াও আবার বেশি৷
লুইস এদিক সেদিক ছোটখাট কাজ করে সংসার চালান৷ এবার তাঁর পরিবারের মানুষজনের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে৷ লুইস বলেন, ''আমি এখানে বাড়ি তৈরি করছি যাতে আমার ছেলে-মেয়েদের একটা ভবিষ্যৎ থাকে৷ আমার তিন সন্তান; আর আছেন আমার স্ত্রী, আমার ভাই-এর স্ত্রী, আমরা একটা বড় পরিবার৷ আমি আমার পরিবারের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই৷''
গত ৫০ বছর ধরে কলম্বিয়ায় সরকার, মাদক পাচারকারী, বামপন্থি আর দক্ষিণপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত চলেছে৷ অন্য অনেকের মতো লুইস ও তাঁর পরিবার সেই সংঘাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়েছেন৷ এবার একটা বাড়ি পেয়ে সকলেই খুশি৷ লুইসের বক্তব্য, ''আমরা এখানে নিরাপদ; আগে পাহাড়ে যা ছিলাম, তার চেয়ে বেশি নিরাপদ৷ এখানে আমরা গ্রামের ভিতরে না হলেও, গাঁয়ের কাছাকাছি থাকি; নিজেদের অন্তত নিরাপদ বোধ করি৷''
ঘুরে আসুন প্রাচীন এক অরণ্য থেকে
জার্মানির টুরিঙ্গিয়ায় হাইনিশ জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি যেন তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে আছে৷ বসন্তে সেখানে প্রকৃতির চেহারা আরো বদলে যায়৷ দেখা মেলে বিরল প্রাণীর৷
ছবি: Thomas Stephan
মার্চে ফুল বাগানে জাদুর স্পর্শ
বসন্তের আগমনের সাথে সাথে হাইনিশ উদ্যানে ফুল ফুটতে শুরু করে৷ জার্মানির বৃহৎ এই বিচ বৃক্ষের অরণ্যের মাটি এতটাই উর্বর যে নানা প্রজাতির গাছ খুব সহজেই এখানে জন্মে৷ যেমন লিভারওয়ার্ট৷
ছবি: Thomas Stephan
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান
হোলওয়ার্ট নামের এই ফুলগুলো যখন পুরোপুরি ফোটে তখন পুরো অরণ্য যেন রঙিন কার্পেটে ঢেকে যায়৷ ২০১১ সালে এই উদ্যানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Rüdiger Biehl
পাখিদের স্বর্গ
শীতে পাখিদের কলকাকলি থেমে গেলেও বসন্তের শুরুতেই আবার তাদের গানে মুখরিত হয়ে ওঠে বনভূমি৷ এই ঋতুতে কালো কাঠঠোকরা তার সঙ্গী খোঁজা শুরু করে৷ এই উদ্যানে ১৮৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে৷
ছবি: Thomas Stephan
অরণ্যে ভ্রমণ
অনেকভাবেই এই অরণ্যে আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন৷ মোটর সাইকেলে, পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে করে৷ ১৭ ধরনের ভ্রমণ প্যাকেজ আছে সেখানে৷
ছবি: Thomas Stephan
পাখির চোখে দেখা
হাইনিশ ন্যাশনাল পার্কে আপনার জন্য আরো একটি চমক আছে৷ এই ক্যানোপি হাঁটাপথ ধরে হেঁটে গাছের সমান উঁচুতে উঠে গেলে পুরো পার্ককে ভালভাবে দেখা যায়৷
ছবি: Rüdiger Biehl
প্রাচীন অরণ্য
হাইনিশ অরণ্যটি যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই এখানে কোনো চাষবাস হয় না, এমনকি মরে যাওয়া গাছও সরিয়ে ফেলা হয় না৷
ছবি: Rüdiger Biehl
বিরল প্রাণী
এ অরণ্যের গুবড়ে পোকাগুলো মরে যাওয়া গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়৷ এই মরা বৃক্ষগুলো কেবল তাদের নির্ভয় আবাস নয়, এখানে ডিম পাড়ে তারা৷ এই উদ্যানে ৫০০ বিরল প্রজাতির গুবরে পোকা রয়েছে৷
ছবি: Thomas Stephan
সবুজ শ্রেণিকক্ষ
অরণ্য সংরক্ষণের জন্য যেমন বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি জাতীয় উদ্যানটি রক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷ বিশেষ করে তরুণ পর্যকটদের প্রতি মনোযোগ বেশি তাদের৷ প্রায়ই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সেখানে শিক্ষাসফরে যায়৷
ছবি: Thomas Stephan
8 ছবি1 | 8
সুরক্ষা যাদের কাজ
রোঁদে বেরিয়েছেন পার্কের কর্মীরা৷ তবে অকারণে লোকজনকে পার্ক থেকে বের করে দেন না তাঁরা৷ লুইস অর্তেগা অন্যত্র যেতে রাজি ছিলেন, যদি অন্যত্র এর চেয়ে ভালো একটা বাড়ি পান৷ কিন্তু তার জন্য অনেক টাকা চাই৷ তাহলে কার মূল্য বেশি: মানুষ না জীবজন্তুর? লোস কোলোরাদোস ন্যাশনাল পার্কের কর্মী হর্খে ফেরার বলেন, ''আমাদের সত্যিই উভয়সংকট৷ সেই কারণে আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলে একটা সমাধান বার করার চেষ্টা করছি৷ একটি সমাধান হলো পুনর্বাসন, কিন্তু ক্ষতি যাতে কম হয়, সেটাও আমরা দেখার চেষ্টা করছি; মানুষজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, পরিবেশকে বাঁচানো কতটা দরকারি কাজ৷''
ন্যাশনাল পার্ককে বাঁচানোর জন্য অরণ্যরক্ষীরা অপর একটি দীর্ঘমেয়াদি পন্থা নিয়েছেন, যার নাম হল শিক্ষা৷ কাছের শহর থেকে একদল কিশোর-কিশোরী এসেছে, তাদের অনেকেই পার্কের ভিতরকার বস্তিতে থাকে৷ আগে এটা শুধু একটা গিরিসংকট নয়, মালিবু উপজাতির লোকেদের প্রার্থনার জায়গা ছিল৷ মালিবু-রা ছিল প্রকৃতি উপাসক৷ হর্খে ফেরার বললেন, ''আমরা আবার সেই ট্র্যাডিশন চালু করে কিশোর-কিশোরীদের দেখাতে চাই, প্রকৃতি আগে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাতে ওরা ওদের পূর্বপুরুষদের মতোই প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিতে শেখে৷''
সুন্দরী বন সুন্দরবন
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে বিস্তৃত এ বনের মোট আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার৷
ছবি: DW/M, Mamun
বিশ্ব ঐতিহ্য
বাংলাদেশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬০১৭ কিলোমিটার৷ আয়তনের প্রায় ৭০ ভাগ স্থল আর ৩০ ভাগ জল৷ পুরো সুন্দরবনের ভেতরে জালের মতো অসংখ্য নদী আর খাল রয়েছে৷ জীববৈচিত্রে ভরপুর সুন্দরবনকে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখির বসবাস এই বনে৷
ছবি: DW/M, Mamun
বাঘের পায়ের ছাপ
সুন্দরবনের কটকা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য৷ সেখানেই দেখা মেলে বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ৷ এ বনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ডোরাকাটা বাঘ৷ জলবায়ুর পরিবর্তন, খাদ্যের অভাব আর চোরা শিকারসহ নানা কারণে দিন দিন এখানে কমে আসছে বাঘের সংখ্যা৷ বন বিভাগের মতে, সুন্দরবনে বর্তমানের বাঘের আনুমানিক সংখ্যা ৫০০৷ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাঘশুমারি অনুযায়ী এ সংখ্যা ছিল ৪৪০৷
ছবি: DW/M, Mamun
অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণ
সুন্দরবনের কটকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে চিত্রা হরিণ৷ সুন্দরবনের সর্বত্রই এ প্রাণীটির দেখা মেলে৷ চিত্রা আর মায়া – এ দুই ধরণের হরিণ আছে সুন্দরবনে৷ তবে সবচেয়ে বেশি আছে চিত্রা হরিণ৷ ৩০ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণের বসবাস সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M, Mamun
যার নামে সুন্দরবন
সুন্দরবনের অধিকাংশ গাছই চির সবুজ ম্যানগ্রোভ শ্রেণির৷ এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী৷ এ গাছের নামেই বনের নামকরণ৷ এছাড়া এই বনে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ আছেস যার মধ্যে ১৭টি ফার্ন জাতীয়, ৮৭টি একবীজপত্রী ও ২৩০ প্রজাতি দ্বিবীজপত্রী৷ সারা পৃথিবীজুড়ে যে ৫০ প্রজাতির প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ আছে, তার ৩৫ প্রজাতিই পাওয়া যায় বাংলাদেশের সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M, Mamun
পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ
প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক আসেন সুন্দরবন ভ্রমণে৷ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ লাখ ২০ হাজার ৪১৪ জন পর্যটক বেড়াতে এসেছেন এখানে, যাঁদের মধ্যে বিদেশি পর্যটক ৩ হাজার ৮৫৪ জন৷
ছবি: DW/M, Mamun
বিচিত্র সাপ
শরণখোলা রেঞ্জের একটি জঙ্গলে গ্রিন ক্যাট স্নেক বা সবুজ ফনিমনসা সাপ৷ কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ ছাড়াও সুন্দরবনে দেখা যায় কিং কোবরা বা রাজগোখরা, রাসেলস ভাইপার, পিট ভাইপার, পাইথন, ব্যান্ডেড ক্রেইড ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M, Mamun
কুমির দর্শন
জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ – সুন্দরন নিয়ে এরকম প্রবাদ বহুকালের৷ সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকার একটি খালে লোনা জলের এই কুমিরটিকে দেখা গিয়েছিল৷ সুন্দরবনের মহা বিপন্ন এ প্রাণীটি আকারে সাত মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়৷ লোনা পানির কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছরের মতো৷
ছবি: DW/M, Mamun
হরিণের বন্ধু
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে তোলা বানরের ছবি৷ সুন্দরবনে চিত্রা হরিণের পর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ প্রাণীটি৷ সুন্দরবনে বানরকে হরিণের সুহৃদ বলা হয়৷ গাছের ডাল ভেঙ্গে হরিণকে পাতা খেতে বানর সহায়তা করে থাকে৷ এছাড়া বাঘের আগমনের খবরটিও সবার আগে হরিণকে দেয় বানর৷
ছবি: DW/M, Mamun
জঙ্গল উপভোগ
সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের ছোট খালে ঘুরে জঙ্গল উপভোগ করছেন পর্যটকরা৷ সকাল এবং বিকেলে এসব খালে বেড়ানোর সময় অনেক বন্য প্রাণীর দেখা মেলে৷
ছবি: DW/M, Mamun
ভ্রমণতরী
সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে একটি বেসরকারি সংস্থার ভ্রমণতরী৷ সুন্দরবন দেখতে আসা বিদেশি পর্যটকদের বেশির ভাগই আসেন বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থাগুলোর সহায়তায়৷ এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগেরও অভাব অনেক৷
ছবি: DW/M, Mamun
পণ্যবাহী জাহাজের কারণে ডলফিনের মৃত্যু
সুন্দরবনের ভেতরে জঙ্গল ঘেঁষে চলাচল করছে বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ৷ এ সব জাহাজের উচ্চ শব্দ যেমন বন্যপ্রাণীদের বিরক্তির কারণ হয়, তেমনি এসব জাহাজের সৃষ্ট ঢেউ ভাঙন ধরায় সুন্দরবনে৷ এ সব জাহাজের প্রোপেলারের আঘাতে প্রায়ই ডলফিনেরও মৃত্যু ঘটে৷
ছবি: DW/M, Mamun
অপরূপ সূর্যাস্ত
সুন্দরবনের কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে সূর্যাস্তের ছবি তুলছেন এক পর্যটক৷
ছবি: DW/M, Mamun
রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষেই এগিয়ে চলছে রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ৷ এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হয় বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও মানব বসতির ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয় না৷ অথচ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের সংরক্ষিত ও স্পর্শকাতর স্থানের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার৷
ছবি: DW/M, Mamun
13 ছবি1 | 13
জীবজন্তুরা ছিল ভাইয়ের মতো
সেই পূর্বপুরুষরাই পাথরে এই সব চিহ্ন কুঁদে রেখেছেন৷ কয়েকশ' বছর আগেও মালিবু-রা এখানে বাস করত৷ লোস কোলোরাদোস ন্যাশনাল পার্কের কর্মী ফ্রান্সিস্কো ওসোরিও জানালেন, ''সব জীবজন্তুরা ছিল তাদের ভাইয়ের মতো৷ জাগুয়ার নামের চিতাবাঘটা ছিল এক ধরনের দেবতা৷ সেই দেবতাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই প্রতীকটা ব্যবহার করা হতো৷'' কিশোর-কিশোরীরা এই প্রথমবার তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিনতে শিখছে৷ ফ্রান্সিস্কো ওসোরিও বলেন, ''তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভবিষ্যতে জীববিজ্ঞানী হবে, অথবা জীববিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পাবে, বলে আমরা আশা করছি৷ আমরা যদি না রাখি, তাহলে এ সবের কোনো অর্থ নেই৷ আমরা এ বিষয়ে যত কম জানব, আমাদের কাছে এর গুরুত্ব ঠিক ততটাই কম হবে৷''
একটা খেলার মধ্যে দিয়ে কিশোর-কিশোরীরা এই সব পুরনো প্রতীক আর ন্যাশনাল পার্কের জন্তুজানোয়ারদের চিনতে শিখছে৷ স্কুলের ছাত্রী মারিয়া হোসে অর্তেগা মেলেন্দে বলে, ''প্রথমবার দেখলে খুব আশ্চর্য লাগে৷ ঠিক বর্ণনা করা যায় না৷ এখানে বেশ কিছু অদ্ভুত জীবজন্তু আছে৷''
একটি জীবের আর দেখা পাওয়া যায় না: সেটি হল জাগুয়ার৷ তবে সে আবার ফিরবে বলে সকলের আশা৷ জাগুয়ারের সম্মানে আর মালিবুদের স্মরণে হর্খে ও তাঁর সহকর্মীরা 'জাগুয়ার ফেস্টিভালের' আয়োজন করেছেন৷ বছরে একবার করে শহরের মানুষরা আসেন, প্রকৃতির কোলে প্রকৃতিকে উদযাপন করতে৷ হর্খে এবং পার্ককর্মীদের পক্ষে এই উৎসব সফল হয়েছে৷ তাঁদের কথায়, ''আমরা খুশি, সুখি৷ আমরা আশা করছিলাম যে অনেকে আসবেন আর ঘটেছেও তাই৷ সেটাই হলো আমাদের নীতির সাফল্য৷ কাজেই আমি খুব খুশি যে এতো কচিকাঁচারা এসেছে৷''
এই সব ছেলে-মেয়েরা যদি পরিবেশ সচেতন হয়ে বড় হয়ে ওঠে, তাহলে তারাই ন্যাশনাল পার্ক রক্ষায় সাহায্য করবে, বলে হর্খের আশা৷
বর্ষায় আরো সুন্দরী সুন্দরবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এই বনের প্রধান গাছটির নাম সুন্দরী৷ আর তার থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ৷ ঋতুতে ঋতুতে এ বনের চরিত্র বদলায়৷ তবে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিলাম মেপে’
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সুন্দরবনে বর্ষা আসে মে মাসে আর সেই বর্ষাকাল চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অবশ্য জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৪০-২০০০ মিমি৷ তবে বনের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটা
প্রতিদিন দু’বার করে জোয়ার-ভাটা হয় সুন্দরবনে, যা কিনা বাংলাদেশ ও ভারত – প্রতিবেশী এই দুই দেশের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত৷ এখানে সবচেয়ে বড় জোয়ার হয় পূর্ণিমা ও অমাবস্যায়৷ তবে বর্ষাকালে জোয়ারের উচ্চতা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ এ সময় বনের বেশিরভাগ অংশই প্লাবিত হয়, ডুবে যায় সবকিছু৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাবারের সন্ধানে হরিণসাবক
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হলে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলোয় আশ্রয় নেয়৷ এরপর জোয়ারের পানি নেমে গেলে খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে তারা৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বহু পর্যটক – বন্যপ্রাণী দেখবেন বলে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’
বর্ষায় সুন্দরবনে পর্যটকের আনাগোনা বেশ কম৷ এ বনে পর্যটনের মৌসুম মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ৷ তবে বর্ষার সুন্দরবনকে দেখতে কিছু কিছু ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এখানে আসেন বটে৷ আর সেই সব পর্যটকদের চাহিদার কারণেই সম্প্রতি দু-একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বর্ষাকালে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে, দিচ্ছে বিশেষ ‘প্যাকেজ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
তারপরেও পরিত্যক্ত বহু এলাকা
বর্ষা মৌসুমে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি পর্যটক ট্রেল৷ এ সময়ে পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় এই হাঁটা পথের ওপরে জমা হয়েছে বিভিন্ন গাছের ফল৷ আসলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য হলেও, বেশ কিছু ফল গাছও আছে সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরী বন সুন্দরবন
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ভেসে আসে এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী গাছের ফল৷ ভেসে যায় আশেপাশের কোনো এলাকায়৷ তবে সুন্দরী গাছের বন সুন্দরবনে এমন একটা দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায় কেবলমাত্র বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জঙ্গলের বিস্তার, সুন্দরেরও
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরী ফলের অংশ বিশেষ ভাটার সময় জঙ্গলে থেকে যায়৷ তারপর সেখান থেকেই অঙ্কুর গজায়, গাছ হয়, ফুল ফোটে, ফল দরে৷ এভাবেই বিস্তার ঘটে সুন্দরী গাছ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের৷ প্রকৃতির এ নিয়মেই বেড়ে উঠেছে সুন্দরবনের বেশিরভাগ বনাঞ্চল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের বানর
সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা বানর৷ ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় এই বনে বেড়াতে গেলে তাই এদের চোখে পড়বেই৷ কখনও একা একা, আবার কখনও দঙ্গল বেধে ঘুরে বেড়ায় এরা৷ তবে বৃষ্টির সময় এদের গাছের ডালেই আশ্রয় নিতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলে লুকোচুরির খেলা...
বর্ষাকালে সুন্দরবনে চলে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি৷ ঝকঝকে রোদের মধ্যে হঠাৎ করেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায় এখানে৷ গাড় হয়ে ওঠে নদীর জল, বনের সবুজে পড়ে ছায়া৷ কখনো কখনো মেঘের ভেতর থেকেই সূর্য উঁকি মারে, অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় বনজুড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে’
কখনও আবার তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে হঠাৎ করেই ঝকঝকে নীলাকাশ দেখা যায় সুন্দরবনে৷ বৃষ্টিধৌত বনে সূর্যের আলো তখন ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে৷ ঝলমল করে ওঠে নদী, বনের গাছ৷ বৃষ্টি একটু ধরলে আস্তে আস্তে নদীর ধারে চড়তে আসে বানর, হরিণ, এমনকি বাঘ মামাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার এক ভিন্ন চিত্র
সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়রাণ্যে বৃষ্টিস্নাত এক ‘গ্রেটার ইয়োলোনেইপ’ বা বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা৷ নানা রকম পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই সুন্দরবন৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে সুন্দরী গাছের এ বনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস
সুন্দরবনের কটকা বনাঞ্চলের বড় কটকার খালে চোখে পড়ে ‘মাস্কড ফিনফুট’ বা সুন্দরী হাঁস৷ এর আরেক নাম কালোমুখ প্যারা পাখি৷ বাংলাদেশের সুন্দরবন ও মিয়ানমারে এ হাঁসের বিচরণ সবচেয়ে বেশি৷ সারা পৃথিবীতে বর্তমানে এ পাখির সংখ্যা এক হাজারেরও কম৷ লাজুক স্বভাবের সুন্দরী হাঁসের বৃহত্তম আবাসস্থলও সুন্দরবন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জেলেদের জীবন
সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জয়মনি জেলে পল্লীর পাশে পশুর নদীতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছেন জেলেরা৷ সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ এ জেলে পল্লীর জেলেরা সুন্দরবন ও তার আশেপাশে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের পর...
সুন্দরবনের শেলা নদীতে চলছে তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী জাহাজ৷ গত ডিসেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে জাহাজ ডুবির পরও এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি৷ এছাড়া সাম্প্রতিক বাঘশুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ হিসেবেও এই নৌ-রুটটিকে দায়ী করা হচ্ছে৷