1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ল্যাপটপ, আইফোন 'মেইড ইন সৌদি অ্যারাবিয়া': গুজব না বাস্তবতা?

২৯ মে ২০২৫

সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন সরকার আরোপিত উচ্চ শুল্ক এড়িয়ে গেছে। অতীতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি প্রায়ই উচ্চ মূল্য এড়াতে কম শুল্কের দেশগুলোতে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতো। মধ্যপ্রাচ্যেও কি সেরকম ঘটতে যাচ্ছে?

সৌদি আরবে আবশের অ্যাপের লঞ্চের লোগো দেখা যাচ্ছে স্ক্রিনে৷ তার অন্যপাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি৷
সৌদি সরকার সক্রিয়ভাবে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করে ও সব স্তরের দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীদেরও আকৃষ্ট করতে ইচ্ছুক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ছবি: Fayez Nureldine/AFP via Getty Images

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীন এবং অন্যান্য এশীয় দেশগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পর থেকেই ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে 'মেইড ইন সৌদি অ্যারাবিয়া'-র ধারণা।

ইতিহাসবিদ এবং ২০১৮ সালে "সৌদি, ইনকর্পোরেটেড: দ্য অ্যারাবিয়ান কিংডমস পারসুইট অফ প্রফিট অ্যান্ড পাওয়ার" বইয়ের লেখক এলেন ওয়াল্ড গত মাসে মিডিয়া আউটলেট মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, "সৌদি আরবের উচিত এখনই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তাদের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের পাঠানো, জিজ্ঞাসা করা যে, 'চীন আপনাকে কী সরবরাহ করছিল? আমাদের বলুন, এটা কী এবং আমরা সৌদি আরবে সেটা তৈরি করবো'।"

চীন, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশগুলো অ্যাডিডাস থেকে অ্যাপল পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানির উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র। তারা ল্যাপটপ থেকে ট্র্যাকস্যুট পর্যন্ত সবকিছুই তৈরি করে। কিন্তু এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে।

অন্যান্য দেশগুলো ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক থেকে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশিরভাগ উপসাগরীয় দেশগুলোতে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক অতীতে উচ্চ শুল্ক এড়াতে কোম্পানিগুলো যে বিকল্প ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে কম শুল্কযুক্ত দেশগুলোতে উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করা। অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর আগেই মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই কাজ শুরু করেছে। ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড এই খাতে ভালো করার এটিও একটি কারণ।

মধ্যপ্রাচ্যই পরবর্তী গন্তব্য?

সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, দুই দেশই তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে তাদের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে উচ্চ-প্রযুক্তি খাতে উৎপাদন এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আরব আমিরাতের ২০২১ সালে চালু করা 'অপারেশন ৩০০ বিলিয়ন' এর অধীনে জাতীয় আয়ে স্থানীয় শিল্প খাতের অবদান ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি দিরহাম (এক দিরহাম = প্রায় ৩৩ টাকা) এ উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌদি আরবের রয়েছে ভিশন ২০৩০, যার লক্ষ্য স্থানীয় উৎপাদন এবং শিল্প বৃদ্ধি করা।

এরই মধ্যে মার্কিন ব্র্যান্ড ডেল এবং এইচপিসহ বিশ্বের কয়েকটি বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবে নতুন কারখানার জন্য জায়গা খুঁজছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। চীনা কোম্পানি লেনোভো সেখানে একটি কম্পিউটার এবং সার্ভার অ্যাসেম্বলি কারখানা তৈরি করছে। সৌদি কোম্পানি আলাত প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার (এক ডলার = প্রায় ১২০ টাকা) রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে জাপানের সফটব্যাংক গ্রুপের সঙ্গে শিল্প রোবোটিক্স খাতে সহযোগিতা করছে। পরবর্তীতে স্থানীয় শ্রমিক ঘাটতি পূরণের জন্য অ্যাসেম্বলি লাইনে রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যাপলের আইফোনের প্রধান সরবরাহকারী চীনের ফক্সকন এবং তাইওয়ানের কোয়ান্টাকেও আকৃষ্ট করছে সৌদি আরব। ডেলের মতো কোম্পানির জন্য কম্পিউটার এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশও তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।

যুক্তরাজ্যের থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের সহযোগী ফেলো ডেভিড বাটার ডিডাব্লিউকে বলেন, "কয়েক ডজন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা এশিয়ান দেশগুলোর উপর উচ্চ শুল্কের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে, এই আশায় যে তারা মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।"

ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দুই দিকই রয়েছে

কাতার-ভিত্তিক মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বা এমই কাউন্সিলের গবেষণা পরিচালক নাদের কাব্বানি ব্যাখ্যা করেছেন, "সৌদি আরবের মতো দেশগুলো উচ্চ শুল্ক এড়াতে বা নিজেদের চারপাশের অনিশ্চয়তা প্রশমিত করতে চাওয়া ব্যবসাগুলোর জন্য আপেক্ষিক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারে।"

সৌদি আরবের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই কাজে সহায়তাও করবে বলে মনে করেন কাব্বানি।

তিনি বলেন, "(সৌদি আরবের) প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে তেলও আছে। এর একটি বৃহৎ দেশীয় বাজার রয়েছে। এটি কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে।"

ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "সরকার সক্রিয়ভাবে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করে। যথেষ্ট উন্নত অবকাঠামোও রয়েছে এবং সব স্তরের দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীদেরও আকৃষ্ট করতে ইচ্ছুক।"

এই অঞ্চলের যে কিছু সুবিধা আছে সে ব্যাপারে একমত নীতি পরামর্শদাতা এবং এমই কাউন্সিলের একজন সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ফ্রেডেরিক শ্নাইডারও । কাব্বানীর বলা সুবিধার তালিকায় তিনি যোগ করেছেন, উপসাগরীয় দেশগুলির বৃহৎ লজিস্টিক শিল্প, কম বা করবিহীন ব্যবস্থার কথা। দুর্বল মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রাগুলোর সংশ্লিষ্ট থাকার ফলে সেখান থেকে রপ্তানিতেও খরচ কম পড়তে পারে এবং এর ফলে ব্যবসাও আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।

তবে সম্ভাব্য অসুবিধাগুলোর তালিকাও সমান দীর্ঘ।

শ্নাইডার ডিডাব্লিউকে বলেন, "বিদ্যমান উৎপাদনব্যবস্থা এখনো তুলনামূলকভাবে অনুন্নত এবং মূলত হাইড্রোকার্বন খাত সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে সীমাবদ্ধ।"

তিনি বলেন, "সৌদিরা যদি উচ্চ-প্রযুক্তি উৎপাদনে প্রতিযোগিতা করতে চায়, তবে তাদের চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। নিম্ন-প্রযুক্তি খাতে, তারা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করছে।

শ্নাইডার উল্লেখ করেন, "এই দেশগুলো বিভিন্ন অসুবিধায় ভুগলেও তাদের অনেক দশকের অভিজ্ঞতা, বিদ্যমান অবকাঠামো, বৃহৎ দেশীয় বাজার এবং মানবশক্তি রয়েছে।"

শ্নাইডারের উল্লেখ করা আরো নানা নেতিবাচক দিকের মধ্যে রয়েছে, রক্ষণশীল উপসাগরীয় সম্প্রদায়গুলোতে বিদেশীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অঞ্চলটি অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততর উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এবং ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের কারণে চলমান ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

তিনি বলেন, "প্রকল্পের ঝুঁকিও বিশাল, যদিও এই অঞ্চল প্রযুক্তির দিক থেকে নানা কিছু 'প্রথম' করতে চায়, এর অনেককিছুই আর বাস্তবায়িত হয় না।" এ বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে, ব্যর্থ হওয়া ড্রোন ট্যাক্সি এবং হাইপারলুপের মাধ্যমে ভ্রমণের পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগে ভুল এবং পরিত্যক্ত বা ছোট আকারের নির্মাণ প্রকল্পগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি।

সৌদি আরবে নানা পরিকল্পনার সমালোচনায় সরব নেভার নিওম নামে একটি গোষ্ঠী। নেভার নিওম তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, "[সৌদি পরিকল্পনায়] যা আছে, তা হচ্ছে বিনিয়োগের অস্পষ্ট ঘোষণা, বেশিরভাগই বিদেশী অংশীদারত্ব এবং এখনও কাগজে কলমে থাকা প্রকল্প।"

ভবিষ্যত সৌদি শহর নিওমের জন্য বিশাল পরিকল্পনার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের ফেসবুক পেইজ রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে যুক্ত থেকে "অযৌক্তিক আচরণ" এর অভিযোগে ব্লক করে দিয়েছিল সৌদি সরকার। তবে গ্রুপটির নানা বিবৃতিতে সৌদি উৎপাদন দক্ষতা সম্পর্কে বেশ কিছু পালটা যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক: কী করবে ইউরোপ?

02:25

This browser does not support the video element.

সবার উপরে বাণিজ্য যুদ্ধ

তাহলে কি সবই কি শুধু প্রচারণা?

সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার অনেক নতুন কারখানা তৈরি করছে। তেলের বাইরেও অন্য খাত প্রতি বছর জাতীয় আয়ে আরও বেশি অবদান রাখছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চ আন্তর্জাতিক শুল্ক এবং সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলবে।

তেলের দাম কম থাকার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের মহাপরিকল্পনাগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য অর্থাভাবে পড়েছে। এর ফলে সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ কর বৃদ্ধি পেয়েছে।

শ্নাইডার মনে করেন, "এটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যয় সুবিধাকে বিপন্ন করতে পারে।" বিশ্বব্যাপী মন্দা তেলের দাম আরও কমিয়ে আনবে এবং এর ফলে লজিস্টিক হাব হিসেবে এই অঞ্চলের ভূমিকাও কমে আসতে পারে।

কাব্বানি মনে করেন, "বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক মন্দা এবং তেলের রাজস্বের ক্ষতি, নিম্ন-শুল্কের সুবিধাকে ছাড়িয়ে যাবে।"

কাথরিন শায়ের/ এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ