প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ব্রিটেন – বিশেষ কয়েকটি দেশ থেকে বিমানযাত্রার ক্ষেত্রে নতুন ফরমান জারি করেছে৷ মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যাত্রীরা এই দুই দেশের উদ্দেশ্যে বিমানযাত্রা করতে পারবেন না৷
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নতুন বিষয় নয়৷ নাইন-ইলেভেনের পর থেকেই তরল পদার্থ সহ অনেক জিনিসের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ ‘কেবিন ব্যাগেজ’ হিসেবে এ সব নিয়ে বিমানে ওঠা মানা৷ কখনো জুতো ও কোমরের বেল্ট খুলে পরীক্ষা করা হয়৷ ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটও হাতের ব্যাগ থেকে বার করে আলাদা করে স্ক্যান করতে হয়৷ এবার কোপের মুখে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনগামী বিমানে মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস কাছে রাখা যাবে না৷ কাউন্টারেই ‘চেক ইন’ মালপত্রের মধ্যে সেগুলি রাখতে হবে৷ বিশেষ কিছু দেশের বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে আগামী শনিবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে৷ মার্কিন তালিকায় রয়েছে মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ১০টি বিমানবন্দর, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ছ'টি দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে৷
বলা বাহুল্য, এমন সিদ্ধান্ত বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে অ্যামেরিকা যেতে যে দীর্ঘ সময় লাগে, বিশেষ করে পেশাগত ও ব্যবসার কারণে অনেকেই সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে বিমানে বসে বহু কাজ সেরে ফেলেন৷ তাঁদের জন্য এটা অবশ্যই একটা অসুবিধার কারণ৷ অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন৷ প্রথমত ল্যাপটপ অথবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে বোমা তৈরি করার উদ্দেশ্য থাকলে সন্ত্রাসবাদীরা অন্য বিমানবন্দর থেকে বিমানে উঠতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, মালপত্রের মধ্যে ল্যাপটপ থাকলেও বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে৷ অনেকের মতে, আসলে মধ্যপ্রাচ্যের সফল বিমানসংস্থাগুলিকে বিপাকে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
সাধারণ যাত্রীরাও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন৷ কেউ কেউ হাস্যরসের আশ্রয় নিচ্ছেন৷
বিমান সংস্থা এমিরেটস-এর বিজ্ঞাপনেও বিষয়টি উঠে এসেছে৷
বিমানযাত্রা কতটা নিরাপদ?
বিমানে সন্ত্রাসী হামলা, বিমান ছিনতাই থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে হামলার একাধিক ঘটনার জের ধরে গোটা বিশ্বেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ধারাবাহিকভাবে জোরদার করা হচ্ছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অঘটন ঘটছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ
যাত্রীর পোশাকে ধাতু অথবা বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ তবে যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা সেই কাজ করছেন, তারাও মানুষ৷ ফলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নজর এড়িয়ে দুষ্কৃতি বিমানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
গাফিলতির দৃষ্টান্ত
ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট৷ কিন্তু সেখানেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্মীদের নজর ফাঁকি দিয়ে বিপজ্জনক বস্তু পাচার করার ঘটনা বিরল নয়৷ চলতি দশকের শুরুতে ইইউ কমিশনের প্রতিনিধিরা গোপনে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, যে অস্ত্র সহ বিপজ্জনক বস্তু নিয়ে সিকিউরিটি চেক পেরিয়ে যাওয়া মোটেই কঠিন নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বডি-স্ক্যানার
নিরাপত্তা কর্মীদের ভুল এড়াতে অনেক বড় বিমানবন্দরে চালু হয়েছে বডি-স্ক্যানার৷ ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক কম নয়৷ কারণ এ ক্ষেত্রে মনিটারের পর্দায় যাত্রীদের শরীর অনেকটাই উন্মোচিত হয়৷ তাই অনেক বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বেচ্ছায় এই প্রক্রিয়া বেছে নেবার সুযোগ দেওয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Fotografia
মালপত্রের উপর নজরদারি
যে সব ছোট আকারের মালপত্র সঙ্গে নিয়ে যাত্রীরা বিমানে উঠতে পারেন, সেগুলিও বিপদের উৎস হতে পারে৷ তাই স্ক্যানারের মাধ্যমে সেগুলি পরীক্ষা করাও জরুরি৷ তবে শুধু বিমানবন্দর নয়, মালপত্রের স্ক্যানারের ব্যবহার অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
বিপজ্জনক বস্তুর সংজ্ঞা
প্রায় প্রত্যেক বড় মাপের হামলার জের ধরে বিপজ্জনক বস্তুর তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে৷ জুতার মধ্যে বিস্ফোরক পাচারের প্রচেষ্টার পর যাত্রীদের জুতা খুলে স্ক্যানারে দিতে হয়৷ তরল বা মলম জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বিমানেই বিস্ফোরক তৈরির ঝুঁকি এড়াতে এমন দ্রব্যের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৪ সাল থেকে অবশ্য ইউরোপে এই নিয়ম আবার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেলজিয়ামে বিমানবন্দরে হামলা
সাম্প্রতিক কালে শুধু বিমান নয়, বিমানবন্দরও বার বার সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে৷ ২০১৬ সালের ২২শে মার্চ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার ঘটনার পর সার্বিকভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ইউরোপে সাধারণত বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
ইস্তানবুলে হামলা
২০১৬ সালের ১লা জুলাই তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৪৪ জন নিহত হয়৷ আত্মঘাতী হামলাকারীরা অনেক মানুষকে জিম্মি করারও ষড়যন্ত্র করেছিল বলে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম দাবি করে৷ এত বড় আকারে হামলার জের ধরে গোটা বিশ্বে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷