‘ল্যোভ’ মানে সিংহ : জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ
১ জুন ২০১০২০০৪ সালের সেই ঝোড়ো দিনগুলোর কথা জার্মান ফুটবল রসিকদের খুব ভালোই মনে আছে৷ ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং রুডি ফ্যোলার'এর পদত্যাগের পর নতুন জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান'এর সহকারী হিসেবে দলে আসেন ‘ইয়োগি' ল্যোভ৷ ক্লিন্সমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় দু'জনে যখন হেনেফে ট্রেনার হবার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, সে আমল থেকে৷ - ২০০৬ সালে ক্লিন্সমান তাঁর চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর ফলে ল্যোভ'কে নতুন জার্মান কোচ হিসেবে পেশ করা হয়৷
মজার কথা এই যে, জার্মান জাতীয় ফুটবলে ল্যোভের যুগ শুরুই হয় কিন্তু পর পর পাঁচটি জয় দিয়ে: তার মধ্যে প্রথম চারটি খেলায় জার্মানি কোনো গোল না খেয়ে ১৯টি গোল দিয়েছে৷ পঞ্চম খেলাটিতে জার্মানি স্পেনের বিরুদ্ধে জেতে ৪-১ গোলে৷ এ'সবের অর্থ হল যে, ল্যোভের মতো এরকম একটি সফল সূচনা আর কোনো কোচ দেখাতে পারেননি৷ আবার এই ল্যোভের কোচিং-এই জার্মান একাদশ সুদীর্ঘ ১২ বছর পরে আবার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের নক-আউট পর্যায়ে পৌঁছয় - ২০০৮ সালে৷ আর এটা হল ২০১০ সাল৷
এখন প্রশ্ন ওঠে, কে এই ল্যোভ? তাঁকে বেকেনবাউয়ার, রুডি ফ্যোলার কি ক্লিন্সমানের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না৷ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তাঁর পূর্বসুরীদের মতো স্বনামধন্য কি প্রখ্যাত ছিলেন না৷ আর কোচ হিসেবে তিনি কি করার ক্ষমতা রাখেন, তা বোঝা যাবে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায়৷ - খেলোয়াড় হিসেবেও ল্যোভের ক্যারিয়ারটা অদ্ভূত: প্রায় সাত বছর ধরে মোটামুটি ফ্রাইবুর্গ এবং কার্লসরুহে'র মধ্যেই বদলা-বদলি করেছেন৷ সে-আমলে সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাব ফ্রাইবুর্গের হয়ে তিনিই আজ অবধি সর্বোচ্চ গোলন্দাজ৷
কোচ হিসেবেও ল্যোভ'কে দেখা গেছে তুরস্কের ফেনারবাচে এবং আদানাস্পর থেকে শুরু করে জার্মানির স্টুটগার্ট এবং অস্ট্রিয়ার টিরোল ইন্সব্রুক ও অস্ট্রিয়া ভিন অর্থাৎ ভিয়েন্নায়৷ এর মধ্যে এক ১৯৯৭-তে স্টুটগার্টকে নিয়ে জার্মান কাপ জয় করা ছাড়া তিনি কোথাও সূর্য-নক্ষত্রের আগুন জ্বলা ছাপ রেখে যেতে পারেননি৷ তবুও জার্মানদের প্রায় ৪০ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে, জার্মানি এবার বিশ্বকাপ জিতবে৷
তার কারণ সম্ভবত এই যে, ল্যোভের আমলেই জার্মান ফুটবল এবং জাতীয় একাদশের একক খেলোয়াড়রা জার্মান ফুটবল সমিতি ডিএফবি এবং খ্যাতনামা কোচদের পাহাড়প্রমাণ ভার থেকে মুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে তাদের নিজস্ব শৈলী সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে৷ এবং বালাক সহ পর পর এতোগুলি খেলোয়াড় বাদ পড়া সত্ত্বেও যে ল্যোভ কাউকে নতুন করে মনোনীত করার কথা ভাবছেন না, সেটাই প্রমাণ করে যে, তিনি তাঁর কন্সেপ্ট সম্পর্কে কতোটা নিশ্চিত৷ সেটা শুধু ৪-২-৩-১-ই নয়৷ এই নীরব কর্মীটি জানেন, দল কিভাবে চালাতে হয়, ক্যাপ্টেন কিভাবে বাছতে হয়, কা'কে কতোটা দায়িত্ব দিতে হয়৷ চমকপ্রদ নয় বলেই জার্মানির এই কোচটি খেয়াল করার মতো৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ