কলকাতায় এনআরসি এবং ক্যাবের বিরুদ্ধে যৌথ মঞ্চের সমাবেশে সমালোচনা হলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও৷ প্রশ্ন উঠলো, তিনি কেন এনপিআরএর বিরোধিতা করছেন না?
বিজ্ঞাপন
তৃণমূল কংগ্রেস যতদিন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আছে, নাগরিক পঞ্জিকরণ বা এনআরসি এবং সোমবারই সংসদে পেশ হওয়া প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, বা সিএবি রাজ্যে চালু হতে দেওয়া হবে না৷ খড়গপুরে তাঁর দলের সাম্প্রতিক নির্বাচনি সাফল্যের উদযাপন সভায় সোমবার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ বললেন, তাঁরা থাকতে এই দেশের একজন নাগরিককেও উদ্বাস্তু হতে দেওয়া হবে না৷
মূলত এনআরসিবিরোধিতার হাওয়াতেই পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া তিনটি উপনির্বাচনে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এবং বিজেপি শুধু হারেইনি, এনআরসি নিয়ে তারা এখন কার্যত ব্যাকফুটে৷ কিন্তু মমতা, বা তাঁর দল এনআরসিবিরোধী মনোভাবকে নিজেদের রাজনৈতিক এবং নির্বাচনি সাফল্যের পক্ষে কাজে লাগালেও ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার', বা এনপিআর নিয়ে নীরব রয়েছেন কেন? প্রশ্ন উঠলো সোমবার, কলকাতায় এনআরসিবিরোধী যৌথ মঞ্চের সভায়৷ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের যে সঙ্ঘবদ্ধ সমাবেশে এদিন হাজির ছিলেন সিপিআই নেতা এবং দেশের যুব আন্দোলনের অন্যতম মুখ কানহাইয়া কুমার৷
মমতা ব্যানার্জি এদিন খড়গপুরের সভায় বলেছেন, এনআরসি এবং সিএবি একই মুদ্রার দুপিঠ৷ যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রসেনজিৎ বসুর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে তিনি একইভাবে এনপিআরকে অস্বীকার করছেন না কেন? এটা দ্বিচারিতার শামিল৷ মমতা এবং সরকার যদি এনপিআর নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার না করে, তা হলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামবে যৌথ মঞ্চ৷''
আপাতত ‘পাহাড় থেকে সাগর' নামে এনআরসি, সিএবি নিয়ে এক সচেতনতা পদযাত্রা করছে যৌথ মঞ্চ৷ যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়৷ পথসভা করছে৷ এবং সেটা করতে গিয়ে মঞ্চের কর্মীদের অভিজ্ঞতা হলো, একেক জায়গায় মানুষ তাঁদের কাছ থেকেই প্রথম শুনছেন নাগরিকত্ব নিয়ে এই বিতর্কের কথা৷ তুলনায় বেশি সচেতন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো৷ যেহেতু উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে ওই অঞ্চলের যোগাযোগ বেশি৷ আসামে এনআরসি চালু করার প্রভাব উত্তরবঙ্গেও এসে পড়ছে৷ তেমনই সচেতন কলকাতা শহর এবং শহরতলী৷ কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গাতেই মানুষ এখনো সচেতন নন আসন্ন বিপদ সম্পর্কে৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক কেন
ভারতের সংসদে পেশ হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। পেশ করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। উত্তাল সংসদ। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি এই বিল সংবিধান সম্মত? দেখে নেব কেন এই বিতর্ক?
ছবি: REUTERS/A. Hazarika
নাগরিকত্ব আইন
১৯৫৫ সালে ভারতের সংসদে পাশ হয় নাগরিকত্ব বিল। সেখানে বলা হয়, বিদেশিরা যদি এ দেশের নাগরিক হতে চান, তা হলে অন্তত ১১ বছর এ দেশে বসবাস করতে হবে। নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের কোনো উল্লেখ ছিল না।
ছবি: DW/P. Mani Tiwari
সংশোধনী বিল
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের প্রসঙ্গটি তোলে। ২০১৬ সালে তারা প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তৈরি করে। সেখানে পুরোনো আইনে বেশ কিছু সংশোধনের কথা বলা হয়।
ছবি: Reuters
সংশোধনে ধর্ম
নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে যে বিল পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, চাকমা, জৈনদের এ দেশে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। এবং তাঁদের নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হবে।
ছবি: PIB Govt. of India
বিজেপির ব্যাখ্যা
বিজেপি-র বক্তব্য হল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে সে দেশের সংখ্যালঘুরা ভারতে আসেন। তাই তাঁদের দ্রুত এ দেশে নাগরিকত্ব দিতে চায় সরকার। ১১ বছর নয়, ৫ বছর তাঁরা এ দেশে থাকলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ছবি: DW/P. Mani
ধর্ম কেন
বিরোধীদের প্রশ্ন, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এভাবে ধর্মের উল্লেখ করে আইন তৈরি কি আদৌ সম্ভব? প্রতিবেশী দেশ থেকে কেউ এ দেশে নাগরিকত্ব চাইলে ভারত অবশ্য়ই তাঁকে সাহায্য় করবে। কিন্তু তার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay
সংসদ উত্তাল
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার পরেই সরব হয় বিরোধী পক্ষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মের ভিত্তিতে এ ভাবে আইন সংশোধন বিরোধীরা মেনে নেবে না। এর ফলে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। যা ভারতের সংবিধান বিরোধী।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
এরপর কি এনআরসি
বিরোধীদের প্রশ্ন, এরপর কি গোটা দেশে আসামের মতো জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি করবে সরকার? গোটা দেশ জুড়ে তৈরি হবে অসংখ্য ডিটেনশন ক্যাম্প?