1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শঙ্কা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার অপেক্ষা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ মার্চ ২০২২

অতীত অভিজ্ঞতা শঙ্কা জাগালেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আত্মবিশ্বাস নিয়েই ডয়চে ভেলেকে বললেন, “আগামী ২৬ মার্চ ইনশাল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে৷’’

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের সদস্যরা৷ ফাইল ছবি
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যরা৷ ফাইল ছবিছবি: Reuters

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী  মনে করছেন, যাদের আপিল প্রক্রিয়াধীন, তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে না।তালিকাটা এবার বিতর্কমুক্ত হবে৷

এর আগে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করে চরম বিতর্কের মুখে তা প্রত্যাহার করেছিল সরকার। গত ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা-সংযোজন বিয়োজন করে অন্তত ৭ বার প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধার মানদণ্ড বদলেছে ১১ বার। এত করেও এতদিন বিতর্কমুক্ত করা যায়নি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। 

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন অবশ্যমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করারই কোনো মানে দেখেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "আমি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার পক্ষেই না। তা-ও একবার হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু বারবার কেন সুযোগ-সুবিধার নামে এই তালিকা করতে হবে? এভাবে তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে।”

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল  (জামুকা)-র চূড়ান্ত সুপারিশ করা তালিকা এবার প্রকাশ করা হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদাধিকার বলে এই কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২৬ মার্চ যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেটা পূর্ণাঙ্গ না। জামুকার বর্তমান কমিটির মেয়াদ গত ৫ মার্চ শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন এই কমিটিতে কাজ করার সুযোগ হয়েছে এমন একজন সদস্য বলেন, ‘‘এবারের তালিকাও বিতর্কমুক্ত হবে বলে আমার মনে হয় না। তবে জামুকা শুদ্ধ একটি তালিকা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে। পুরোপুরি সফল হয়েছে, সেটা বলা হবে না।’’

একজনবীর মুক্তিযোদ্ধা  বর্তমানে মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, পাঁচ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং দুই হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কারণে তালিকায় নাম উঠাতে অনেকেই চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরাও আছেন। এমনকি অর্থমন্ত্রী আ ন হ মোস্তাফা কামালও আবেদন করেছিলেন, তবে তার আবেদন বাতিল করেছে জামুকা। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ১০ বছরের কম হওয়ার পরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কারো বয়স ন্যূনতম সাড়ে ১২ বছর না হলে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। আর অর্থমন্ত্রীর কাগজপত্র সঠিক মনে না হওয়ায় তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে।’’ এর আগে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপেতে চেয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতো কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘‘চাইলে মামলা করা যায়। কিন্তু কতশত মামলা করবেন?’’

‘‘অর্থমন্ত্রীর কাগজপত্র ঠিক মনে না হওয়ায় আবেদন বাতিল হয়েছে’’

This browser does not support the audio element.

ভুয়া কাগজপত্র দাখিলের পরও কেন সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, কারণ, তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার। এভাবে চলতেই থাকবে। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’’

জামুকায় দীর্ঘদিন কাজ করা আরেক সদস্য বলেন, ‘‘আমি চেষ্টা করেছি যাদের কাগজপত্র সঠিক নেই তাদেরটা বাতিল করার। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘মিটিংয়ে অনেকেই তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কাগজপত্র দেখে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ফলে বলেছি, এটা সেনাবাহিনীতে পাঠানো হোক। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি। পরে তা সবাই মেনে নিয়েছেন।” আওয়ামী লীগের আরেক এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ'র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তার কাগজপত্র দেখেও সন্তুষ্ট হতে পারিনি।”

প্রসঙ্গত, এবার ২৬ মার্চ প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধারনামের সমন্বিত তালিকা প্রকাশিত করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। যাদের ব্যাপারে জেলা-উপজেলায় তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তারা এ তালিকা থেকে আপাতত বাদ থাকবেন। আগে ১ লাখ ৯৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে মাসে ভাতা পাঠানো হতো। ভাতা পাওয়া সব বীর মুক্তিযোদ্ধার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকার ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করার পর এ সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ