ক্রিকেট পিচ থেকে বিদায় নিলেও ফেসবুক, টুইটার থেকে বিদায় নিচ্ছেন না শচীন টেন্ডুলকার৷ ভক্তরা তাঁকে আগের মতোই পাবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ এমনকি তিনি ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি চ্যাটেও অংশ নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে একজন ব্যক্তির জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বিচারে ব্যবহার করা হয় ফলোয়ার বা লাইকের সংখ্যা৷ সেই সংখ্যার বিচারে মোটেই পিছিয়ে নেই ‘ক্রিকেট ঈশ্বর' খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার৷ ১৪ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত ফেসবুকে তাঁর আনুষ্ঠানিক পাতায় ভক্তের সংখ্যা ছিল ১১,৯৭৯,৪৬১৷ বলা বাহুল্য প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা শুধু বাড়ছে৷ শচীন তাঁর এই ভক্তদের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখছেন৷ যেমন বুধবার এক পোস্টে ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, ‘‘এখন তুমি আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারো, ক্লিক করো এখানে – (একটি লিংক)৷''
ক্রিকেট ঈশ্বরের অবসর, শেষ শচীন যুগ
দীর্ঘ দুই যুগে ব্যাট হাতে ২২ গজ কাঁপিয়েছেন তিনি৷ হতাশা, দুঃখ ভুলে যেত একজনের ব্যাটিং-এর মধ্য দিয়ে৷ টানা ২৪ বছর ধরে বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দে মাতিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার৷ বিদায় বেলায় তাই বেদনাতুর তাঁর ভক্তকূল৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
শচীন যুগের অবসান (১৯৮৯-২০১৩)
গত দুই যুগে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের ২৪ বছর কেটে গেলেও তাঁকে নিয়ে কমেনি ভক্তদের মাতামাতি৷ ভবিষ্যতেও হয়ত তাঁকে নিয়ে এই উন্মাদনা এমনই থাকবে৷ কিন্তু ক্রিকেট ব্যাট হাতে আর দেখা যাবে না শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
শুরু এবং শেষ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের পথচলা শুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে৷ অভিষেক ইনিংসে সংগ্রহ মাত্র ১৫ রান৷ ১৯৯৪ সালের ক্রিকেট জীবনের প্রথম শতকের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷ ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট খেলে ঘরের মাঠ মুম্বই থেকেই বিদায় এই ক্রিকেট মহানায়কের৷
ছবি: Ben Radford/Allsport
পরিবার যেখানে অনুপ্রেরণা
১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বইতে জন্ম শচীনের৷ বাবা ঔপন্যাসিক রমেশ টেন্ডুলকার বরাবরই ছিলেন ক্রিকেটের প্রেরণা৷ ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক অঞ্জলি মেহতাকে বিয়ে করেন ক্রিকেটের মহানায়ক, যিনি বরাবরই ক্রিকেটে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁকে৷ তাঁদের দুই সন্তান সারা এবং অর্জুন টেন্ডুলকার৷
ছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images
দুঃখে ভারক্রান্ত ভক্তরা
কেবল ভারত নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই যেন কিছুদিন ধরে দুঃখ ভারাক্রান্ত শচীনের এই বিদায় বেলায়৷ একটা টেস্ট সিরিজের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে একজনের বিদায়কে এমন আড়ম্বর করে তোলাও শচীনের অন্য রেকর্ডগুলোর মতোই বিরল৷ মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে তাই সব সেলিব্রেটিরা উপস্থিত ‘লিটিল মাস্টার’-কে বিদায় জানাতে৷
ছবি: LawrenceGriffiths/Allsport
যত রেকর্ড
দীর্ঘ ২৪ বছরে কত রেকর্ড গড়েছেন টেন্ডুলকার তার হিসাব দেয়া মুশকিল৷ তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ২০০তম টেস্ট খেলছেন৷ টেস্টে ১৫ হাজারের বেশি এবং ৪৬৩টি ওয়ানডেতে ১৮ হাজারেরও বেশি রানের মালিক তিনি৷ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও অর্ধশতকের রেকর্ডগুলোও তাঁর দখলে৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতক, সর্বপ্রথম ওয়ানডেতে দ্বিশতক হাকানোর রেকর্ডটিও তাঁর৷ গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই কিংবদন্তি৷
ছবি: Adrian Murrell/ALLSPORT
প্রিয় সতীর্থ
শুধু মাঠের ভেতর নয়, বাইরেও তিনি অনন্য সাধারণ এক ব্যক্তিত্ব৷ সতীর্থদের কাছে বরাবরই প্রিয় বন্ধু এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি তিনি৷ অভিষেকের সময় অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেব ছিলেন সতীর্থ৷ কপিল থেকে শুরু করে ভারতীয় দলের বর্তমান নবীনতম সদস্যটি পর্যন্ত শচীনের গুণমুগ্ধ৷ তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নেই বললেই চলে৷ পুরো ক্রিকেট জীবনেই টেন্ডুলকারের আম্পায়ারের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা দেখা গেছে বারবার৷
ছবি: Hamish Blair/Getty Images
ভারতীয়দের ক্রিকেট ঈশ্বর
ভারতীয়দের কাছে তিনি ক্রিকেটের ঈশ্বর, তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী৷ দেশের বাইরেও তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয়তা৷ যেখানেই খেলতে গেছেন পেয়েছেন মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা৷ সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ভীষণ প্রিয় ছিলেন তিনি৷ বলতেন, শচীনের খেলার ধরন ঠিক তাঁর মতো৷ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারকে আখ্যায়িত করেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা৷ বলেছেন, শচীন ক্রিকেটের মোহাম্মদ আলী৷
ছবি: dapd
ভারতের সম্মাননা
টেন্ডুলকার তাঁর দেশকে যেমন সম্মান এনে দিয়েছেন, তেমনি দেশেও পেয়েছেন অজস্র সম্মান৷ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ, সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, ভারতীয় রাজ্যসভার সম্মানসূচক সদস্য পদসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি৷
ছবি: dapd
কয়েন
শচীনকে সম্মান জানাতে এ বছরের মে মাসে শচীনের ছবি সম্বলিত ১০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়৷ ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের ঐ মুদ্রাটির মূল্য ২৪ হাজার রুপি৷ ভ্যালুমার্ট গোল্ড অ্যার্ড জুয়েলস কোম্পানি এটি বাজারে আনে৷
ছবি: INDRANIL MUKHERJEE/AFP/Getty Images
উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি
ক্রিকেটের সফলতম ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের নিখাঁদ ভালোবাসা, যার কারণে তাঁর বিদায় বেলায় ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমত হাহাকার৷ অসাধারণ কাভার ড্রাইভ, নিখুঁত স্কয়ার কাট, ছক্কা মারা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যগুলো আর দেখা যাবে না কখনো৷ শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের অবসর তাই ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
ফেসবুকের পাশাপাশি টুইটারেও সক্রিয় আছেন ক্রিকেটের সফলতম ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার৷ এই মাইক্রোব্লগিং সাইটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁর ভক্তের সংখ্যা ছিল ৩,৮২২,০৫৮৷ টুইটারে এক পোস্টে ২৪ বছর ধরে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় অগুনতি ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন শচীন৷ বিদায় বেলায় শচীনকে ধন্যবাদ জানাতে একটি হ্যশট্যাগও তৈরি হয়েছে৷ #ThankYouSachin ব্যবহার করে শচীনের ভক্তরা বিভিন্ন বার্তা এবং ছবি প্রকাশ করছে৷
প্রসঙ্গত, ফেসবুক এবং টুইটারে শচীন টেন্ডুলকারের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ শচীনটেন্ডুলকার ডটইন নামক একটি ব্লগসাইট ইন্টারনেটে বেশ সক্রিয়৷ তবে এটি শচীনের এক ভক্তের তৈরি৷ সাইটটিতে ভক্তদের পক্ষ থেকে শচীনকে নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন পোস্ট করা হয়৷ এছাড়া শচীনিস্ট ডটকম নামক একটি ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে শচীন সম্পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করা হয়৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে শচীনকে নিয়ে কী ধরনের সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তা জানা যাবে এই সাইটে৷
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে৷ অভিষেক ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৫ রান৷ সর্বোচ্চ ১৬৮টি টেস্ট খেলার রেকর্ডও তার৷ ১৫ হাজারের বেশি রান করে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি৷ ১৯৯৪ সালের ক্রিকেট জীবনের প্রথম শতকের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷